পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন ৬৪ পল্লি সর্বজনীনের পুজো প্রস্তুতি৷
সুচেতা সেনগুপ্ত : ‘কত রকম সিঁড়ি আছে ওঠার এবং নামার/ চলতে চলতে থামার।’ পূর্ণেন্দু পত্রীর এই কবিতার সিঁড়ি ধরে ভিন্নতর কাব্য অনুভূতিতে পৌঁছনো যায় হয়ত, যা জীবনের বিভিন্ন সময়ে বাস্তব পরিস্থিতিতেও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর এই সিঁড়ি বেয়েই এবছর দুর্গা আরাধনায় ব্রতী হচ্ছে ৬৪ পল্লি সর্বজনীন। তাদের এবছরের থিম – সোপান, উত্তরণের পথ। শিল্পী বিশ্বনাথ দে’র ভাবনায় এই থিম প্রকাশ পাবে ৬৪ পল্লির মণ্ডপে। সেইমতো কাজ চলছে পুরোদমে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালের তরফে সেই প্রস্তুতিপর্ব দেখে এলাম আমরা।
দক্ষিণ কলকাতার ৬৪ পল্লির দুর্গাপুজো শারদোৎসবের নজরকাড়া পুজোর মধ্যে একটি। প্রতিবারই তাদের থিমভাবনা দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়েও ভিন্নতর মাত্রায় উত্তীর্ণ হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটল না। প্রতিদিনের চলার পথের অঙ্গ – সিঁড়ি উঠে আসছে এই পুজোর এবারের থিমে। মণ্ডপে প্রবেশের পর দুর্গার অধিষ্ঠানস্থল গর্ভগৃহ থেকে একেবারে ছাদ পর্যন্ত ধাপে ধাপে উঠে গিয়েছে সিঁড়ি। কিছুটা তৈরি হয়েছে, বাকিটা এখনও নির্মাণের পথে। সবটাই উর্ধ্বমুখী। তবে রোজ তো আমরা উপর থেকে নিচে নামার জন্যেও সিঁড়ি ব্যবহার করি। এখানে তো অবতরণের সোপান নেই…মণ্ডপের অর্ধসমাপ্ত সাজ দেখতে দেখতে যখনই এই প্রশ্ন উদয় হচ্ছে মনে, তখনই কীভাবে যেন সেই প্রশ্নের নাগাল পেয়ে যান শিল্পী। উত্তর দিয়ে দেন শিল্পী বিশ্বনাথ দে।
৬৪ পল্লির মণ্ডপে সিঁড়ির মাহাত্ম্য ভিন্ন। শিল্পী বিশ্বনাথ দে’র কথায়, ‘এই সিঁড়ি দুর্গা অর্থাৎ মাতৃশক্তির কাছে পৌঁছানোর পথ, অনন্তের পথ। শুভশক্তির কাছে পৌঁছানোর রাস্তা। আমরা জানি না শেষ পর্যন্ত সিঁড়ি বেয়ে দেবীর চরণে পৌঁছাতে পারব কি না, তবে এটা একটা নিরন্তর প্রক্রিয়া। আমরা যেমন রোজ সিঁড়িপথে ওঠানামা করে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছই, এই সোপান তার চেয়ে আলাদা। এখানে শুধুই উত্তরণ আছে।’ শিল্পী মনে করছেন, রোজ এই ওঠানামার মধ্যে যেমন প্রত্যেকের কোনও না কোনও লক্ষ্য পূরণ হয়, তেমন ৬৪ পল্লির মণ্ডপ সিঁড়ি দিয়ে সাজানোর উদ্দেশ্য, মা দুর্গার কাছে দর্শনার্থীদের পৌঁছে দেওয়া। অন্ততপক্ষে সেই পথ দেখানো। সিঁড়ি তৈরিতে শিল্পী ব্যবহার করছেন লোহা, পিতল, কাঠের মতো সাদামাটা সামগ্রী।
এ তো গেল থিমের মাহাত্ম্য। এবার যাঁর কাছে পৌঁছতে এত পথ নির্মাণ, সেই দেবী দুর্গার মূর্তি কেমন হবে, সেদিকে আগ্রহ তো থাকবেই। সে বিষয়েও খোঁজখবর নেওয়া হল। জানা গেল একেবারে চমকপ্রদ তথ্য। এবছর ৬৪ পল্লির সর্বজনীনের প্রতিমা নির্মিত হচ্ছে মেহগনি কাঠে। পল্লব নামের এক প্রতিমাশিল্পীর হাতে রূপ পাচ্ছেন মেহগনির দশভুজা। যতটুকু তৈরি হয়েছে, ততটুকু চোখে পড়লেই নিবিড় মুগ্ধতায় ভরে না উঠে উপায় নেই। এখানে মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী রূপ নয়, কাঠ কুঁদে কুঁদে রূপ দেওয়া হয়েছে দুর্গার। এবারে ৬৪ পল্লিতে এও এক বড় আকর্ষণ বইকি। প্রস্তুতিপর্বের খবরাখবর আপাতত এপর্যন্ত দেওয়া হল। বাকিটা দেখতে হলে, পুজো শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই পা দিন এই পুজোমণ্ডপের সোপানে। ধীরে ধীরে পৌঁছে যান মাতৃশক্তির কাছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.