Advertisement
Advertisement
চেতলা অগ্রণী

কলকাতা আছে কলকাতাতেই, বাঙালির প্রাণের শহরের কোলাজ এই পুজোয়

কীভাবে সেজে উঠেছে মণ্ডপ, দেখুন ভিডিও।

Durga Puja 2019: Chetla Agrani's theme is the old Kolkata
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 25, 2019 5:41 pm
  • Updated:September 26, 2019 2:12 pm  

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন চেতলা অগ্রণীর পুজো প্রস্তুতি৷

সুচেতা সেনগুপ্ত: ‘কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে…’। সেই কোন কালে কবিকল্পনায় ভাসিয়া উঠিয়াছিল চলন্ত কলিকাতার ছবি। আর বর্তমান সময়ে তিলোত্তমার দিকে চাহিয়া দেখিলে বোঝা যায়, চলন নয়, কলিকাতা যেন দৌড়াইছে। একই বেগে দৌড়াইছে তাহার প্রতিটি অংশ। সরিয়া সরিয়া গিয়া হারাইয়াছে তাহার যত পুরাতন সম্পদ। এখন সে কলিকাতাও নাই। রসিক কলিকাতাবাসীর সংখ্যা ক্রমহ্রাসমান। কিন্তু স্মৃতি যে সততই সুখের। তাই সেই স্মৃতির পাতা থেকে প্রাচীন কলিকাতার ছবি তুলিয়া আনিতেছে বিখ্যাত পুজো চেতলা অগ্রণী। সৃজনে থিমশিল্পী অনির্বাণ দাস।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘প্রতিচ্ছবি’তেই সর্বত্র বিরাজমান উমা, সন্তোষপুরের এই মণ্ডপে থাকছে বিশেষ চমক]

দূর থেকে চেতলা অগ্রণীর মণ্ডপের দিকে তাকাইলে যেন মনে হয়, ৩০০ বছরের লিখিত ইতিহাসের জীবন্ত প্রতিলিপি। নানা আকার, আকৃতির ডাকবাক্স, বার্ধক্যের চিহ্ন বহনকারী এক বিশাল ব্যক্তি, ইগলুর ন্যায় খাটো উচ্চতার প্রবেশদ্বার। ভিতরে প্রবেশ করিলে বোধ হয়, ফিরিয়া গিয়াছি সেই পুরাতন কলিকাতায়। কী নাই এখানে? দেওয়াল-ভরা কবিতা, স্লোগান, বড় বড় ডাকবাক্সে লেখা হরেক ঠিকানা, সেই সময়কার টেলিফোন, ঠেলাগাড়ি, শুনশান অলিগলি – কত কী! কল্পনাশক্তি আরও তীব্র হইলে, কে জানে, উপলব্ধি করিতেই পারেন পুরানো কলিকাতার ঘ্রাণও…

chetla-agrani-cover2
তা দেবী দুর্গার আবাহনে এইরূপে বাঙালির নস্টালজিয়া উসকাইয়া দেওয়ার নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য শিল্পী অনির্বাণ দাসের? তিনি শুনাইলেন একেবারে অন্য একটি কথা। চেতলা অগ্রণী আসলে কলিকাতার বর্তমান মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের পূজা। মহানাগরিকের পূজায় একখণ্ড প্রাচীন মহানগরকে তুলে আনার কথা ভাবিয়াছেন তিনি। তা সাধু ভাবনা। পুরাতন কলিকাতা নির্মাণের কাজ কীভাবে চলিতেছে? তাও জানাইলেন শিল্পী। প্রতিটি অংশ ধরে ধরে তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করিলেন।

chetla-agrani-cover4

এই যে মণ্ডপের বাহিরে বেহালা হাতে লইয়া দাঁড়াইয়া রয়েছেন এক বিশাল ব্যক্তি, তিনি আসলে গল্পের হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। যার সুরের মূর্চ্ছনায় বেরিয়ে আসিতেছে মুষিককুল। অর্থাৎ আজিকার যুগের ‘মাউস’। সময় যতই দ্রুতগামী হোক, যাহা চিরন্তন, তাহা চিরন্তনই – এই প্রতিকৃতির মাধ্যমে এই ধ্রুব সত্যকেই তুলিয়া ধরা হইয়াছে বলিয়া জানাইলেন শিল্পী অনির্বাণ দাস।

[আরও পড়ুন: এবার পুজোয় সমাজের শ্রমজীবী মানুষদের কুর্নিশ জানাবে সমাজসেবী সংঘ]

এবিষয়ে তিনি একটি ক্ষুদ্র ভূমিকাও রচনা করিয়াছেন। তিনি লিখিয়াছেন- ”কলিকাতা চলিয়াছে নড়িতে নড়িতে…সেই তিনশত বৎসরের বেশি সময় ধরিয়া হেলিয়া দুলিয়া কলিকাতা নিজস্ব ছন্দে চলিতেছে। তাহার সাথেই চলিয়াছি আমরা, আমাদের সংস্কৃতি। এই নগরীর চলার পথে পা মিলাইয়াছেন রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, নেতাজী, বিবেকানন্দ আরও কতশত মনীষী তাহার লেখাজোখা নাই। এই শহর ১৯০৫ শনে রাখীবন্ধন করিয়াছে, দেখিয়াছে বিশ্বযুদ্ধের করাল ছায়া। মন্বন্তর, দাঙ্গা, দেশভাগে কাঁদিয়াছে আমাদের সাথে। আবার নন্দন চত্বরে, কফি হাউসে বসিয়া সত্যজিত-ঋত্বিক লইয়া গলা ফাটাইয়াছে। আমাদের বাপ-ঠাকুরদাদিগের স্মৃতি জড়াইয়া আছে ইহার চলিবার পথে। সেই নস্ট্যালজিয়ার কথাই এই বৎসর আপনাদিগকে শুনাইবে চেতলা অগ্রণীর পূজা।”

chetla-agrani-cover1
মণ্ডপের অভ্যন্তরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হইল, মাটিতে দাঁড়াইয়া আকাশে দেখা ঝুলন্ত শহর কলিকাতা। শুনিয়া অবাক হইলেন? আসিয়া পড়িলে তবে আরও বিস্মিত হইবেন। ধরুন, আপনি আকাশপথে উড়িতেছেন আর নিচে দেখা যাইতেছে আপনার প্রিয় শহর কলিকাতা। সব খোপ খোপ বাড়ি…এবার এই দৃশ্যকে ঠিক উলটাইয়া দিন। উপরে উঠিয়া যাইবে কলিকাতা আর নিচে আপনি। এমনই এক দৃশ্যকল্প নির্মাণ করিয়াছেন শিল্পী অনির্বাণ দাস। আলোকসজ্জা দিয়া পুরাতন কলিকাতার পুনর্নির্মাণ করিতে তাঁকে সাহায্য করিয়াছেন শ্রী প্রেমেন্দুবিকাশ চাকী মহাশয় এবং আবহ রচনা করিয়াছেন শ্রীমান শতদল চট্টোপাধ্যায়। আজিকার মতো চেতলা অগ্রণীর পূজার গল্প অনেকটা শুনাইয়া দিলাম। এবার আপনি আসিয়া স্বশরীরে প্রবেশ করুন নড়িতে নড়িতে চলিতে থাকা কলিকাতায়।

দেখুন ভিডিও: 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement