সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: বাঙালির ছুটির দিনের সকাল মানেই পরিবারের সকলে মিলে চা খাওয়া। আর চায়ের পেয়ালায় তুফান মানেই নানা গল্পগুজব। ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের খাটুয়া বাড়িও তার ব্যতিক্রম নয়। তেমনই বছর সাতেক আগে ছুটির সকালে গল্পগুজবে মেতেছিলেন ওই পরিবারের সদস্যরা। পুজোর ছুটিতে কে কোথায় বেড়াতে যাবেন, তা নিয়ে কথা হচ্ছিল। তখন ওই গ্রামে ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে কোনও পুজো হত না। গল্পগুজবের মাঝে বাড়িতে পুজো শুরুর প্রস্তাব দেন কেউ কেউ। সেই আলোচনার সময় হঠাৎই হাজির হন প্রতিমা শিল্পী, ডেকরেটর্সের লোকজন। আর তারপরই খাটুয়া বাড়ির সদস্যরা ভাবতে থাকেন তবে কি আরাধনা হোক, স্বয়ং দুর্গাও তাই চান? সেই থেকে ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের ২ নম্বর ব্লকের কালিঞ্জা গ্রামের খাটুয়া বাড়িতে পুজোর সূচনা হয়। তখন দুর্গাপুজোর বাকি মাত্র ২০-২২ দিন। ওই অল্প সময়েই খাটুয়া বাড়ির পুজোর পুরোপুরি আয়োজন করে ফেলেন সদস্যরা।
গত সাত বছর ধরে খাটুয়া বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। পুজোর বয়স মাত্র আট বছর। আইআইটির প্রফেসার ভানুভূষণ খাটুয়া এবং তাঁর খুড়তুতো ভাই চন্দন খাটুয়ার উদ্যোগে মূলত পুজো চলে আসছে। এই পরিবারের পুজোয় উপাচার হিসাবে ব্যবহার হয় সমুদ্রের জল, নদীর জল, ঝরনার জল, বৃষ্টির জল, শিশির, রাজবাড়ির মাটি, দেবালয়ের মাটি, চৌ রাস্তার মাটি, গোচারণ মৃত্তিকা-সহ বিভিন্ন সামগ্রী। পরিজনেরাই সেগুলি সংগ্রহ করেন। পঞ্চমীর দিন বেলগাছের তলায় বেদি করে পুজো হয়। এভাবেই হয় দেবীর বোধন। প্রতিদিনই দেবীকে দেওয়া হয় অন্নভোগ। অঞ্জলি দিতে আসেন বহু মানুষ। তাঁদের প্রসাদ হিসাবে দেওয়া হয় অন্নভোগ। অষ্টমীর দিন পুরো গ্রামের মানুষ এখানে খাওয়াদাওয়া করেন। খিচুড়ি, পায়েস খাওয়ানো হয় তাঁদের।
প্রথা মেনে দশমীতে মূলত বেশিরভাগ জায়গাতেই প্রতিমা বিসর্জন হয়। কিন্তু খাটুয়া বাড়ি সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। কারণ, এখানে দ্বাদশীতে হয় প্রতিমা বিসর্জন। নিরঞ্জনের পর মিষ্টিমুখ করেন গ্রামের সকলেই। রাতে মাছ, মাংস সহযোগে খাওয়াদাওয়া করেন গ্রামবাসীরা। ওই পরিবারের সদস্য ভানুভূষণ খাটুয়া বলেন, “আমাদের বাড়ির পুজো হঠাৎ করেই শুরু হয়েছিল। পুজোর তখন বাকি ছিল মাত্র ২০-২২ দিন। বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করলে কেমন হয়? গ্রামের মানুষজনও পুজো দেখতে পারবেন। ওই আলোচনার সময় হঠাৎ উপস্থিত হয়েছিলেন প্রতিমা শিল্পী, ডেকরেটর্সের লোকজন। ব্যস! সেই থেকেই শুরু হয়েছে আমাদের বাড়ির পুজো।” পারিবারিক হলেও, আদতে এই পুজো গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় হয়ে উঠেছে প্রকৃত অর্থে সর্বজনীন।
ছবি: প্রতীম মৈত্র
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.