Advertisement
Advertisement
বৈষ্ণব মতে দুর্গাপুজো

অম্লান ঐতিহ্য, নবদ্বীপে বৈষ্ণব মতে হয় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পুজো

শত্রুর প্রতীক হিসাবে আখ, চালকুমড়ো ও কলা বলি দেওয়া হয়।

Durga Puja performed by freedom fighters in Nabadwip still retains glory
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:October 7, 2019 11:07 am
  • Updated:October 7, 2019 11:07 am

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: যিনি শ্যামা, তিনিই দুর্গা। শক্তিরূপিণী মায়ের একই অঙ্গে অনেক রূপ। সেই শ্যামা মায়ের অন্যতম প্রবক্তা হলেন তন্ত্রসাধক পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। সেই আগমবাগীশের তন্ত্রসাধনার সাধনপীঠ কিন্তু বর্তমানের চৈতন্যভূমি বলে পরিচিত নদিয়ার নবদ্বীপ। এই নবদ্বীপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অনেক ইতিহাস।

নবদ্বীপ বিখ্যাত তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সাধনপীঠ কিন্তু চৈতন্যভূমি। আগমবাগীশের সাধনপীঠের খুব কাছেই বর্তমানের ছোটবাজার বলে পরিচিত আগমেশ্বরী বাজার। সেখানে বেশ কয়েকজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিখ্যাত চিকিৎসকের উদ্যোগে একটা সময় শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজো। ভারতের স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছরে ২০ অক্টোবর ‘দুর্গাষষ্ঠীর আমন্ত্রণাধিবাসৌ’ অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছিল আগমেশ্বরীপাড়া বারোয়ারী দুর্গাপুজো কমিটির পরিচালনায় প্রথম দুর্গোৎসবের। তবে এখানে দেবীদুর্গা পূজিতা হয়ে আসছেন বৈষ্ণবীয় রীতিনীতি মেনে এবং তা প্রথম থেকেই। জানা যায়, বিশিষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রামী হরিচরণ প্রামাণিক, বলাইচাঁদ গোস্বামী, ড. যোগেশ ভট্টাচার্য, তারাদাস চক্রবর্তী, প্রমথনাথ বন্দোপাধ্যায়, মণীন্দ্র সান্যাল-সহ এলাকার আরও বহু মানুষ মিলিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আগমেশ্বরীপাড়া বাজার প্রাঙ্গণে মাতৃ বন্দনার।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: প্রবাসেই বাঙালির সেরা উৎসব উদযাপন, সূবর্ণ জয়ন্তীর দোরগোড়ায় শিকাগোর পুজো ]

আগমেশ্বরীপাড়া অঞ্চল জ্ঞান ও শক্তি উভয়দিক থেকেই প্রাচীনকাল থেকে ঐতিহাসিক বিচারে গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমে সাধক পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের সাধনপীঠ থেকে ধ্বনিত হয়ে আসছে তন্ত্রের মন্ত্র। বেদ আর তন্ত্রের এক মহামিলন তীর্থক্ষেত্র হল নবদ্বীপের আগমেশ্বরীপাড়া। ওই পুজো কমিটির সদস্যরা  জানিয়েছেন, “এই পুজো শুরু প্রথমদিকে পুজোর জন্য খরচের অর্থ সংগ্রহ হত বাজারের বিক্রেতাদের ঝাঁকা প্রতি ১ পয়সা চাঁদা থেকে। এছাড়াও বেশকিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি অর্থ সাহায্য করতেন। আবার অনেকেই জমির ধান দিয়েও সাহায্য করেছেন। এই পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, বৈষ্ণবীয় রীতিতে দুর্গাপুজো। মার্কণ্ডেয় পুরাণ অনুসারে মন্ত্র উচ্চারিত হয়। যদিও বলি প্রথা এখানেও চালু রয়েছে। তবে কোন পশুর রক্ত ঝরিয়ে নয়। শত্রুর প্রতীক হিসাবে মহাষ্টমীর সন্ধিপুজোয় এবং নবমীতে বলি দেওয়া হয় আখ, চালকুমড়ো ও কলা। খিচুড়ি, পুষ্পান্ন-সহ প্রায় ১৫টি পদ দেবীদুর্গার ভোগে নিবেদন করা হয়। নবমী ও দশমীতে রয়েছে বেশ কিছু বৈচিত্র। নবমীতে অন্নর পাশাপাশি খিচুরী, ফুলকপির রসা যেমন থাকে, তেমনই থাকে পুঁইশাকের ঘণ্ট, বকফুল ভাজা আর ইলিশ মাছ। দশমীর ভোগের  বৈচিত্রও কম নয়। সেদিন ভোগে থাকে পাকাল ভোগ অর্থাৎ পান্তা অন্ন, কচুর শাক, খয়রা মাছ ভাজা। কৎবেলের আচার মাকে নিবেদন করা হয়।” ওই পুজো কমিটির বর্তমান সদস্য হিমাংশু সাহা সহ অন্যরা জানিয়েছেন, “নবমীর দিন পাড়ার বালক ও যুবকরা একটা সময় পুজোপ্রাঙ্গণে কাদা খেলায় মেতে উঠত। ছিল এমন আরও অনেক রীতিনীতি। সেই সময় দশমীতে দিনের আলোতে দেবী প্রতিমাকে বেয়ারাদের  কাঁধে করে পল্লীর বিভিন্ন রাস্তা পরিক্রমা শেষে  বিসর্জন দেওয়া হত।

এখন দশমীর সন্ধ্যায় আলোকসজ্জা, বাদ্য-সহ শোভাযাত্রা করে গঙ্গায় প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়ে থাকে। এখনও রয়েছে সেই পুজোর ঐতিহ্য। কিছু প্রথার পরিবর্তন করতে হলেও আমাদের এই পুজোর নিষ্ঠা-ভক্তির কোন বদল ঘটেনি।” এবারও এই পুজো দেখতে ভিড় করেছেন প্রচুর মানুষ। একচালার দেবীপ্রতিমা এখনও ওই এলাকার মানুষের কাছে ভীষণ জাগ্রতা। এবারও বহু মানুষ মহাষ্টমীর অঞ্জলি দিয়েছেন। নবমী পুজোতেও ভিড় করেছেন প্রচুর মানুষ। দশমিকে তারা এবারেও  আলোকসজ্জা ও বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোভাযাত্রা করে দেবীপ্রতিমাকে নবদ্বীপের পুণ্যগঙ্গায় বিসর্জন দেবেন। এবারও ধুমধাম করে হচ্ছে এখানে দেবীদুর্গার আরাধনা।

[ আরও পড়ুন: অষ্টমীর মুখার্জি বাড়িতে চাঁদের হাট, রানি-কাজলের আমন্ত্রণে হাজির সস্ত্রীক অমিতাভ ]

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement