ছবিতে চৌধুরিদের দুর্গাদালান।
পুজো প্রায় এসেই গেল৷ পাড়ায় পাড়ায় পুজোর বাদ্যি বেজে গিয়েছে৷ সনাতন জৌলুস না হারিয়েও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য৷ এমনই কিছু বাছাই করা প্রাচীন বাড়ির পুজোর সুলুকসন্ধান নিয়ে হাজির sangbadpratidin.in৷ আজ রইল আলিপুরদুয়ারের চৌধুরিদের দুর্গাপুজোর কথা।
রাজ কুমার, আলিপুরদুয়ার: বাড়ির পুজো তো শুধু পরম্পরা নয়, এরসঙ্গে মিশে আছে আত্মিক টান। তাই দেশ ছাড়লেও বচ্ছরকার পাঁচটি দিনকে ভুলতে পারেননি চৌধুরিরা। এদেশেও নিয়ম মেনেই উমার আরাধনায় মাতে গোটা পরিবার। কিন্তু দেশভাগের যন্ত্রণা বুকে নিয়ে সেই আনন্দকে মাটি করতে রাজি নন কেউই। রীতি মেনে ১০৮ বছরের পুরনো শালকাঠের কাঠামোতেই মা দুর্গার প্রতিমা তৈরি হয়। মাটি আসে বাংলাদেশ থেকে। সেই ভিটের মাটি। এককথায় ময়মনসিংহ জেলার কাঁঠাল গ্রামের চৌধুরিদের ভিটের মাটি এখন আলিপুরদুয়ারের কাঁঠালতলার বর্তমান বাসভবনে আসে। সেই মাটিতেই দুগ্গা মাকে গড়েন শিল্পী।
চৌধুরিদের ন’পুরুষের পুজো। শুধু মাটিতেই নয়, প্রতিমার বিশেষত্বও রয়েছে। পূর্ব পুরুষ অনুপনারায়ণ যে রীতিতে পুজো শুরু করেছিলেন, পরম্পরা মেনে তাই-ই চলে আসছে। উমার অধিবাসে গণ্ডারের শিং, শুয়োরের দাঁত-সহ বাইশটি জিনিস দেওয়া হয়। দুর্গার সঙ্গে কালী, শীতলা, ব্রহ্মা ও গঙ্গার পুজো হয়। চৌধুরিদের এই পাঁচ পুজোয় মেতে ওঠে গোট এলাকা। ১৯৫০-এ গোটা চৌধুরি পরিবার এপার বাংলায় চলে আসে। আলিপুরদুয়ার শহরের উপকণ্ঠে কাঁঠালতলায় ছ’বিঘে জমির উপরে তৈরি হয় বাড়ি। এরপর থেকে বাড়ির মন্দিরেই প্রতিবছর দুর্গোৎসব হয়ে আসছে। ১৯৭৪-এ বাড়ির পুজো দেখতে চৌধুরিদের অতিথি হয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায়। স্ত্রী মায়া রায়কে সঙ্গে নিয়েই চৌধুরিদের পুজোতে এসেছিলেন তিনি।
এখন আলিপুরদুয়ারের বাড়িতে সাত ভাইয়ের পরিবার। ছ’বিঘেতে নিজেদের সুবিধামতো বাড়ি করে নিয়েছেন সকলে। পুজোতে শুধু সব ভাইদের হাঁড়ি এক হয়ে যায়। একসঙ্গেই চলে খাওয়াদাওয়া। বাড়ির সাত ভাইয়ের একজন পুলিন চৌধুরি বলেন, ‘কাঁঠালতলার অবিভক্ত বঙ্গদেশে বাংলার নবাব তখন আলিবর্দি খাঁ। নদিয়ার ফুলিয়ার বাসিন্দা অনুপনারায়ণকে তিনি জমিদারির সত্ত্ব দিয়ে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বুড়ি গঙ্গার পাড়ে বসতবাড়ি তৈরি করে জাঁকিয়ে বসেন অনুপনারায়ণ। সেই ভিটেতেই চৌধুরিদের প্রথম দুর্গাপুজোর শুরু। বুড়ি গঙ্গার প্লাবনে সবকিছু ভেসে যাওয়ায় দুই পুরুষ এই পুজো বন্ধ ছিল। পরে আমার ঠাকুর্দা সপরিবারে বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার কাঁঠাল গ্রামে চলে আসেন। সেখানে আমার বাবা মনমোহন চৌধুরি ফের দুর্গাপুজা শুরু করেন। ১৯৫০ সালে দুর্গাপুজোর পর আমরা এদেশের আলিপুরদুয়ারে চলে আসি। তাররপর ১৯৫১ সাল থেকে এখানেই পুজো হচ্ছে। বাংলাদেশের দুর্গা ঠাকুরের সেই কাঠামোতে এখনও এখানে ঠাকুর তৈরি হয়। আর তাতেই পুজা হয় আমাদের বাড়িতে।’ দিনে দিনে পরিবার বেড়েছে। পুজোর কয়েকদিন আমেরিকা ইউক্রেন-সহ দেশ বিদেশের আত্মীয়স্বজনরা বাড়িতে আসেন। চৌধুরি বাড়ির মন্দিরেই প্রতিমা তৈরি হয়। বাড়ির মন্দিরেই হয় দুর্গার আরাধনা। মনমোহন চৌধুরির নির্দেশে বাড়ির পুকুরেই মায়ের বিসর্জন হয়। তাই জায়গায় কম পড়লেও বাড়ির পুকুর বুজিয়ে ফেলেনি চৌধুরি পরিবার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.