হালদার বাড়ির ঠাকুর তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির Sangbadpratidin.in৷ আজ রইল বেলপাহাড়ির হালদার বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: কোনও স্বপ্নাদেশ নয়। না কোনও পারিবারিক ঐতিহ্য। গ্রামের বাসিন্দাদের মুখ চেয়েই বেলপাহাড়ির মাটিহানা গ্রামের হালদার বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। বাসিন্দাদের আনন্দের বহর দেখে মনে হতেই পারে বাড়ির পুজো নয়, যেন সর্বজনীন দুর্গোৎসব। দুর্গাপুজোর অনেক আগেই সাড়ম্বরে শরৎ আসে। গ্রামের প্রান্তে কাশফুলের রাশি মাথা দুলিয়ে মায়ের আগমন বার্তা জানান দেয়। শিশিরসিক্ত শিউলিতে ভরে থাকে উঠোন। সুদূর কৈলাস থেকে ছেলেমেয়েকে নিয়ে দু্র্গা ফেরে দূর গাঁয়ে। তবে একটা সময় পর্যন্ত বেলপাহাড়ির মাটিহানা গ্রামে মায়ের আগমন ধ্বনি শোনা যেত না। পুজোর ক’দিন দু’আড়াই কিমি উজিয়ে পাশের গ্রামে যেতেন বাসিন্দারা। অষ্টমীর সকালে পুষ্পাঞ্জলি দিতে বেশ অসুবিধায় পড়তে হত। বাসিন্দাদের মুখের দিকে তাকিয়ে গ্রামে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার মদনমোহন হালদার।
নিজের বাড়িতেই চার বছর ধরে দুর্গা আরাধনা শুরু করেছেন মদনমোহনবাবু। তবে একা নন, পুজোর কাজে তাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাই হালদার বাড়ির পুজো চৌকাঠ পেরিয়ে সর্বজনীনের রূপ নিয়েছে। ইচ্ছে থাকলেও গ্রামে বারোয়ারি পুজোর আয়োজন সম্ভব হয়নি। তাই গোটা গ্রাম হালদার বাড়ির পুজোকেই আপন করে নিয়েছে। পাঁচটি দিন বাসিন্দাদের সহযোগিতায় হালদার বাড়ির পুজো জমজমাট থাকে। নবমীর দিন পাত পেড়ে খিচুড়ি ভোগ খায় গোটা গ্রাম। মদনমোহনবাবু পুজো উপলক্ষে গ্রামের প্রত্যেক বাসিন্দাকেই নতুন জামাকাপড় দেন। চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। হইহই করে পুজোয় মাতে মাটিহানা গ্রাম। কচিকাঁচাদের নিয়ে হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। এই প্রসঙ্গে মদনমোহনবাবু বলেন, ‘গ্রামে কোনও পুজো হত না। অনেক দূরে গিয়ে পুজোর আনন্দে শামিল হলেও কোথাও একটা আক্ষেপ থেকেই গিয়েছিল। চারবছর আগে তাই বাড়িতেই মায়ের আরাধনার আয়োজন শুরু করি। এখনা গোটা গ্রামের পাঁচদিনের ঠিকানা হালদার বাড়ি। কচিকাঁচারা আনন্দ করে। দেখলেই মন ভরে যায়।’ ছেলে প্রসূনপ্রিয় হালদার বলেন, ‘বাবা গ্রামের সকলের কথা ভেবে বাড়িতে পুজোর আয়োজন করেন। আমরা পরিবারের সকলে মিলে মনের আনন্দে পুজোয় শামিল হই।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.