ছবিতে সাঁকতোড়িয়ার বাদ্যকারদের পুজোর প্রস্তুতি শুরু। ছবি-মৈনাক মুখোপাধ্যায়।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মহালয়ার দিন থেকেই তাঁদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। কাঁধে বিশাল ঢাক, আর হাতে ঝোলা। বাড়ির একরত্তি ছেলেগুলোকে সঙ্গে নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি। নদীর পাড়ের মাঠে কাশফুলের দোল খাওয়া পেছনে ফেলে কিছু রোজগারের আশায় গাঁ ছাড়তে হয় তাঁদের। তাঁরা পশ্চিম বর্ধমানের সাঁকতোড়িয়ার ঢাকি।
নাহ, পুজোয় তাঁদের গায়ে ওঠে না নতুন জামা। তবে নতুন নামকরণ হয়ে যায়, ঢাকি। বাড়ির মা-বোনেরাও পান না নতুন কাপড়। ছেলেমেয়েরা পুরনো ছেঁড়া-ফাটা জামা গায়েই বাবার সঙ্গ নেয়। উৎসবের দিনগুলোয় প্রতিবছর দামোদরের পাড়ের সীমান্ত লাগোয়া সাঁকতোড়িয়ার ঢাকিদের এটাই রোজনামচা। আর পাঁচটা বাঙালির মতো শারদোৎসবের উষ্ণতা ছুঁতে পারে না সাঁকতোড়িয়ার বাদ্যকর পরিবারগুলিকে। আশ্বিনের দোরগোড়াতেই বাঁশের বেড়ায় ঝোলানো পুরোনো ঢাক নামিয়ে মেরামতির কাজ শুরু করে দেন এই গ্রামের ঢাকিরা। কারণ তাঁদের তোলা ঢাকের সুরেই তো পুজো প্রাণ পায়। পুজো শুরুর মাসখানেক আগে থেকে সাঁকতোড়িয়ার বাদ্যকর পাড়ায় ‘ঢ্যাং কুড়কুড়’ শব্দে ঘুম ভাঙে সবার। পশ্চিম বর্ধমান জেলার সাঁকতোড়িয়ার বাদ্যকরপাড়া, ময়লাগাদা ও গাঙুঠিয়া গ্রামের ঢাকিরা এখন মহড়ায় ব্যস্ত। গ্রামের প্রায় ২৫০টি পরিবারের কাছে ঢাক বাজানোই প্রধান জীবিকা। বংশপরম্পরায় বাদ্যকরেরা স্বেচ্ছায় কাঁধে তুলে নিয়েছেন পিতৃপুরুষের ব্যাটন।
সাঁকতোড়িয়ার বাদ্যকর পাড়ার বাসিন্দা রোহন বাদ্যকর জানান, পুজোর চার-পাঁচদিনের জন্য তাঁরা প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে পাড়ি দেন। ভিনরাজ্যে প্রবাসী বাঙালিবাড়ির পুজোয় কিংবা অবাঙালিদের পুজো মণ্ডপে ঢাক বাজানোর বায়না থাকে। ধানবাদ, ইস্পাত শহর বোকারো, বৈদ্যনাথধাম দেওঘর, এমনকী, বিহারের ভাগলপুরেও পুজোর চারদিন ঢাক বাজাতে যান সাঁকতোড়িয়ার ঢাকিরা। নিজের এলাকায় ঢাক বাজানোর ডাক পেলেও দরদামে পোষায় না। বাক্স-প্যাটরা বেঁধে যেতে হয় ভিনরাজ্যে। বাড়তি রোজগারের আশায় ঢাকের বাদ্যিতে বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করেন ঢাকিরা। ঢাকির পরিবারের বধূ চায়না বাদ্যকর ক্ষোভ, পুজোয় সবার জামা কাপড় হয়। কিন্তু তাঁদের বাড়ির ছেলে মেয়েদের নতুন জামা কাপড় গায়ে ওঠে না। ঘরের মানুষেরা পুজো শেষে কিছু বাড়তি পয়সা আনলে তখন ছেলেমেয়েরা নতুন কিছু পায়। সাঁকতোড়িয়ার ঢাকিরা জানালেন, পুজোর চারটে দিন বিজ্ঞাপনের সস্তা গেঞ্জিই তাঁদের পুজোর জামা। তবে ওসব না ভেবে পুজোর দিনে ঢাকের বোলে আনন্দময়ীর আগমনবার্তা দেওয়ার মধ্যেই সাঁকতোড়িয়ার বাদ্যকররা আনন্দ খুঁজে পান।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.