শুভময় মণ্ডল: এবার পুজোয় আহিরীটোলার রাজবাড়িতে অঞ্জলির প্রস্তুতি! ব্যাপারটা কী? বনেদি ও রাজবাড়ির পুজোয় অঞ্জলি তো হয়ই। তবে আহিরীটোলায় নতুনত্ব কী?
বিশেষত্ব আছে বইকি! কারণ, এবার পুজোয় অঞ্জলির গয়নায় সাজবেন উমা। অঞ্জলি জুয়েলার্সের আভরণ এবার উত্তরের নামী পুজো আহিরীটোলা সর্বজনীনের প্রতিমার শোভা পাবে। তা নিয়েই শহরে হইচই। তবে, বলে রাখি প্রতিমার মুকুট থেকে যাবতীয় গয়না কিন্তু সোনার নয়। বরং তামা ও রুপোর মিশ্রণে তৈরি। আর তাতেই সোনালি পালিশ। এমনই উদ্যোগে গাঁটছড়া বেঁধেছে আহিরীটোলা সর্বজনীন পুজো কমিটি ও অঞ্জলি জুয়েলার্স প্রাইভেট লিমিটেড। তবে শুধু অলঙ্কারেই পুজোর গল্পে ইতি নয়, বরং শুরু। কারণ, বিসর্জনের পর সেই গয়নাই নিলাম করা হবে। নিলামের টাকা দান করা হবে শিশু ও নাবালিকাদের কল্যাণে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যারা শিশুকন্যা ও নাবালিকাদের কল্যাণে কাজকর্ম করে তাদেরই সেই টাকা তুলে দেওয়া হবে পুজো কমিটির তরফ থেকে। এমনই মানবিক উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানালেন পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা দুলাল শীল এবং অঞ্জলি জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অনর্ঘ্য চৌধুরি।
কীভাবে এল এই ভাবনা? অনর্ঘ্যবাবু জানিয়েছেন, প্রতিমার গয়না তৈরির প্রস্তাব নিয়ে পুজো কমিটি তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারপরই আলোচনার পর এই উদ্যোগের ভাবনা আসে। কলকাতার অনেক পুজোর সঙ্গেই এখন গয়না প্রস্তুতকারী সংস্থা যুক্ত। কিন্তু অন্যান্য সংস্থার মতো গয়না প্রস্তুত করেই থেমে থাকেনি অঞ্জলি। বরং পুজোর পর সেই গয়না যাতে নারীকল্যাণের মতো মহৎ কাজে লাগতে পারে সেই বন্দোবস্ত করতে পেরে খুশি অঞ্জলি ও পুজো কমিটি। অনর্ঘ্যবাবু বলেন, ‘আমার মা অনন্যা চৌধুরি নিজে কারিগরদের কথা বলে সঙ্গে গয়না তৈরিতে তদারকি করেছেন। প্রায় চার-পাঁচ মাস লেগেছে এই গয়নাগুলি তৈরি করতে। তিনিও এই উদ্যোগে শামিল হতে পেরে উচ্ছ্বসিত।’ আর গয়নার মূল্য? সে ব্যাপারে তিনি জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষ ঠিক করবেন। সবচেয়ে বড় বিষয়, গয়নাগুলি সমাজের দুর্গাদের কল্যাণে ব্যবহত হবে। তাই বা কম কীসে?
[সন্তোষপুর লেকপল্লির পুজো সাজবে হলুদে, ‘মায়ের হেঁশেল’-এ ব্যস্ততা তুঙ্গে রূপান্তরকামীদের]
এ তো গেল অঞ্জলির প্রস্তুতির বিষয়। কিন্তু আহিরীটোলা রাজবাড়ির বিষয়টা তো খোলসা করা হল না। এবারের পুজোয় আহিরীটোলা সর্বজনীনের থিমই হল রাজবাড়ির পুজো। পুরনো রাজবাড়িতে সেজে উঠছেন উমা। কালের নিয়মে, রাজবাড়ির জৌলুস হারিয়েছে। ছিন্ন হয়েছে যৌথ পরিবারের বন্ধনও। কিন্তু মায়ের আরাধনায় ফের একসঙ্গে হয়েছেন বংশের প্রবীণ-নবীনরা। পুরনো রাজবাড়ির আদলই এবার ফুটে উঠবে মণ্ডপে। থিম শিল্পী তন্ময় চক্রবর্তীর সৃজনে গড়ে উঠছে পুজোমণ্ডপ। সেখানেই উমার আবাহন। সাবেকি প্রতিমার সৃজনে শিল্পী সৌমেন পাল। আবহ সংগীতের দায়িত্বে সুরকার জয় সরকার। এবছর ৭৯তম বর্ষে পা দিয়েছে আহিরীটোলা সর্বজনীনের পুজো। তবে আকর্ষণে এখনও বাকি আছে। এবছর লন্ডন শারদোৎসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এই পুজো। ব্রিটিশ কাউন্সিলের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে আহিরীটোলা সর্বজনীন। সেই কারণে এবার শহরের পুজোয় হাজির থাকবেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা। তবে যে সে ভাবে নয়, রীতিমতো অষ্টাদশ শতকের মতো গঙ্গাবক্ষ দিয়ে বজরায় চেপে আহিরীটোলা ঘাটে নামবেন ব্রিটিশরা। তারপর পায়ে হেঁটে বনেদি উত্তর কলকাতার গন্ধ গায়ে মেখে আহিরীটোলা সর্বজনীনের রাজবাড়ির আদলের মণ্ডপে ঘুরতে আসবেন তাঁরা। সবমিলিয়ে আকর্ষণের ইয়া লম্বা লিস্ট। দুলাল শীল জানিয়েছেন, আগামী ১ অক্টোবর মায়ের চক্ষুদান পর্ব। তার ঠিক এক সপ্তাহ পর দেবীপক্ষের সূচনায় প্রতিমায় অলঙ্কার পরানো হবে।
[নতুন ‘আমি’কে খুঁজে পেতে পুজোয় চেতলা অগ্রণীতে এবার বিসর্জনের সুর]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.