ছবিতে শঙ্করীমাতা, ছবি: মুকুলেসুর রহমান।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল বর্ধমানের শাঁকারি গ্রামের রায়বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা।
সৌরভ মাজি, বর্ধমান: ‘বাপ সকল সন্ধিপুজোয় বসো।’ পর পর তিনবার এমন হাঁক শুনে শঙ্করীমাতার সন্ধিপুজো শুরু হয়। এই হাঁক শুনে আশপাশেও গ্রামেও সন্ধিপুজো শুরুর রীতি রয়েছে। পাঁচ শতাব্দীর বেশি সময় ধরেই পূর্ববর্ধমানের খণ্ডঘোষের একটি গ্রামে এই রীতি চলে আসছে। দেবীর নাম থেকেই গ্রামের নামকরণ হয়েছে। দেবী শঙ্করী মাতার নাম অপভ্রংশ হয়ে গ্রামের নাম হয়েছে শাঁকারি। কথিত আছে, গ্রামের রায় পরিবারের পূর্বপুরুষ রাঘব দত্ত (রায়)স্বপ্নাদেশ পেয়ে দেবীর আরাধনা শুরু করেন। স্বপ্নাদেশে দেবী তাঁকে জানান, গ্রামের প্রায় দেড় কিলোমিটার উত্তরে চকগ্রামের দক্ষিণে ঠাকরুনগড় পুষ্করিণী থেকে শঙ্করীমাতাকে তুলে এনে পুজো করতে হবে। রাঘব দেবীকে সেখান থেকে তুলে আনেন। এরপর গ্রামের উত্তর-পশ্চিমাংশে সবথেকে উঁচু জায়গায় দেবীকে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে দেবীর আরাধনা হচ্ছে গ্রামে।
দেবীমূর্তির উচ্চতা প্রায় চারফুট। দেবী এখানে অষ্টাভূজা। সিংহারূঢ়া অসুরদলনী দেবী। ছিন্নমুণ্ড মহিষের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা মহিষাসুরকে ত্রিশূল দিয়ে দেবী বিদ্ধ করছেন। দেবী মূর্তি কষ্টিপাথরের। এই পুজোর বেশ কিছু রীতি রয়েছে। দুর্গাপুজো সাধারণত পঞ্জিকার সময় ধরে হয়ে থাকে। এখানে একটু ব্যতিক্রম রয়েছে। রায়বাড়ির পুজোর নির্ঘণ্ট নির্ধারণ করে জলঘড়ি বা তামি। অষ্টমীতে তামি ডোবার সঙ্গেসঙ্গে দেবীর মন্দিরের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে গ্রামবাসীরা সমবেতভাবে হাঁক পাড়েন, বাপ সকল সন্ধিপুজোয় বসো। পরপর তিনবার এই হাঁক পাড়ার পর শুরু হয় সন্ধিপুজো। এই হাঁক শুনে পাশের গ্রামগুলিতেও সন্ধিপুজো শুরুর রীতি রয়েছে।
অষ্টমীর সন্ধিপুজোর বলিদানও পঞ্জিকার সময়ানুসারে হয় না। বলিদানের সময় নির্ধারণ করেন দেবী নিজেই। প্রচলিত বিশ্বাস দেবী বলিদানের অনুমতি দিলে তবেই এখানে বলিদান দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী পা ও মাথা থেকে ফুল ফেলে দেবী অনুমতি দিলে তবে বলিদান দেওয়া হয়। পুষ্পাঞ্জলির ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম রয়েছে এখানে। শঙ্করীমাতার পুজোয় শুধুমাত্র দশমীর দিন দেবীকে অঞ্জলি দিতে পারেন গ্রামের বাসিন্দারা। তবে সরাসরি দেবীর পায়ে অঞ্জলি দিতে পারেন না। একটি বেলপাতায় মায়ের নাম লিখে তা পুরোহিতের হাতে দিতে হয়। তিনি সেটি দেবীর চরণে নিবেদন করেন। পাঁচ শতাব্দীর বেশি সময় ধরে শাঁকারিতে এই রীতি মেনেই শঙ্করী মাতার আরাধনা হয়ে আসছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.