Advertisement
Advertisement

জমিদারদের সিংহবাহিনীর মূর্তি চুরি করেই পুজোর সূচনা করেন রাজা মহেন্দ্র

নবমীতে ব্রাহ্মণরা দেবী শিবাখ্যাকে মাথায় নিয়ে গ্রাম পরিক্রমায় যান।

This Durga Puja of Aushgram Rajbari has unique specialties

ছবিতে ভল্লু রাজাদের দেবী শিবাখ্যা, ছবি: জয়ন্ত দাস।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:September 24, 2018 5:14 pm
  • Updated:September 26, 2018 7:24 pm  

পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল আউশগ্রামের অমরারগড়ের ভল্লু রাজাদের দুর্গাপুজোর কথা।

ধীমান রায়, কাটোয়া: রাজা, রাজত্বের কোনওটাই নেই। নেই সেই রাজবাড়িও। কিন্তু আউশগ্রামের অমরারগড়ে রাজা মহেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত শিবাখ্যা দেবীর পুজো আজও চলে আসছে সমান উন্মাদনায়। কালের প্রবহমান গতিতে রাজপরিবারের কুলদেবীর পুজো আজ সর্বজনীন মহোৎসবে পরিণত হয়েছে। আউশগ্রাম-দুই ব্লকের অমরারগড়ে দেবী দুর্গা শিবাখ্যা নামে পূজিত হন। কষ্ঠি পাথরের প্রাচীন আমলের সিংহবাহিনী মূর্তি। রাজা মহেন্দ্র এই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভল্লু রাজার বংশধর।

Advertisement

আউশগ্রাম জঙ্গলমহলে ভল্লু রাজারা একসময় রাজত্ব করতেন। জনশ্রুতি আছে সুরাটের কোনও এক রাজা সপরিবারে তীর্থভ্রমণে বেড়িয়ে আটকে পড়েছিলেন আউশগ্রামের জঙ্গলমহলে। অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন রানি। জঙ্গলের রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় রানির প্রসব বেদনা শুরু হয়। জঙ্গলে তাঁবু ফেলে প্রসবের ব্যবস্থা হলে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন রানি। কিন্তু জন্মের পর থেকে বহুক্ষণ পর্যন্ত সেই সদ্যোজাতর সাড়াশব্দ মেলেনি। রাজা ও তাঁর পারিষদরা ধরে নিলেন সদ্যোজাত মৃত। তাকে জঙ্গলে ফেলেই রাজা রওনা দিলেন।

[৬০৬ বছর ধরে মা দুর্গার আরাধনায় ব্রাত্য এই রাজবাড়ির মহিলারা]

সেই ঘটনার পরের দিন স্থানীয় এক ব্রাহ্মণ কোনও কাজে ওই জঙ্গলের পথেই যাচ্ছিলেন। তখন সদ্যোজাতর কান্নার আওয়াজ তাঁর কানে আসে। শব্দের উৎসের সন্ধানে জঙ্গলের মধ্যে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে দেখেন মানব শিশুকে বুকে জড়িয়ে বসে আছে এক মেয়ে ভল্লুক। শিশুটিকে শান্ত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ব্রাহ্মণ কাছে যেতেই সদ্যোজাতকে ফেলে পালায় ভল্লুকটি। সদ্যোজাতকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন ব্রাহ্মণ। সেই কুড়িয়ে পাওয়া শিশুর নাম রাখা হয় ভল্লুপদ। ভল্লুপদই পরে আপন পরাক্রমে আউশগ্রাম জঙ্গলমহল ও তার আশপাশে রাজত্ব বিস্তার করেছিলেন। ভল্লুপদর প্রপৌত্র হলেন রাজা মহেন্দ্র।

রাজা মহেন্দ্র স্বপ্নাদেশ পেয়ে কাটোয়ার খাজুরডিহির জমিদার জগৎ সিংয়ের বাড়ি থেকে বলপূর্বক দশভূজার সিংহবাহিনী মূর্তিটিকে হরণ করে আনেন। সেই মূর্তিই অমরারগড়ে প্রতিষ্ঠা করে শুরু শিবাখ্যাদেবীর পুজো। তবে পুরানো আমলের রাজবাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। তালপাতা ও হোগলাপাতার ছাউনিতে পরবর্তীকালে শিবাখ্যার পুজো হত। রাজার বংশধররা পালা করে পুজোর দায়িত্ব নেন। সম্প্রতি গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগে কংক্রিটের মন্দির তৈরি হয়েছে। তবে রাজবাড়ির এই পুজো এখন কার্যত সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। মহালয়ার এক সপ্তাহ আগেই শিবাখ্যাদেবীর পুজো শুরু হয়ে যায়। শাক্তমতে পুজো হয়। বিশেষ আকর্ষণ হল নবমীর দিন ব্রাহ্মণরা দেবীকে মন্দির থেকে বের করে মাথায় চাপিয়ে গ্রাম পরিক্রমায় যান। একে নাচন বলে। এই নাচন দেখতে দূরদূরান্তের মানুষ ভিড় করেন।

[মনসা আরাধনাই বড়দিঘারীর অকাল দুর্গাপুজো, ভাদ্র সংক্রান্তিতে উৎসবে মাতে গ্রাম]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement