প্রতীকী ছবি
সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছেন৷ সংসার সামলাতে মাকে দৌড়তে হয়েছে স্কুলের চাকরিতে৷ তাই ছেলেবেলার দীর্ঘ সময় কিংবা নিজের স্কুল ছুটির লম্বা সময় কাটতে কাদামাটি ঘাঁটাই ছিল ছোট্ট নয়নজ্যোতির একমাত্র নেশা। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে বাড়ি ফিরে ছেলেকে কাদা ঘাঁটতে দেখেও কখনও বারণ করেননি মা শীপ্রাদেবী। দেখতেন কখনও মাটির তাল, কখনও দলা পাকিয়ে ছোট পুতুলের মতো তৈরি করছে ছেলে। এভাবেই কখন ধীরে ধীরে একদিন দুর্গামুর্তি বানিয়ে ফেলল তা বুঝতেও পারেননি তিনি৷ যখন নজরে এল, রীতিমতো পাকা শিল্পীর মতো মায়ের আদল তৈরি করতে বেগ পেতে হয়নি তাঁকে৷ এখন বড় হয়েছে৷ শিলিগুড়ি শহর ও আশপাশের বেশ কয়েকটি ছোটবড় পুজোর মুর্তির বরাত এখন তারই হাতে৷
শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার নয়নজ্যোতি দাসরায়। বয়স ২৭। সারাদিন অফিস। সেখান থেকে ফিরে দিনরাত শুধু মুর্তি গড়ার নেশা। কখনও কেউ তাঁর বদলে টাকা দিলেও খুশি, না দিলেও খুব একটা হেলদোল নেই তাঁর৷ কখনও তাগাদা করতে যান না৷ বাজারের দরদাম করে লাভ ঘরে তোলার মতো মুনশিয়ানা এখনও অর্জন করে উঠতে পারেনি। জানালেন হতাশ মা৷ নেশার টানে বেশিরভাগ সময়ই পকেট থেকেই বেরিয়ে যায় গাদাগুচ্ছ টাকা। তবু মুর্তি গড়ে নয়নজ্যোতি। লাভ-লোকসানের হিসেব কষে নয়, আনন্দে মুর্তি গড়তে পারলেই খুশি তিনি৷
[কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আমন্ত্রণেও সাড়া মিলল না, বাতিল বাবুলের অনুষ্ঠান]
তাঁর নিজের কথায়, “ছোট থেকে মাটি নাড়াচাড়া করতে গিয়ে কিভাবে মুর্তি তৈরি করে ফেললাম, তা নিজেও জানি না। কখনও প্রথাগত শিক্ষা নিইনি। কাজ করতে গিয়েই কাজ শেখা।” তাঁর তৈরি মুর্তি পাল্লা দিতে পারে যে কোনও নামী শিল্পীর সঙ্গে। প্রচ্ছন্ন গর্বে মা শিপ্রাদেবী জানিয়েছেন, ছেলের নেশার পাল্লায় পড়ে গোটা বাড়িই এখন স্টুডিও। মার্বেল করা মেঝের ওপর ডাঁই করা মুর্তি৷ বারান্দায়, একাধিক ঘরে এক উঠোন জুড়ে বড়বড় দুর্গা-গণেশ কিংবা কার্তিক-লক্ষ্মী-সরস্বতীরা। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী নয়নজ্যোতি এবছরও মগ্ন তার শিল্পকর্মে। জানিয়েছেন, যতদিন বাঁচবেন মুর্তি বানিয়ে যাবেন। এছাড়া আর কোনও বিনোদন নেই তাঁর। ফলে মুর্তি না বানালে তাঁর পক্ষে বেঁচে থাকাই মুশকিল। অকপটে জানালেন তিনি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.