পঞ্চপল্লব নিয়ে বেলা-দুর্গা, ছবি :সুকান্ত চক্রবর্তী।
শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: মায়ের ঘটে চাই পঞ্চপল্লব৷ পাঁচ রকমের পাঁচটি গাছের কুঁড়ি৷ আম, বেল, অশ্বত্থ, বট ও পাকুড়৷ শাস্ত্রমতে মায়ের ঘটে পঞ্চপল্লব চাই-ই চাই৷ পুরুতঠাকুর এই পঞ্চপল্লব ছাড়া ঘট ডোবাতেই পারবেন না৷ গ্রাম ঘরে না হয় পঞ্চপল্লবের ছড়াছড়ি৷ কিন্তু শহরের দুর্গা পুজোয় পঞ্চপল্লব খুঁজতে হিমশিম খান উদ্যোক্তারা৷ তবে তাঁরাও খুব সহজেই পেয়ে যান পঞ্চপল্লব৷ বেলা, দুর্গার হাত ধরেই শহুরে পুজো উদ্যোক্তারাও পঞ্চপল্লব যোগাড় করে নেন৷ গ্রামের পথে এক দুর্গা আরও এক দুর্গার জন্য খুঁজে বেড়ান পঞ্চপল্লব। কী অদ্ভূত না! দেবী দুর্গার জন্য পঞ্চপল্লব খুঁজতে ব্যস্ত গ্রামের দুর্গা। আর তারই হাত ধরে পঞ্চপল্লব পৌঁছে যায় শহুরে পুজো মণ্ডপগুলিতে। তাই পুজোর মাসখানেক আগে থেকেই পঞ্চপল্লব খুঁজতে বেড়িয়ে পড়েন দাসপুরের ধরমা গ্রামের বেলা-দুর্গারা৷
বেলা দোলুই ও দুর্গা দোলুইয়ের বাড়ি দাসপুরের ধরমা গ্রামে৷ ফি বছর দুর্গাপুজো এলেই পঞ্চপল্লবের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন তাঁরা। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে পঞ্চপল্লব জোগাড় করে সপ্তাহ শেষে চলে যান কলকাতার জগন্নাথঘাটে৷ হওড়া ব্রিজ পেরিয়ে ফুলের হাট৷ সেখানেই পাইকারি বা খুচরো দরে বিক্রি করে দিনের শেষে বাড়ি ফিরে আসেন তাঁরা৷ হাতে নগদ হাজার টাকা৷ কখনও হাজার ছড়িয়েও যায়৷ যত পুজো এগিয়ে আসে তাঁদের চাহিদাও বাড়তে থাকে৷ পুজোর সময়কাল তা কখনও দু’হাজারেও পৌঁছে যায়৷ তখন আনন্দ আর ধরে না৷ খোশ মেজাজে বাড়ি ফিরে আসেন৷ হ্যাঁ অবশ্যই হাতে থাকে ছেলেমেয়ের নতুন জামাকাপড়৷ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁদের দেখা পাওয়া গেল দাসপুরের গৌরা গ্রামে৷ দু’জনের হাতে পাতকাটি৷ বট ও অশ্বত্থ গাছের মগডাল থেকে পাতকাটি দিয়ে টেনে পাড়ছে কুঁড়ি৷ পুটলি ভরে উঠছে আম, বেল, পাকুড়, অশ্বত্থ ও বটের কুঁড়িতে৷ অতি যত্ন করে সাজিয়ে রাখছেন দুর্গাদেবী৷ কথা পাড়তেই সলজ্জ হাসি দু’জনেরই৷ বছর পঞ্চান্নর দুর্গা দোলুই বলেন, “দুর্গাপুজোয় পঞ্চপল্লব তো চাই৷ কলকাতা শহরের পুজোয় পঞ্চপল্লব আমরাই জোগান দিই৷ প্রতি বছরই আমরা এই সময় পঞ্চপল্লব কলকাতার বড় বাজারে নিয়ে যাই৷ সেখানেই বিক্রি হয়ে যায়৷ হাতে দুটো পয়সা পাই৷”
দুর্গাদেবী স্বামীহারা৷ বাড়িতে একমাত্র ছেলে রয়েছে৷ মেয়েরে বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেকদিন৷ ছেলে এখনও নাবালক৷ পুজোয় ছেলেকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে চান দুর্গাদেবী৷ তিনি বলেন, “এই পঞ্চপল্লব বিক্রি করে ছেলের জামাকাপড় কিনে আনব বড়বাজার থেকে৷” বেলাদেবীরও এক ছেলে৷ স্বামী মুটে মজুরের কাজ করেন৷ বছর পঁয়তাল্লিশের বেলাদেবী বলেন, “সপ্তাহের প্রতি বুধবার আমরা হাওড়া ব্রিজ পেরিয়ে ফুলবাজারে এই পঞ্চপল্লব বিক্রি করে থাকি৷ দুটো পয়সা পাই৷ সংসারেও সাশ্রয় হয়৷” দুর্গাদেবী বছর কুড়ি ধরে পঞ্চপল্লব বিক্রি করে আসছেন৷ বেলাদেবীও প্রায় বছর পনেরো ধরে এই কাজ করছেন৷ কোথায় কোনও বনে বা কোনও ঝোঁপে পঞ্চপল্লবের দেখা মেলে তা তাঁদের নখদর্পনে৷ দুর্গাদেবী বলেন, “আম, বেল, অশ্বত্থ ও বটের দেখা সহজেই মিলে যায়৷ কিন্তু পাকুড় গাছের দেখা সহজে মেলে না৷ পাকুড় গাছের সন্ধান পেতে হন্যে হতে হয় দুর্গাদেবীদের৷ তবুও পুজো এলেই পঞ্চপল্লবের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন তাঁরা৷ ঠিক মিলবে পঞ্চপল্লব৷ আর ছেলেমেয়ের জন্য ঘরে আসবে নতুন জামাকাপড়৷
[হুগলির হরিপালে দ্বারিকাচণ্ডী রূপে পুজিতা হন দেবী দুর্গা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.