পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন ৯৫ পল্লি অ্যাসোসিয়েশনের পুজো প্রস্তুতি৷
কৃষ্ণকুমার দাস: রোগশয্যায় শুয়ে অসমর্থ-অসহায় এক শিল্পীর টুকরো টুকরো ভাবনার বিমূর্ত প্রতিচ্ছবি কাহিনি। মাতৃজঠরের সন্তানের সঙ্গে জন্মদাত্রীর মধ্যে আত্মজর সংযোগ যে বিন্দুতে সেই নাভিমূলের উৎস এক ধারা। পরিবারে, সংসারে, সমাজে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একের সঙ্গে অন্যের সম্পর্ক-সম্বন্ধ-সংযোগ ঘিরে তীব্র টানাপোড়েনের ধারাপথ। তিন স্রোতধারার মূলে দু’টি শব্দ- মায়ার বাঁধন। এবছর দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম সেরা শারদোৎসব যোধপুর পার্ক ৯৫ পল্লির পুজোর থিম ভাবনা। শিল্পী বাংলার পুজোর আঙিনায় ব্যতিক্রমী ভাবনার অন্যতম পথিকৃৎ-ভবতোষ সুতার।
অসম থেকে আনা প্রায় ২০ হাজার নানা মাপের সরু-মোটা, ছোট-দীর্ঘ-লম্বা ও রং-বেরঙের বাঁশ। সুন্দরবনের গহীন জঙ্গলের গ্রাম থেকে সংগৃহীত প্রায় দেড় লক্ষ ঘুঁটে। রায়মঙ্গল নদীর খাঁড়ি পথ দিয়ে ম্যানগ্রোভের বুক চিরে ঘোরা নানা মাপের ডোঙা। সঙ্গে ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির’ পথের ধারের ধানখেতের কয়েক শো আঁটি খড়ের গাদা। সবাইকে একসাথে জুড়তে ৯৫ পল্লিতে নিয়ে আসা হয়েছে গার্ডেনরিচ-নুঙ্গির দরজি মহল্লা থেকে কয়েক লক্ষ রঙিন টুকরো কাপড়। তাই মণ্ডপে ঢুকে উপর-নিচ, চারপাশে তাকালে প্রতিমা দর্শনার্থীরা দেখবেন অজস্র বাঁধন। বাঁশের উপর বাঁশ বেঁধে ছোট-বড়, আয়তক্ষেত্র-বর্গক্ষেত্র মাপের কয়েক লক্ষ চৌকো ঘর। ঘরের মধ্যে ঘর, তার মধ্যেও ছোট ঘর। যেমনটা সমাজ-সংসারে প্রায়ই হয়ে থাকে, তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে মায়ার বাঁধন-এ। মণ্ডপে ঢুকলে মাথার উপর পাওয়া যাবে বিশাল মৌচাক ঝুলছে। একটু দূরে আরও একটা লম্বাটে টি-আকৃতির মন ভাল করে দেওয়া মৌচাক। সবই ঘুঁটে দিয়ে তৈরি। কাজ করতে গিয়ে শুধু ৩০ হাজার ঘুঁটে নষ্ট হয়েছে। প্রায় ছ’মাস ধরে জনা ২৫ শিল্পী ও কারিগর মিলে তৈরি করে চলেছেন মেয়র পারিষদ রতন দে’র ৯৫ পল্লির এবছরের পুজোর থিম। কেউ এসেছেন বীরভূম বা মেদিনীপুর থেকে, কেউ জীবনে প্রথমবার কলকাতায় পা দিয়েই যোধপুর পার্কে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পুজোর সহ-কারিগর হয়ে গিয়েছেন।
[মায়ের হাত ধরে শৈশবে ফিরতে এবার গন্তব্য হোক টালা বারোয়ারি]
স্বয়ং শিল্পী ভবতোষের কথায়, “দেবীদুর্গা থেকে লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশ-অসুর, এমনকী উপরের মহাদেবও খড় দিয়ে বেঁধে বেঁধে তৈরি হয়েছে। যেহেতু থিম মায়ার বাঁধন তাই মণ্ডপ জুড়ে লক্ষাধিক বাঁধন দেখতে পাবেন।” পেপার পাল্পের সঙ্গে খড়ের বিনুনির মতো দড়ি দিতে দেবীর শরীরের প্রতিটি ভাঁজও অপূর্ব শিল্পসুষমায় তৈরি ভবতোষের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়। আর জীবন ও সভ্যতার গতির পথ তুলে ধরতে ডোঙা রাখা হয়েছে মণ্ডপে। ভবর দাবি, “মানুষ আসলে একা। তাই একাকিত্ব পথের কথা ডোঙায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মানুষের হৃদয়ের নানা অতৃপ্ত আত্মার কথা ও জীবনের ঘটনাক্রমও বিনি সুতোর মালার মতো গেঁথে তুলে ধরা হয়েছে এবারের ভাবনায়।” এমন অভিনব ভাবনার পুজো মহালয়ার সন্ধ্যায় প্রতিবছরের মতো এবারও মুখ্যমন্ত্রীর হাতে সূচনা হবে। কিন্তু দর্শকরা চতুর্থীর দিন থেকেই মায়ার বাঁধনে নিজেদের বাঁধতে পারবেন বলে দাবি পুজো কমিটির সভাপতি মেয়র পারিষদ রতন দে’র।
[প্রকৃতি আজ বিপন্ন, পুজোয় ভূমি সংরক্ষণের বার্তা বেহালা নূতন সংঘের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.