Advertisement
Advertisement

পুতুল-পাট-কলসি, ত্রিধারায় ফিরে এল বিলুপ্তপ্রায় শিল্প

দেখে নিন কীভাবে সেজে উঠছে মণ্ডপ।

Pujo 2018: Tridhara is gearing up for this Durga Puja
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:October 8, 2018 2:14 pm
  • Updated:October 8, 2018 2:14 pm  

কৃষ্ণকুমার দাস: দেউল, চালা, রত্ন – তিনধর্মী মন্দিরের গায়ে বাংলার মল্লরাজার শৌর্য-বীর্যের কাহিনি পোড়ামাটির ভাস্কর্যে শৈল্পিক সুষমা বিশ্ববাসীর কাছে আজও শ্রদ্ধা ও বিস্ময় আদায় করে।

জলঙ্গি নদীর পাড়ে ঘূর্ণি গ্রামে রেউই বংশের মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রর সময় থেকেই দৃষ্টিনন্দন পুতুল তৈরির জন্য বিশ্বখ্যাত মৃৎশিল্পীরা। সে পুতুল হোক, আর কোনও ব্যক্তি বিশেষের মূর্তি, হিউম্যান ফিগার তৈরিতে গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন এখানকার শিল্পীরা। দুই ঘরানার শিল্পীরাই স্রেফ একটা কাঠের চাকতিতে একতাল নরম মাটি ঘুরিয়ে হাতের গুণে মুহূর্তে তৈরি করে দিচ্ছেন একের পর এক শিল্প সুষমায় ভরা নানা অবয়বের পুতুল। শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা বা জয়দেব-কেঁদুলির উৎসবে গিয়ে এখন বহু মানুষ হাতে তুলে নেন গ্রাম বাংলার নানা ঘরানার পুতুল। নদিয়া, কৃষ্ণনগর, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়ার প্রাচীন সেই ঘরানার নানা রঙের, নানা ঢঙের অবলুপ্তপ্রায় আকর্ষণীয় পুতুলই এবার দক্ষিণ কলকাতার ত্রিধারার পুজোর থিম। বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরে পুজো কমিটির এবছরের আবেগদীপ্ত স্লোগান- প্রকৃতি রতনে/ সাজাবো যতনে।

Advertisement

[পুজোতেও সিক্যুয়েল, উষ্ণায়ন প্রতিকারে এ মণ্ডপে শিল্পীর ভাবনা সবুজায়ন]

শিল্পী সেই গৌরাঙ্গ কুইলা। প্রায় আড়াইশো বছরের পুরোনো ঐতিহ্য ও বিলুপ্ত হতে বসা পুতুলশিল্পকে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে কার্যত বাংলাকে ফিরে দেখার পথে হাঁটছেন শিল্পী। তাই পুজো মণ্ডপে এলে যেমন দেখা মিলবে নানা মাপের আকর্ষণীয় লম্বাটে গড়নের পুতুল, যাঁর কোনওটায় খুঁজে পাবেন মল্লরাজার সভাসদ শিল্পীদের শৈল্পিক ছোঁয়া, আবার কোনও পুতুল অবশ্যই ফিরিয়ে নিয়ে যাবে ঘূর্ণি গ্রামের মাটির গন্ধ। একটা সময় এই পুতুল তৈরিতে বহুলভাবে ব্যবহৃত হত নানা মাপের হাঁড়ি। এখানেও অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ির উপর নানা বর্ণের পাট ও পাটকাঠি দিয়ে শিল্পকলার নানা জগৎকে তুলে এনেছেন গৌরাঙ্গ। একসময় বাংলার অন্ত্যজ গ্রামের মা-বোনেরা মাটির ওই চাকতি ও হাঁড়িতে মনের মাধুরী মিশিয়ে সবজির রঙে ফুটিয়ে তুলতেন নানা আঁকিবুকি। জীবজন্তু থেকে ফুল-পতঙ্গ-পাখি দিয়ে আঁকতেন নানা গ্রাম্য কাহিনি। ফুটে উঠত রামায়ন-মহাভারত থেকে শুরু করে মল্লরাজার বীরত্বের নানা বীরগাথা।

ত্রিধারার মণ্ডপে এবার তেমনই কাহিনি ফুটে উঠেছে বিশাল কলসি ও পুতুলে। পটচিত্র থেকে শুরু করে টেরাকোটা শিল্পের প্রতিটি খাঁজে বাংলার সেই নন্দিত শিল্পকলা ও বীরত্বের শৈল্পিক সুষমা আজও মুগ্ধ করে চলেছে বিদগ্ধ শিল্পসমালোচকদের। অভিনব এই মণ্ডপেও পুতুল এবং কলসীর উপরে ফুটে উঠেছে অবিকল পুরাতনি ছন্দে নতুন আঙ্গিকে নানা ভাবনার মন কেড়ে নেওয়া ছবি ও কাহিনি। আকাশ থেকে নেমে আসছে বৃষ্টির মতো অজস্র ভাবনার বর্ণময় স্রোতধারা। বস্তুত এই কারণে এবছর ত্রিধারার উজ্জ্বল বর্ণমালায় ঘেরা মণ্ডপে পা রেখে বাংলার সেই হারিয়ে যেতে বসা শিল্পকলা ফের দেখতে পেয়ে থমকে যাবেই পুজোর কলকাতা। প্রাচীন বাংলার লোকশিল্প ও পুতুল-কলসির সমন্বয়ে বিলুপ্ত ইতিহাস ফিরিয়ে দিতে পেরে তাই বেশ খানিকটা তৃপ্ত ও গর্বিত পুজো কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার।

[পুজোয় ঈশান কোণে ঈশানীর আরাধনায় ব্রতী বেলেঘাটা ৩৩ পল্লি]

‘প্রকৃতির রতন’ দিয়ে মণ্ডপ গড়তে গিয়ে ত্রিধারায় ব্যবহৃত হয়েছে লক্ষাধিক পাটকাঠি ও কয়েক টন পাট। শহর কলকাতায় একের পর এক অগ্নিকাণ্ডে ভীত মেয়র পারিষদ দেবাশিস তাই কার্যত নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিটি সামগ্রী অগ্নি-নিরোধক রাসায়নিকে ডুবিয়ে শুকিয়ে তবে যতনে সাজিয়েছেন শিল্পকলা। শহর সৌন্দোর্যায়নে মুখ্য ভূমিকা নেওয়া মেয়র পারিষদ যে এবার পুরাতনি শিল্পকলা দিয়ে দর্শকদের গতবারের চেয়ে আরও বেশি টেনে নিয়ে যাবেন এবছর তা হলফ করে বলা যায়। আর হ্যাঁ, এবারও পুজোর অনেক আগেই শারদ সংখ্যা প্রকাশ করে বহু নামী শারদীয়া প্রকাশনকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে ত্রিধারা। সেখানে বুদ্ধদেব গুহ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, নবনীতা দেবসেন থেকে শুরু করে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বেলাল চৌধুরীর মতো বাংলা সাহিত্যের এখনকার নক্ষত্ররা প্রায় সবাই লিখেছেন। সঙ্গে স্বাস্থ্য ম্যাগাজিন। সেখানেও বাংলার সমস্ত নামী ডাক্তার প্রয়োজনীয় জরুরী বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে কলম ধরেছেন। স্বয়ং দেবাশিস কুমারের কথায়, “পুজো চলে গেলে, মায়ের সঙ্গে পুতুল-কলসী শিল্পকলা বিদায় নেবে, তবে ঘরে থেকে যাবে এই দু’টি বই, এটা আমাদের উপহার।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement