Advertisement
Advertisement

Breaking News

অচলায়তন ভাঙল আহিরীটোলা যুবকবৃন্দ, রাস্তায় ফুটে উঠল পতিতাদের রোজনামচা

পুজোয় গন্তব্য হোক আহিরীটোলার এই পুজোমণ্ডপ।

Ahiritola Yuvakbrinda shows life of red light area

ছবি: অরিজিত সাহা

Published by: Bishakha Pal
  • Posted:October 8, 2018 7:12 pm
  • Updated:October 8, 2018 7:42 pm  

বিশাখা পাল: ওদের জীবনে পূর্বরাগ নেই। ওদের জীবনে অভিসার নেই। প্রেম কাকে বলে, ওরা জানে না। যদি কখনও মনের কোনও কোণে ভালবাসা উঁকি মারে, দৃঢ় হাতে সরিয়ে দেয় ওরা। কারণ ওদের ভালবাসতে নেই। ওরা যে পতিতা। তাই আশ্বিনে কলকাতা যখন অকালবোধনে মেতে ওঠে, ওরা নিজের গণ্ডির মধ্যেই থাকে। সমাজ তাদের জন্য লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছে। এত বড় কলকাতা শহরে ওদের জন্য বরাদ্দ একটা মাত্র ছোট্ট পাড়া। ওটাই ওদের পৃথিবী। তার ভিতরেই ওদের বেড়ে ওঠা। ওটাই ওদের কর্মক্ষেত্র।

[এবার পুজোয় মানসিকের কাহিনি শোনাবে বিবেকানন্দ পার্ক অ্যাথলেটিক ক্লাব]

Advertisement

নারীকে সবাই দশভূজা বলে। একা হাতে সে রাঁধে, চুলও বাঁধে। কিন্তু এই সব নারীরা সমাজে ব্রাত্য। সাধারণ মহিলাদের সঙ্গে এঁদের এক আসনে ফেলা হয় না। অথচ এঁদের জন্যই সমাজের আর পাঁচটা মেয়ে সুরক্ষিত। তা বোঝে ক’জন? এবার সেই দায়িত্বই কাঁধে তুলে নিল আহিরিটোলা যুবকবৃন্দ। থিম ভাবনায় মানস রায়। সমাজের চোখে যারা অচ্ছুৎ, সমাজ যাদের দূরে সরিয়ে রেখেছে; তারাই এবছর শামিল হবে দুর্গাপুজোয়। তেমনই ভেবেছেন শিল্পী। তাঁর সঙ্গে তাল রেখে প্রতিমা বানিয়েছেন পরিমল পাল।

[আমার দুগ্গা: দুর্গাপুজো মানেই অনিয়ম, সন্ধ্যায় ঢাকের তালে নেচে]

প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। দেবীপক্ষের সূচনা থেকেই নারীবন্দনার কাজ শুরু করে দিয়েছে পুজো কমিটির সদস্যরা। যৌনকর্মীদের শ্রদ্ধা জানাতে তাঁদেরই জীবনকাহিনি সর্বসমক্ষে এনেছে তারা। গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে এক অভিনব প্রয়াস ঘটিয়েছেন শিল্পী। ৪০০ ফুট রাস্তা জুড়ে ফুটে উঠেছে নানা রংয়ের নকশা। তবে প্রতিটি নকশাই এক একটা গল্প বলে। রাস্তায় আঁকা আছে যৌনকর্মীদের রোজনামচা। ঠোঁটে তালা এঁকে বোঝানো হয়েছে সংবিধানের মৌলিক অধিকার এখানে অলিখিতভাবে নিষিদ্ধ।

পিচের রাস্তা এখানে যেমন সেজেছে রঙের আলপনায়, তেমনই রাস্তার পাশেও রয়েছে বিভিন্ন প্রতিমূর্তি। পতিতাপল্লির স্থায়ী চিত্র ধরা পড়েছে রাস্তার দুই পাশে। ফুলের দোকান, চায়ের দোকান সবকিছুর রেপ্লিকা রাখা হয়েছে এখানে। স্পষ্ট ইঙ্গিত, নিত্যদিনে বারবণিতাদের পল্লিতে কোন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। পুজোর পাঁচটা দিন সচক্ষে সবাই দেখবে বারবণিতাদের প্রতি রাতের ইতিকথা। সমাজ পাঁচদিন দাঁড়াবে আয়নার সামনে। প্রত্যক্ষ করবে নিজেকে। জয় দত্তগুপ্তের সুর আর লোপামুদ্রা মিত্রের কণ্ঠ শোনাবে এক মন্দ মেয়ের উপাখ্যান।

পুতুল-পাট-কলসি, ত্রিধারায় ফিরে এল বিলুপ্তপ্রায় শিল্প ]

যৌনকর্মীদের শ্রদ্ধা আর সম্মানে নিয়ে তৈরি হয়েছে দুর্গাবন্দনার থিম। পর্যাপ্ত সবই রয়েছে এখানে। অভাব কি তবে শুধু যৌনকর্মীদের? কারণ তাঁরা তো শুভ কাজে ব্রাত্য। আহিরীটোলা কিন্তু তা ভাবেনি। শিল্পী মানস রায়ের ভাবনাটা একটু আলাদা। এমন এক শুভকাজে যৌনকর্মীদের উপস্থিতি বাঞ্ছনীয়। তাই পথের আলপনা আঁকার কাজে অংশ নিয়েছেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সঙ্গে যুক্ত যৌনকর্মীরাও। এখানে প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাঁদের খেলা তো শরীর নিয়ে। চিত্রাঙ্কণের তাঁরা কী বোঝে? তা জানতে হলে পুজোয় গন্তব্য হোক আহিরীটোলার এই পুজোমণ্ডপ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement