সম্যক খান, মেদিনীপুর: এই পুজো একটু আলাদা। শুধু মায়ের আরাধনাই নয়, বিপ্লবীদের এক ছাতার তলায় আনার সুযোগ করে দিত এই পুজো। ব্রিটিশ আমলে শুরু হওয়া ওই পুজো মানে কেবলমাত্র লোকাচার বা পুজার্চনা ছিল না। তা ছিল বিপ্লবীদের একজোট হয়ে পরিকল্পনা রূপায়নের আস্তানা। বহু ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী এই পুজোর প্রতিটি ছত্রেই থাকে বিপ্লবকে ফিরে দেখা। তা সে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় হোক বা অন্য কিছু। প্রতিবছরই কোনও না কোনও মহাপুরুষের নামে এই পুজোকে উৎসর্গ করা হয়।
পুজো কমিটির সম্পাদক তীর্থঙ্কর ভকত জানিয়েছেন, এই বছর জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জন্ম সার্ধশত বার্ষিকী। স্বামী বিবেকানন্দের ১২৫ বছর ও ভগিনী নিবেদিতার ১৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। সেই পূর্ণতাকে স্মরণ করে তাঁদের প্রতি এই পুজোকে উৎসর্গ করা হয়েছে। ঐতিহাসিক শহর মেদিনীপুর বিপ্লবীদের পীঠস্থান। ১৯৩১ সাল থেকে পরের কয়েকটি বছর আজও স্মরনীয় দেশবাসীর কাছে। ১৯৩১-এ তৎকালীন ইংরেজ আমলের অত্যাচারী জেলাশাসক পেডি বিপ্লবীদের হাতে নিহত হন। শুধু তাই নয়, তার পরের দু’বছর আরও দুই ইংরেজের প্রাণ যায় বিপ্লবীদের হাতে। দুই জেলাশাসক যথাক্রমে ডগলাস ও বার্জ। পরপর তিন বছর তিন জেলাশাসককে হারিয়ে ইংরেজ শাসন তখন যথেষ্ট নড়বড়ে। কোনও ইংরেজ শাসকই জেলার শাসনভারের দায়িত্ব নিতে চাইছিলেন না। বিপ্লবীদের দাপটে তখন ইংরেজদের থরহরি অবস্থা। ঠিক সেই সময়ই অত্যাচারী অবসরপ্রাপ্ত এক আইসিএস পিজি গ্রিফিতকে জেলাশাসক করে মেদিনীপুরে পাঠানো হয়। ব্রিটিশ শাসনে কোনও অবসরপ্রাপ্ত আধিকারিককে দায়িত্ব দেওয়া ছিল এক নজিরবিহীন ঘটনা। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমেই ওই অত্যাচারী জেলাশাসক মেদিনীপুর শহরকে কার্যত কারাগারে পরিণত করে ফেলেন। সান্ধ্য আইন চালু করে দেওয়া হয় সারা শহরে। সন্ধ্যার পর শহরের রাস্তাঘাটে মানুষের বেরনোর ক্ষেত্রে একপ্রকার নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
ঠিক তখনই বিপ্লবীদের সাহায্য করতে নতুন পন্থার কথা ভাব হয়। অত্যাচারী ইংরেজ শাসকের নজর এড়িয়ে বিপ্লবী কার্যকলাপ করতে দুর্গা আরাধনার পরিকল্পনা করা হয়। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেন ব্যারিস্টার বীরেন শাসমল, রাজা দেবেন্দ্র লাল খান, সাতকড়ি পতিরায়, কিশোরী পতিরায়, অতুল বসু থেকে শুরু করে প্রথিতযশা দেশপ্রেমিকরা। অত্যাচারী গ্রিফিথের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই আজ থেকে ৮৪ বছর আগে কর্ণেলগোলায় ওই পুজোর সূচনা হয়। সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের পুজো আজও আদি সর্বজনীন পুজোরূপে খ্যাত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.