ছবিতে দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে সিংরাি বাবা।
চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: পুজোর পাঁচটি দিন কুলটির আদিবাসী আশ্রমে ধুমধাম করে উমার আরাধনা হয়। তবে আচার অনুষ্ঠান যাই হোক না কেন, তার সবটাই হয় আদিবাসী রীতিতে। আদিবাসী সমাজের প্রধান দেবতা মারাংবুরুর উপসনার সঙ্গে এখানে উমার আরাধনার মধ্যে কোনও ভিন্নতা নেই। আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা গুরু সিংরাই বাবা নিজেই পুরোহিতের কাজ করে থাকেন। তাই বাইরে থেকে কোনও পুরোহিতকে পুজোর বরাত দেওয়া হয় না। ৩০ বছর ধরে নিজের নিয়মেই দুর্গাপুজো করে আসছেন সিংরাই বাবা। সেজন্য চণ্ডীপাঠেরও অভিনব ব্য়বস্থা করেছেন তিনি। সংস্কৃতে চণ্ডীপাঠ এখানে হয় সাঁওতালি ভাষা অলচিকিতে। রাত পোহালেই ষষ্ঠী, তাই নিয়ামতপুরের আদিবাসী আশ্রমে এখনও প্রাক পুজোর মুহূর্তে সাজসাজ রব পড়েছে।
উল্লেখ্য, নিয়ামতপুরের আদিবাসী ভক্তরা নিজেদের মতো করে মা দুর্গার পুজো করে থাকেন। চণ্ডীপাঠ দিয়েই শুরু সপ্তমীর পুজো। সিংরাই বাবা পুজোতে বসতেই ভক্তরা ডালি নিয়ে আসেন। তারপর একেএকে পুজো করে চলে যান। এমনিতেই বন-জঙ্গল প্রকৃতি পুজোয় অভ্যস্ত আদিবাসীরা। বছর তিরিশেক আগে সিংরাই বাবা নিজেই আশ্রম তৈরি করে স্ত্রী লক্ষীদেবীকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেই আশ্রমেই একে একে হিন্দুদেবদেবীরাও জায়গা করে নেন। সাঁওতালি দেবদেবীর পাশাপাশি দুর্গা, গণেশ, কালী, লক্ষ্মীও পূজিতা হন এই আশ্রমে। সিংরাই বাবার আশ্রমে দুর্গা আরাধনার মধ্যে অভিনবত্ব রয়েছে। মা দুর্গার আটচালায় থাকে বিষ্ণুর অবতার নরসিংহ। নরসিংহের মূর্তিটি থাকে কার্তিকের পাশেই। আদিবাসী বাবা সিংরাই মারান্ডির দাবি, মা দুর্গা ও অসুরের লড়াইয়ে হার জিতের বিচার করেন ওই নৃসিংহ অবতার। দুর্গাপুজো প্রচলনের আগে তিনি এরকমই এক প্রতিমার
স্বপ্ন দেখেছিলেন, তাই সেভাবেই প্রতিমা তৈরি করিয়েছেন।
এই মন্দিরে সারা বছর মা দুর্গা থাকেন। পঞ্চমীর দিন পুরনো প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে নতুন মূর্তি বসানো হয়। এখানে দশমীর বিষাদ নেই। কারণ মা দুর্গাকে রেখে দেওয়া হয় এক বছর। নবমীর দিন মন্দিরের বাইরে চলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। একপক্ষ দেবতা ও অন্যপক্ষ অসুর সাজে। অভিনব এই পুজো দেখতে দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ভিড় জমান কুলটির নিয়ামতপুরে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.