Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2023

বদলেছে অনেক কিছুই, তবু আজও ঝরা শিউলি জানান দেয় পুজো আসছে

মেলা থেকে কেনা বিশাল গ্যাস বেলুন ছিল পুজোর বালিঘড়ি

Durga Puja 2023: memories of Durga Puja festival by Somdatta Maitra। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 11, 2023 4:50 pm
  • Updated:October 13, 2023 4:53 pm  

সোমদত্তা মৈত্র: ছোটবেলা এখন ব্যাগে হঠাৎ খুঁজে পাওয়া ঝাল লজেন্সের মতো। তখন আমার পুজো শুরু হত পাশের বাড়ির বন্ধুর পোষা টিয়াপাখিকে কয়েকদিন কাছে রাখার সময় থেকে। কোয়েলদের দেশ ছিল মেদিনীপুর। এই ‘দেশ’ কথাটাও ওদের কাছ থেকেই শুনে মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমাদের দেশ কোনটা? আমাদের দেশে পুজো হয় না? তা কোয়েলরা দেশের বাড়ি যাওয়ার আগে মিঠু মিঁয়াকে রেখে যেত আমাদের তদারকিতে।

রাত্রিবেলা খাওয়ার সময় ছাদ থেকে দেখতাম শিউলি ফুলে ভরে গিয়েছে। মা বলত, “শুঁয়োপোকা আছে অনেক, হাত দিস না।” জানলা থেকে দেখতাম দূরে রাতের চাঁদ কুয়োতলার জলে টলমল করছে। টুপটাপ শিউলি ফুল ঝরে পড়ছে জলে। স্কুল থেকে ফিরে মা যে শিউলি ফুল দিয়ে পুজো করত, সেগুলো নিয়ে হাতে ঘষতাম, অল্প রং হত। মহালয়ার দিন বাবা যেত কুঠিঘাটে তর্পণ করতে। আগের দিন রেডিওতে ব্যাটারি ভরে ঝেড়েঝুড়ে রেডি। ভোর ভোর মহালয়া শোনা আর শিউলি ফুলের মালা গেঁথে দিদার ফটোর সামনে দেওয়া।

Advertisement

[আরও পড়ুন: পদ্ম নয়, ১০৮টি অপরাজিতায় সন্ধিপুজো হয় উত্তর কলকাতার এই বনেদি বাড়িতে]

আমি ছিলাম ফাঁকিবাজ দি গ্রেট। তাই যে কোনও অজুহাতেই পড়াশোনা বন্ধ করে দিতাম। পুজোর আগে কিছু ক্যাসেট কিনে তা টেপরেকর্ডারে চালিয়ে পরির মতো নেচে বেড়াতাম। বাড়ির নতুন পর্দা উড়ে গেলে দেখতাম পেঁজা পেঁজা তুলো ঘুরে ভেসে বেড়াচ্ছে। নাঃ! পুজোর আর বেশি দেরি নেই। পুজোয় কেনাকাটা বলতে ছিল শ্যামবাজার। কেনাকাটির পর ওখানে ডিম্পিতে ধোসা। আমার নিজেকে সেদিন কলকাতার রাজা বলে মনে হত। ফিরে এসে নতুন জামা আর সুপার মার্কেটের আনন্দ থেকে কেনা জুতো বিছানায় রেখে শুতাম। কী মিষ্টি ঘুম হত সেদিন!

পুজোয় (Durga Puja) একটা করে বন্দুক আর অনেক ক্যাপ। পাড়ার সবাই দুভাগে ভাগ হয়ে যেত। একভাগ থাকত টিকলুদের মাঠের এপাশে, অন্য দল ওপারে। সে এক ভয়াবহ ক্যাপ যুদ্ধ চলত। কে যে কখন জিতত এখন তা পরিষ্কার মনে পড়ে না। কিন্তু ধুলো উড়িয়ে সেই বিকেলগুলো আজকের এসি ঘরে থেকে বিকেল বুঝতে না পারা সময়গুলোকে বলে বলে গোল দিয়ে যায়।
পুজো মানেই খাওয়া দাওয়া, বাবা মার তাড়াতাড়ি ছুটি, সারা রাত প্রোগ্রাম, দিদিদের কমপ্লেক্সে ভাসান। সে রাংতা দিয়ে মোড়ানো কটা দিন। ষষ্ঠীর দিন থাকত কাছাকাছি ঠাকুর দেখা রিকশা করে। আর বোকার মতো নতুন জুতো পরার ফলে বিশাল ফোস্কা। ফেরার সময় বিশাল এক গ্যাস বেলুন নিয়ে ফিরে খাটের ধারে বেঁধে রাখতাম। ওটাই আমার পুজোর বালিঘড়ি ছিল। বেলুন চুপসে যেতে থাকলে বুঝতাম দশমী সামনে। 

[আরও পড়ুন: যিনি ট্র্যাফিক পুলিশ, তিনিই মৃৎশিল্পী! পথসুরক্ষা সামলে প্রতিমা গড়েন বাঁশদ্রোণীর সুকুমার]

অষ্টমীতে আমরা বাড়ির সকলে কাশীপুরের সর্বমঙ্গলাতে অঞ্জলি দিতে যেতাম। বুঝতাম না কিছুই।খালি জানতাম পুজো শেষ হলেই হিংয়ের কচুরি খাব। তবে সত্যি বলতে কী, বাগবাজারের ঠাকুরটা না দেখলে মনে হত পুজো যেন শুরুই হয়নি। তারপর বাবার কাঁধে চেপে কলেজ স্কোয়ার, প্যারামাউন্টে ডাব শরবত, এগরোল আর তার পর তিন নম্বর বাসে চড়ে বাড়ি। যতই চেষ্টা করতাম দিন তো আর আটকে রাখা যেত না। তাই দশমী চলেই আসত। সেদিন আমাদের বাড়িতে ঘুগনি, নারকোল নাড়ু, নিমকি সব তৈরি হত। বিকেল থেকেই মা মাঝে মাঝে প্যান্ডেলে পাঠাত, ঠিক কটায় বিসর্জন হবে জানতে। আমি ছিলাম মা’র অ্যাসিস্ট্যান্ট। তাই বরণের সামগ্রী, মিষ্টি সব আমার জিম্মায়। ভাসান ডান্স শেষে একটু রেস্ট নিয়ে বন্ধুদের বাড়ি বাড়ি বিজয়ার প্রণাম করতে বেরোতাম। মনখারাপ হলেও জানতাম আসছে বছর আবার হবে।

আজ অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে। কিন্তু সেদিন সাউথ সিটি মলের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছাতিম ফুলের গন্ধ পেলাম। বাসে বসে চোখ বুজে আসছিল। দেখলাম টুপ করে কতগুলো শিউলি ফুল পড়ল। পুজো আসছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement