পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন বেহালা নূতন দলের পুজো প্রস্তুতি৷
সুচেতা সেনগুপ্ত: দেবী দুর্গার আরাধনায় চণ্ডীপাঠ কি শুধুই রীতিমাত্র? নাকি ধর্মীয় মাহাত্ম্যের পাশাপাশি এটি কাহিনি হিসেবেও অত্যন্ত মনোগ্রাহী? এই প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেওয়া খুব কঠিন। কারণ, চণ্ডীমন্ত্র আমরা কতটুকুই বা মনোযোগ সহকারে শুনে থাকি? দশভুজা দুর্গারই বা জন্ম কীভাবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দিতে চাইছে বেহালা নূতন দল। চণ্ডী পুরাণ অনুযায়ী প্রতিমা ও আবহ নির্মাণ এবং ইতিহাসের বিনির্মাণ করতে পাল, সেন যুগের স্থাপত্যকীর্তির অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি, জোড়া আকর্ষণেই এবার সেজে উঠছে এই পুজো। থিমের পোশাকি নাম – মহালক্ষ্মীর মায়ায় ভরা/ রেখ দেউলের পরম্পরা।
কলকাতার পুজো প্রস্তুতি দেখতে দেখতে আমরা যখন বেহালা নূতন দলে পৌঁছলাম, সন্ধের শহর তখন ভাসছে অঝোর বৃষ্টিতে। সেই বৃষ্টি মাথায় করেই ইঁট, বাঁশ, কাপড় দিয়ে ঘেরা প্যান্ডেল শেষ করার তোড়জোড় করছেন সকলের। এমনকী থিম শিল্পী রণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও রয়েছেন তাঁদের সঙ্গে। বাইরে থেকে একঝলক তাকালে মনে হচ্ছে, প্রাচীন কোনও মন্দিরের আদলে তৈরি হচ্ছে বেহালা নূতন দলের মণ্ডপ। কিন্তু ভিতরে পা দিতেই বোঝা গেল, আসলে একটুকরো ইতিহাস নিয়ে কাজকর্ম চলছে, যা নিয়ে চর্চা বিশেষ হয় না। বিস্তারিত জানার জন্য কথা বললাম শিল্পী রণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। শোনা গেল চণ্ডীপুরাণের কিছু অজানা, আকর্ষণীয় কাহিনি জানা গেল। ভেঙে গেল সমস্ত প্রচলিত বিশ্বাস, ধারণা। মহিষাসুর বধকারী দুর্গা আসলে অষ্টাদশভুজা মহালক্ষ্মী। তাই আমরা প্রচলিতভাবে যে দেবীর আরাধনা করি, তাঁর ১০টি নয়, শাস্ত্রমতে ১৮টি হাত।
চণ্ডীমন্ত্রে যেভাবে দেবীর নানা রূপ বর্ণিত রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করলেন শিল্পী রণ বন্দ্যোপাধ্যায়। চতুর্ভুজা মহালক্ষ্মী থেকে একাধিক দুষ্টের দমনের পর সর্বশেষ শক্তি প্রয়োগ করে মহিষাসুরমর্দিনী দুর্গার এই রূপান্তরই এবার বেহালা নূতন দলের থিমে উঠে আসছে। এপ্রসঙ্গে তিনি নিজের অর্জিত বিদ্যা, চর্চা থিমের প্রতিটি অংশে প্রয়োগ করেছেন। শিল্পী শোনালেন মন্দির নির্মাণের ইতিহাস ও রূপান্তরের কাহিনি। সাধারণত হিন্দু মন্দিরের যে আদল, তাও পরিবর্তনশীল।একেবারে অগ্রভাগ জগনমোহন, মধ্যভাগ নাটমন্দির, শেষভাগ গর্ভগৃহ – এই তিন অংশের সমন্বয়ে তৈরি মন্দির আমরা দেখে থাকি। তবে পাল, সেন যুগে মন্দিরের স্থাপত্য এরকম ছিল না। টানা লম্বা একটিই অংশ ছিল। তাই বেহালা নূতন দলের মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে দুটি ভাগে। যা বিবর্তনের প্রতিচ্ছবি।
অভিনবত্ব রয়েছে দেবী দুর্গা-সহ অন্যদের মূর্তিতে। দুর্গা এখানে কষ্টিপাথরের। গণেশ এখানে হেরম্ব গণেশ, অর্থাৎ পঞ্চমুখী। যার একটি মাথা আকাশমুখী। সেইসঙ্গে অভিনব তাঁর বাহনও। ইঁদুর তো আছেই। পুরাণমতে, তিনি মায়ের থেকে সিংহটিও চেয়ে নিয়েছিলেন। তাই এখানে গণেশের দুটি বাহনই দৃশ্যমান হবে। রণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বকীয় ভাবনা অনুযায়ী রূপ পাচ্ছে মণ্ডপ। প্রচলিত ধারণা থেকে বেরিয়ে প্রকৃত ইতিহাস জানতে হলে বেহালা নূতন দলের মণ্ডপে আসতেই হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.