Advertisement
Advertisement

Breaking News

মহালয়া

প্রথমবার দুর্গা চরিত্রে রূপান্তরকামী, ‘অনন্য মহালয়া’য় মহিষাসুরমর্দিনী মেঘ সায়ন্তনী

অংশগ্রহণে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা।

In a first transgender will act as Goddess Durga in Mahishasurmardini
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 25, 2019 3:45 pm
  • Updated:September 25, 2019 7:06 pm  

শুভময় মণ্ডল: পতিপ্রেমে তিনি পূর্ণ নারী, ষোলোকলা পটিয়সী। আবার অসুরনিধনে তাঁর শক্তি পুরুষকে হার মানায়। তাই তো দেবী দুর্গা সামগ্রিকভাবে নারীশক্তির প্রতিভূ। আমাদের সমাজেও এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা মনেপ্রাণে নারী, বাইরের রূপে খানিক পৃথক। কিন্তু অশুভবিনাশিনী শক্তির আরাধনায় কোনও লিঙ্গ বিভাজন তো হয় না। পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের সূচনায় এবার তাই মহিষাসুরমর্দিনী হিসেবে আমাদের সামনে আসছেন এক রূপান্তরকামী ব্যক্তিত্ব, রাজ্যের প্রথম রূপান্তরকামী মহিলা আইনজীবী মেঘ সায়ন্তনী ঘোষ। তাঁকে সঙ্গত দেবেন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সংবেদন’-এর উপস্থাপনায় এবার মঞ্চে আসছে ‘অনন্য মহালয়া’।

[আরও পড়ুন: চিন্তার মুক্তিতেই নবজন্ম, পুজোয় আবার সুমন-ভবতোষ যুগলবন্দি]

বাঙালির আজীবনের নস্টালজিয়া মহালয়ার সকালে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর স্তোত্রপাঠ আর গান। এই সাবেকিয়ানার আকর্ষণে এতটুকু ভাঁটা না পড়লেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর উপস্থাপনায় অনেক ধরন যুক্ত হয়েছে। ‘সংবেদন’ সেই ধারাতেই আরও এক সংযোজন করেছে। হাতিবাগানের কাছে দরজিপাড়া সর্বজনীনের এবারের মহালয়ার অনুষ্ঠানের নাম ‘অনন্য মহালয়া’। অনুষ্ঠিত হবে বৃহস্পতিবার, সন্ধে ৬টা নাগাদ। চরিত্রগত দিক থেকে দেখলে, এটা সত্যিই অনন্য। এই প্রথমবার মহিষাসুরমর্দিনী পালায় দুর্গার চরিত্রে অভিনয় করছেন রাজ্যের প্রথম রূপান্তরকামী মহিলা আইনজীবী মেঘ সায়ন্তনী ঘোষ। যিনি ইতিমধ্যেই নৃত্যশিল্পী হিসেবে সুপরিচিত। কাজের ফাঁকে ফাঁকে নিজে সারাবছর ধরে নানা নৃত্যানুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। মহালয়াও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্যতিক্রম শুধু ‘সংবেদন’ আয়োজিত ‘অনন্য মহালয়া’য় দুর্গারূপে পারফর্ম করা। এই অনুভূতি সত্যিই তাঁর সবকিছুর থেকে আলাদা।

Advertisement

কিন্তু কেন এটি ব্যতিক্রম? প্রশ্ন শুনে মেঘ সায়ন্তনী স্বভাবসুলভ উচ্ছ্বল সুরেই বলল, ”ওই যে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন বাচ্চারা, ওরা খুবই আদরের। ওদের যদিও আমি ‘বিশেষ’ বলতে নারাজ। কারণ, আমি মনে করি, আমরা সকলেই এক। কারও সঙ্গে কারও সে অর্থে তফাৎ নেই। আমরা যা পারি, ওরাই তাই পারে। রিহার্সালের সময়ে আমি সবসময়ে থাকতে পারিনি। কিন্তু ওরা নিজেরাই আমার কাছে চলে এসেছে। প্র্যাকটিস করেছে। ওদের সঙ্গে কাজ করে সত্যিই খুব ভাল লাগছে।’ সেইসঙ্গে সায়ন্তনী আরও বলছেন, ”এই অনুষ্ঠান, ‘অনন্য মহালয়া’য় আমি অনন্যা হয়ে উঠতে চাই। এমনিতে তো সবসময় দুর্গা চরিত্রের জন্য সবাই কোনও পরিচিত মুখ চান। কিন্তু আমাকে বা আমাদের নিয়ে কাজ করার কথা ভেবেছে ‘সংবেদন’। তাই তাঁদের অনেক ধন্যবাদ, এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।”

ananya-mahalaya1

‘অনন্য মহালয়া’র ভাবনা সমিত সাহার। তাঁরই উদ্যোগে তৈরি হয়েছে ‘সংবেদন’। কয়েকজন সমমনোভাবাপন্ন সঙ্গীকে নিয়ে একেবারে নিজেদের খরচে তৈরি করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। একবিংশ শতকের আলোকেও সমাজ যাদের কিছুটা ব্রাত্য করে রেখেছে, তাদেরই আলোয় আনার প্রয়াস সমিত সাহাদের। তাঁদের কাছে পরম আদরের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ছেলেমেয়েরা। তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে প্রকাশ্যে আনতেই তাদের সবরকম লড়াই। সংগঠক সমিত সাহার কথায়, ‘আমরা তো নিজেদের খরচ নিজেরা চালাই। আমাদের ছেলেমেয়েরা বাইরে পারফর্ম করার বিনিময়ে কোনও অর্থ নিই না। শুধু সকলের কাছে এটাই আবেদন যে আপনারা ওদের সুযোগ করে দিন। যাতে সকলের সঙ্গে মিশে ওরাও ওদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে।’

এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকাণ্ড আরও বহু। শ্যামপুকুরের কার্যালয়ে প্রতিদিন সন্ধেবেলা এখানেই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা এসে জড়ো হয়। নাচে, গানে, আবৃত্তি, নাটকে মুখর হয়ে ওঠে ভবন। ‘সংবেদন’-এর প্রশিক্ষণে এবারের পুজোয় এই বিশেষ সদস্যরা দর্জিপাড়া সর্বজনীনের মহিষাসুরমর্দিনীতে অভিনয়ের পাশাপাশি আরও অনেক ভূমিকা পালন করছে। হাওড়ার কল্যাণপল্লি সর্বজনীনের গোটা পুজোর দায়িত্বেই রয়েছেন এঁরা। থিম তৈরি থেকে শুরু করে প্রতিমার চক্ষুদান – আর পাঁচজনের মতোই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন ‘সংবেদন’-এর সদস্যরা। ‘অনন্য মহালয়া’র দুর্গা মেঘ সায়ন্তনী ঘোষ চক্ষুদান করবেন, তাঁকে ঘিরে থাকবেন এই শিশুরা। এছাড়া জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোয় এঁরা থিম সং গেয়েছেন।

[আরও পড়ুন: প্রথমবার পুজোর থিম সং গাইলেন কুমার শানু, ভিডিওয় শাঁখ বাজিয়ে নাচ খরাজের]

কাজের তালিকা আরও আছে। আগামী রবিবার লাহা কলোনির মাঠে ‘সংবেদন’-এর নিবেদন – ‘ফুটপাথের দুর্গা, আমিও দুর্গা’ নামে একটি ব়্যাম্প শো। যেখানে হাঁটবেন ফুটপাথবাসী ৪০ জন তরুণী। ব়্যাম্পে হাঁটার অধিকার যে শুধুই উচ্চবিত্তের, তা তো নয়। মনের আনন্দে এরাও মডেলিংয়ে দক্ষ, সেটাই বোঝাতে চান সমিত সাহা। ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরের কাছে শারদীয়া আনন্দ সমানভাবে ভাগ করে দিতে ‘সংবেদন’-এর এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। একইসঙ্গে শিক্ষণীয়ও বটে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement