রবীন্দ্রনাথ সরকার: সেকালের আশ্বিনের শারদ প্রাতে বসার ঘরের মাঝের গোল টেবিলে রাখা নতুন টেপ রেকর্ডার। তাতে ক্যাসেট ভরে আমি প্লে সুইচ অন করলাম। যন্ত্র চালু হতেই বেজে উঠল সকলের প্রিয় পুজোর (Durga Puja 2023) গান। মন মাতানো সুরেলা কণ্ঠ আর মিষ্টি কথায় সম্মোহিত করে দিল সবাইকে। লক্ষ করলাম ঠাকুমা কাঠের চেয়ারে বসে দুলছে। বাবা উদাস চোখে জানলা দিয়ে চেয়ে আছে দুরের ধূসর কাশের দিগন্তে। আর মায়ের চোখের চশমা যে কেন ঝাপসা হয়ে উঠল হঠাৎ… জানি না।
আমি ছিলাম খুদে অপারেটর। গান শেষ হলে সবাই একে একে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে শুরু হত আমার এক্সপেরিমেন্ট। বার বার ফাস্ট ফরোয়ার্ড করা কিংবা অফ-অন। চলত ক্যাসেট খুলে পরীক্ষা নিরীক্ষাও। ক্যাসেটের মাঝের অংশে আঙুল দিয়ে ঘুরিয়ে ফিতে ডানদিক বাঁদিক করে সমান করার চেষ্টা করতাম।
কালে কালে অনেক কিছুই বদলেছে। প্রতিমার রূপ থেকে শুরু করে হাল আমলের অতি আধুনিক পোশাক। ঝাঁ চকচকে মল থেকে শুরু করে অনলাইন শপিং। রেস্তরাঁর খাবারের আদবকায়দা। দলেছে মন, ভাষা আর মানুষের ব্যবহার। বদলেছে গানের ভাষা আর সুরের টেক্সচার। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ছুটে চলেছে দৈনন্দিন জীবনের চাকা।
এর মধ্যেই সেদিন চিলেকোঠার ঘর থেকে খুঁজে পেলাম আগমনি গান। সেকালের পুজোর ক্যাসেট। চশমাটা আচমকাই ঝাপসা হয়ে এল। মায়ের কথা মনে পড়ল। ট্রিনের ট্রাঙ্ক ভর্তি পুজোর গানের ক্যাসেট। হেমন্ত, আরতি, সন্ধ্যা, মান্না থেকে রফি কিশোর আর লতার অসামান্য সংগ্রহ। কালজয়ী গানের ভাণ্ডার। ক্যাসেট আজ বিলুপ্ত শ্রেণির। সিডি থেকে পেন ড্রাইভ হয়ে ব্লু টুথ, ইউটিউব… হাতে হাতে মুঠোফোন। সেকালে পুজোর গানের ক্যাসেটের জন্য মানুষ চাতকের মতো অপেক্ষা করত ফি বছর। সেই সব গান আজও শোনে বাঙালি। কিন্তু বদলেছে চিলেকোঠা, বদলেছে প্রযুক্তির ভাষা, ব্যবহারের আধুনিকতা। গান আজও বাজে, ক্যাসেট আর বাজে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.