পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন হাতিবাগান নবীন পল্লির পুজোর প্রস্তুতি৷
রোহন দে: ঐতিহ্যশালী বাঙালির বই বিলাসিতার অন্ত নেই। সেই বই বিলাসিতার আধার ছিল পাঠাগার। কালের গতিতে ইন্টারনেটের যুগে লাইব্রেরির চল প্রায় নেই বললেই চলে। সেই গ্রন্থাগারের রেওয়াজকে ফিরে দেখতেই এবার হাতিবাগান নবীন পল্লির পুজোর থিম ‘তবু মনে রেখো’। বইপ্রেমী বাঙালীকে গ্রন্থাগার মুখী করতেই অভিনব এই প্রয়াস পুজো কমিটির।
থিম শিল্পী সুবল পালের ভাবনা ও সৃজনে উত্তর কলকাতার এই ক্রাউডপুলার পুজোয় আস্ত এক লাইব্রেরি গড়ে উঠছে। শিল্পীর কথায়, বর্তমানে সংবাদপত্রের বিকল্প হিসেবে এসেছে পোর্টাল, বইয়ের পরিবর্তে এসেছে ই-বুক। পাঠাগারগুলিতে বইপ্রেমীদের ভিড় কমেছে অনেকটাই। হাতে নিয়ে বই পড়ার চল যেন বিলুপ্তির পথে। মণ্ডপে ফুটে উঠবে মানুষের অভ্যাসের দুটি দিক। একদিকে দেখানো হবে কীভাবে আমরা ঐতিহ্যবাহী পড়াশোনার জায়গা গ্রন্থাগার থেকে নিজেদের একটু একটু করে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছি। আর অন্যদিকে এই ডিজিটাল যুগে কীভাবে অন্য ফর্মেও লাইব্রেরির অভ্যাসকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। পুরনো একটি লাইব্রেরির আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। প্রায় ৫০ হাজার বই রাখা থাকবে সেখানে। বিভিন্ন প্রকাশনী সংস্থা থেকে নেওয়া হচ্ছে বই। এছাড়া থাকবে ছাপাখানাও। বই দিয়ে ঝাড়বাতিও তৈরি করা হচ্ছে। আর দুর্গা প্রতিমাকে চণ্ডীপূরাণের চণ্ডী হিসেবে দেখানো হবে।
নবীন পল্লির থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই থিম সং রচনা করছেন চন্দ্রবিন্দু খ্যাত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় এবং ভাষ্যপাঠে আছেন জগন্নাথ বসু ও উর্মিমালা বসু। আবহ সংগীত করছেন বিমল বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিমার পোশাক সজ্জার দায়িত্বে রয়ছেন বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার তেজস গান্ধী। মণ্ডপ থেকে প্রতিমা হোক কিংবা আবহ থেকে ভাষ্যপাঠ সব বিভাগেই নবীন পল্লির পুজোয় নতুনত্বের ছোঁয়া।
মণ্ডপে প্রবেশ করে দর্শনার্থীদের ইচ্ছে হবেই একটু বই পড়ে দেখার। গ্রন্থাগারের সেই স্মৃতির সাগরে ভেসে যাবেন সকলেই। বর্তমানে ইচ্ছা মতো ই-বুক পড়ার চল শুরু হয়েছে। কিন্তু হাতে নিয়ে বই পড়ার যে তৃপ্তি, সে অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। গ্রন্থাগারে গিয়ে বই সংগ্রহ করা বা সকলের মধ্যে বসে বই পড়ার মজাটাই আলাদা। এখানে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে, ই-বুক আছে, কিন্তু লাইব্রেরির মডার্ন ভার্সান হিসেবে বুকস ক্যাফে দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তাদের আশা, প্রতিবারের মত এবারও নতুন ভাবনা ও চমক তারা সমাজের কাছে তুলে ধরবেন। দর্শনার্থীদের ভিড় নবীন পল্লিতে বরাবরই উপচে পড়ে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এ মণ্ডপে এলেই নস্ট্যালজিক হয়ে উঠবেন বইপ্রেমীরা। এককথায় পুজোর কটা দিন বই পড়ার নয়া ঠিকানা হতে চলেছে হাতিবাগান নবীন পল্লি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.