শংকরকুমার রায়, রায়গঞ্জ: স্বামী মারা গিয়েছেন। তাই যেন জীবনের সব রঙই হারিয়ে গিয়েছে তাঁদের। সমাজে থাকলেও, সমস্ত অনুষ্ঠানে আর শামিল হওয়া আর হয় না তাঁদের। কিন্তু দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠার অধিকার তো সকলেরই আছে। তাই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা পুজো কমিটির সদস্য এবং রায়গঞ্জ পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম সরকার। দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় শামিল হলেন বিধবা এবং বৃহন্নলারাও।
সাধারণত বাড়ির মায়েরাই দশমীতে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। বিধবারাও তাতে অংশ নেন না। কিন্তু রায়গঞ্জের উকিলপাড়ার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ধরা পড়ল ব্যতিক্রমী ছবি। সেখানে অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে সিঁদুর খেলায় মাতলেন বিধবা এবং বৃহন্নলারা। এই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বৃদ্ধা কাবেরী সরকার জলভরা চোখে বলেন, “ভাবতেই পারিনি এমন সুযোগ পাব। স্বামী ১৩বছর আগে মারা গিয়েছেন।” এমন ব্যতিক্রমী ভাবনা যে তাঁদের নিয়েও কেউ ভাবতে পারেন, তা যেন স্বপ্নের মতোই লাগছে বৃহন্নলাদের কাছেও। তাঁরা বলেন, “আমরা একঘেয়ে জীবন থেকে আনন্দ পেয়েছি। আমরা শামিল হতে পেরে অত্যন্ত খুশি। লোকে আমাদের সঙ্গে কথা বলতেও লজ্জা পায়। তা সত্ত্বেও যে আমাদের সঙ্গে সিঁদুর খেলায় মাতবেন, তা ভাবতেই পারিনি।”
অভিনব ভাবনাকে বাস্তবায়িত করতে পেরে অত্যন্ত খুশি ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিরুদ্ধ সাহা। তিনি বলেন, “সাধারণত স্বামী মারা যাওয়ার পরই মহিলারা সব কিছুতেই ব্রাত্য হয়ে যান। আর তাঁদের কোনও আনন্দানুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায় না। কিন্তু পুজো তো সকলের। তাই তাঁদের আনন্দ দিতেই এই উদ্যোগ।”
চিকিৎসক জয়ন্ত ভট্টাচার্য এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “স্বামী মারা গেলেই সব যেন হারিয়ে যায় অনেকের। যাঁরা বিধবা এবং বৃহন্নলাদের সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁদের কুর্নিশ জানাই।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.