ছবিতে সন্তোষমিত্র স্কোয়ারের প্রতিমা।ছবি: রাজীব দে।
সন্দীপ চক্রবর্তী: কতটা রুপো থাকলে তবে জেল্লা আনা যায়? ভরি নয়, কেজিও নয়, টন। তাই হিসাবটা বড্ড দুর্বোধ্য। কিন্তু কিলোগ্রামের হিসাবে বললে বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। ২০ টন মানে ২০ কে ৯০৭.১৮৭ দিয়ে গুণ করতে হবে। তাহলে যা দাঁড়ায়, ১৮ হাজার ১৪৩.৬৯৫ কিলোগ্রাম। তথ্যের ভার আরও বাড়ালে বলা যায়, রুপোর বাটের দর এখন প্রতি কেজিতে ৩৮ হাজার ৩৫০ টাকা। তাহলে সবমিলিয়ে দাঁড়াল, লেবুতলা পার্কে থাকছে আনুমানিক ৬৯ কোটি ৫৮ লক্ষ ১০ হাজার ৭০৩ টাকার রুপো।
পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসছে রুপোলি রথের চাকা। রথের উচ্চতা ৬০ ফুট, অর্থাৎ ছ’তলা বাড়ির সমান। আর, দৈর্ঘ্য, প্রস্থে ১৬০০ বর্গ ফুট। বিশাল আয়োজন। ১০ টন বেড়ে হয়েছে ২০ টন। কলকাতায় থিম ও পুরস্কারের কাড়াকাড়ির বিচারে অন্য গ্রহ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। শিয়ালদহের কাছে লেবুতলা পার্ক বললেই বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। পুরনো কলকাতার যে চত্বর এখনও ফ্ল্যাটবাড়িতে ছয়লাপ হয়ে যায়নি, সেখানে ছ’তলা রথের চূড়োয় চোখ চালাতে আকাশপানে হাঁ করে থাকতে হয়। কলকাতার সোনা-রুপোর ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ তো এই এলাকার হাতেই।
পুজোয় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার মানেই বরাবরের চমক। তেমনই এই পুজোর সভাপতি প্রদীপ ঘোষ মানেই একটু বেপরোয়া মনোভাব। নতুনভাবে মণ্ডপকে সাজাতে চান তিনি। শহরের অন্য বড় পুজোর মাঝেও ব্যতিক্রম হয়ে থাকে লেবুতলা পার্কের পুজো। ১৯৯৬ সালে জাহাজ তৈরির পর আকর্ষণ আরও ঘিরে ধরেছিল সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজোকে। ১৯৯৭-তে দেখানো হয়েছিল, বিলাসপুরের ট্রেন দুর্ঘটনা। উত্তরের পুজোর সব ভিড় কেড়ে নিয়েছিল এই পুজো। মফস্বল, উত্তর শহরতলির মানুষ কলকাতায় আসেন তার বড় কারণ সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের পুজো। বহু পুজো যখন পুরস্কারের লড়াইয়ে লাইন দিয়েছে , এই পুজোর কর্তারা সেই সব থেকে দূরে সরেছেন। প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “মানুষের ভিড়ই আমাদের পুরস্কার। কোনও পুরস্কার-প্রতিযোগিতায় আমরা নাম নথিভুক্ত করিনি। করার ইচ্ছাও নেই।” তবে পুজোর মিথ তো ভাঙেই। নবপ্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ঢুকে পড়েছেন। তাই এবার হয়তো একাদশীতে বিসর্জনের সাবেকি প্রথাও ভাঙবে। গতবার নবমীতে প্রতিমা-দর্শন বন্ধ করায় ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষোভ সামলেও নতুনের বাঁচার স্বপ্ন।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, এই পুজো প্রাঙ্গণে ঢুকলে রুপোর জেল্লায় চোখ ঝলসে যাবেই। দিনের বেলায় মণ্ডপ দর্শন সত্যিই দুরূহ। রুপো দিয়ে ও আলঙ্কারিক সাজসজ্জায় সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডস। আর এই মণ্ডপকে পাহারা দিতে বেগ পেতে হচ্ছে পুলিশকেও। মণ্ডপ একটু একটু এগিয়েছে, আর পুলিশেরও যেন দায়িত্ব বেড়েছে। তবে বেসরকারি কোনও সংস্থাকে নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়নি পুজো কমিটি। হাজার খানেক স্বেচ্ছাসেবকই আসলে মূল বরাভয়। প্রদীপবাবু অবশ্য বলেন, “মা চাইলে সব হয়। মায়ের থেকে বড় রক্ষাকর্তা হয় না কি!” স্বর্ণশিল্প বাঁচাও সমিতির বহু সময়ের প্রধান কর্তা বুঝিয়ে দিয়েছেন, ফোরসেপ, খোদাই ও ছিলেকাটায় ঠিকরে পড়ে রুপোর ছটা। নিজের দশ বছর থেকেই যুক্ত তিনি। এবার ৮৩তম বর্ষ পুজোর। চিকিৎসকের নিষেধ থাকায় বাইরে বের হচ্ছেন না। তবু তিনিই নিয়ন্ত্রক। ছেলে সজল (দেবু) হাল ধরেছেন। বদলে যাচ্ছে কিছু ভাবনা। তবু লেবুতলা চমক দিয়েই যাবে। সমস্বরে বললেন, যুব-কর্তারাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.