পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সেরা পুজোর লড়াইয়ে এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায়৷ এমনই কিছু বাছাই করা সেরা পুজোর প্রস্তুতির সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ পড়ুন সমাজসেবী সংঘের পুজো প্রস্তুতি৷
শুভময় মণ্ডল: ‘অন্ধজনে দেহো আলো, মৃতজনে দেহো প্রাণ…’।
সেই কবে কবিগুরু লিখে গিয়েছিলেন এই অমোঘ বাণী। কিন্তু আজও তা প্রাসঙ্গিক। দৃষ্টিহীনরাও এ সমাজের অংশ। তাই করুণা বা দয়া নয়, তাঁরা নিজেদের অন্তরের দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেন পৃথিবীর জাগতিক যা কিছু। দৃষ্টিশক্তি না থাকলেও আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের থেকে অন্যান্য ইন্দ্রিয় তাঁদের অনেক বেশি সক্রিয়। শক্তিশালী। তার মধ্যে অন্যতম হল, স্পর্শ, শ্রবণ এবং ঘ্রাণ। এই তিন ইন্দ্রিয়র শক্তিতে বলীয়ান হয়ে তাঁরা সমাজের বাকিদের সঙ্গে সমানে সমানে পাল্লা দিতে পারেন। পিছিয়ে তাঁরা নন কোনওমতেই। এবার তিন ইন্দ্রিয়র মেলবন্ধনেই অনুভবের এক পুজোর ভাবনা শহরের পুজোমণ্ডপে। দক্ষিণ কলকাতার কুলীন পুজো সমাজসেবী সংঘের এবছরের থিম সেরকমই। দৃষ্টিহীনদের চোখ দিয়ে পুজোকে অনুভব করাবেন শিল্পী ও উদ্যোক্তারা। যার পোশাকি নাম, ‘স্পর্শ- অনুভবের দুর্গাপুজো’।
[মোড়কবন্দি সুখে কতটা সুখী মানুষ? পুজোয় উত্তরের খোঁজে ৬৪ পল্লি]
দৃষ্টিহীনরা যাবতীয় কাজকর্ম তিন ইন্দ্রিয় দিয়েই করে থাকেন। স্পর্শ, শ্রবণ ও ঘ্রাণ। এই তিনটি বিষয়কে মাথায় রেখেই মণ্ডপ সাজাচ্ছেন শিল্পী দম্পতি শুভদীপ ও সুমি মজুমদার। মণ্ডপের শুরু থেকে শেষ, অন্য আঙ্গিকে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজোকে তুলে ধরছেন তাঁরা। মানে শুধু পুজো দেখা নয়, এখানে তার চেয়েও বেশি পুজোকে অনুভব করা। অনুভূতির একটা ভাষা আছে। আর তাকেই ভাবনায় মণ্ডপে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দৃষ্টিহীনদের দৈনন্দিন ব্যবহার্য সবকিছুই থাকবে মণ্ডপে। তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে গোটা মণ্ডপকে। থাকছে ব্রেইল-এ লেখা স্তোত্র। মণ্ডপে ঢোকা ইস্তক স্পর্শ করেই বিষয় ভাবনাকে অনুভব করতে পারবেন দর্শনার্থীরা। দৃষ্টিহীনরা যেকোনও বস্তুকে অনুভব করতে বস্তুর তল, আকার এগুলিকে স্পর্শ করে উপলব্ধি করেন। তাই মণ্ডপে থাকছে প্রকাণ্ড এক মা দুর্গার মুখমণ্ডল। প্রচুর স্ক্রু দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সেটি। দৃষ্টিহীনরা কারও দয়ার পাত্র নয়। তাই সহানুভূতি দেখানোর জন্য এই ভাবনা তা বলছেন না শিল্পী শুভদীপ ও সুমি। বরং তাঁদের মতো করে পুজোকে অনুভব করার প্রয়াসই পুজোপ্রেমীদের জন্য করেছেন শিল্পীরা। মণ্ডপের শেষভাগে চক্ষুদানের মতো মহৎ উদ্দেশ্যকে জনমানসে প্রচার করতে চেয়েছেন শিল্পী দম্পতি। চক্ষুদানে যাতে আরও বেশি করে সহৃদয় মানুষ এগিয়ে আসেন সেই বার্তা থিমের মাধ্যমে দিতে চেয়েছেন তাঁরা। প্রতিমা গড়ছেন শিল্পী পরিমল পাল। থিমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। এই মণ্ডপে আলোর একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আলোকসজ্জার দায়িত্বে শিল্পী পিনাকি গুহ। আর আবহ সংগীত করেছেন গৌতম ব্রহ্ম (জোয়ার)।
[এবার পুজোয় শহরেই আন্দামান, জারোয়াদের ঠিকানা কলকাতা ৮]
তবে এখানেই চমকের শেষ নয়। পুজোর আবহরে সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরও একটি নাম। বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সুপারস্টার প্রসেনজিৎ। একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তাঁর। মণ্ডপের বাইরে এবার মরণোত্তর চক্ষুদান অঙ্গীকারের শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে সমাজসেবী সংঘের পক্ষ থেকে। ইতিমধ্যেই পুজোর সঙ্গে যুক্ত ৩০ জন সদস্য মরণোত্তর চক্ষুদানের অঙ্গীকার করেছেন। আর সাধারণ মানুষকেও এমন মহৎ কাজের শরিক হওয়ার বার্তা দেবেন তাঁরা এই শিবিরের মাধ্যমে। এবং অভিনেতা প্রসেনজিতের ভাষ্যপাঠ শোনা যাবে মণ্ডপে। সেখানেই প্রসেনজিতের কণ্ঠে দর্শনার্থীদের মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো মহৎ কর্মে অংশীদার হওয়ার আবেদন রাখবেন উদ্যোক্তারা। অন্যতম উদ্যোক্তা অরিজিৎ মৈত্র জানিয়েছেন, ‘এম পি বিড়লা আই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সমাজসেবী সংঘ গাঁটছড়া বেঁধেছে সমাজসেবী সংঘ। দ্বিতীয়া থেকেই শিবির বসবে পুজোপ্রাঙ্গণে। আমাদের একটাই আশা, এমন মহৎ কাজের সঙ্গে অনেকেই যুক্ত হবেন। তাতেই কবিগুরুর কথা, অন্ধজনে দেহো আলোর সার্থকতা।’
[পুজোয় অঙ্কের ভাষায় ছক ভাঙার গল্প বলবে বেহালা নূতন দল]
গতবছর চিরাচরিত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শৈশবের মুক্তির কাহিনি বলেছিল সমাজসেবী সংঘ। থিম ছিল ‘সবুজের অভিযান’। পড়াশোনা যেন যান্ত্রিক না হয়, তা বোঝাতেই ছিল ওই থিম। এবার অনুভবের দুর্গাপুজোর সাক্ষী থাকতে ঢুঁ মারতেই হবে লেক রোডের এই পুজোয়। প্ল্যান-প্রোগ্রাম করে এখনই প্রস্তুত হোন।
[মায়ের কাছে মুক্তি চাইছে ‘গণশা’, দমদম পার্ক তরুণ সংঘে এবার অন্য পুজো]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.