পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন দমদম পার্ক তরুণ সংঘের পুজোর প্রস্তুতি৷
রোহন দে: পুজো মানেই দেদার হুল্লোড়। প্রচুর মজা, অঢেল খানাপিনা, ঠাকুর দেখা। আট থেকে আশির আনন্দোৎসবে শামিল হওয়া। উৎসব তো তার নিজের রং আর ঢঙে চলতে থাকে। মণ্ডপে মণ্ডপে আলোর রোশনাই, প্রতিমার জাঁকজমক, শব্দের তাণ্ডব। কিন্তু এমন উৎসবেও ব্রাত্য থাকে ‘গণশা’র মত শিশু শ্রমিকরা। কারণ তাদের পেট চলে কাজ করে। তাদের পুজোর কটাদিন কাটে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটে। আমরা যারা ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে’ মায়ের আরাধনায় ব্রতী হই, ভাবি হয়তো মা আমাদের সঙ্গেই রয়েছে। কিন্তু মা আসলে কোথায়? মায়ের মনকে কতটা জানতে পেরেছি আমরা? সমস্ত জাঁকজমক আর হুল্লোড়ে চাপা পড়ে গিয়েছে যাদের কান্না, মায়ের মন পড়ে আছে তাদের কাছেই। এবার সেই শিশু শ্রমিকদের কাছেই পুজোয় আসবেন দেবী। এবার পুজোয় সেই শিশু শ্রমিক ‘গণশা’র কথা ভেবেই থিম করেছে উত্তরের জনপ্রিয় পুজো দমদম পার্ক তরুণ সংঘ। গনশার চোখেই এবার পুজো দেখা দমদম পার্ক তরুণ সংঘে। থিমমেকার রিন্টু দাসের ভাবনায় ৩৩ তম বর্ষে তাদের নিবেদন- ‘গণশা’।
পেটের জ্বালা বড় দায়। তাই মন পড়ে থাকে চায়ের দোকানে। এমন কত দুঃখের কাহিনি লুকিয়ে সমাজের আনাচে-কানাচে। ভাগ্যের চরম মারে লক্ষ লক্ষ শৈশব এইভাবেই শেষ হয়ে যায়। স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও শিশুশ্রম সমান প্রাসঙ্গিক। আজও শহরের অলি-গলিতে শয়ে শয়ে শিশুশ্রমিক নিজেদের স্বপ্নকে পদদলিত করে শুধু কাজ করে চলেছে। হাতে পাঠ্যবইয়ের বদলে ছাঁকনি-কেটলি। পিঠে বইয়ের ব্যাগের বদলে কাগজের বস্তা, বা মাথায় ইট। রুটি-রুজির টানে শৈশবকে অনেক আগেই আলবিদা জানিয়েছে তারা। রঙিন স্বপ্নগুলোর গলা টিপে আজ তারা দিনরাত খেটে চলেছে পেটের টানে। তারাও দুর্গা মায়ের সন্তান। তাই তারা যন্ত্রণাময় এ জীবন থেকে পুজোয় মায়ের কাছে চাইছে মুক্তি আর সেটিই গোটা মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী রিন্টু দাস।
মণ্ডপে ঢোকা ইস্তক প্রতিমা দর্শন পর্যন্ত দর্শনার্থীদের কাছে ধরা দেবে ‘গণশা’ অর্থাৎ সেই শিশুশ্রমিকের জীবনের নানা চিত্র। গোটা মণ্ডপে কেটলি, ছাকনি, হাতা, বয়াম, টি-ব্যাগ ছাড়াও চায়ের দোকানে ব্যবহৃত নানা সরঞ্জাম দিয়েই সাজিয়ে তোলা হচ্ছে নানা শিল্পকর্ম। মণ্ডপজুড়ে শোভা পাবে গণশার শ্রমজীবনের নানা যন্ত্রণা যা থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায় সুস্থ স্বাভাবিক শৈশবে। দেবী দুর্গাই মুক্ত করবেন গণশাদের। মণ্ডপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই সুরজিত পালের সৃজনে গড়ে উঠছে প্রতিমা। আলোক সজ্জার দায়িত্বে থিম শিল্পী রিন্টু দাস নিজেই। মণ্ডপজুড়ে থাকছে সৈকত দেবের করা আবহ।
গতবছর প্রাচীন ‘মাতা-নি-পাছেরি’ শিল্পকর্মের ঝলক মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তুলেছিল দমদম পার্ক তরুণ সংঘ। নেপথ্য কারিগর ছিলেন শিল্পী গোপাল পোদ্দার। পুজোপ্রেমী বাঙালির ভূয়সী প্রশংসা পেয়েছিল সেই ভাবনা। এবার গণশাদের কাহিনি ডানা মেলে উড়বে পুজোমণ্ডপে। তা কতটা পুজোপ্রেমীদের মনে ধরে এখন সেটাই দেখার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.