Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga Puja 2023

হারিয়ে গিয়েছে বাবা-মেয়ের ঠাকুর দেখার দিনগুলো, বেদনা জাগায় বিজয়ার দিন

দিদার বানানো নিমকি, মায়ের হাতের নারকেল নাড়ুও হারিয়ে গিয়েছে!

Durga Puja 2023: Memories of Durga Puja Festival by Mahua Dasgupta | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 16, 2023 8:59 pm
  • Updated:October 16, 2023 8:59 pm  

মহুয়া দাশগুপ্ত: একটি কিশোরী সজল চোখে চেয়ে আছে ঘরের জানালায়! আর কিছুক্ষণ পর পাড়ার সাজানো আলোর সম্ভার নিভে যাবে। গাড়ি এসে গিয়েছে, ধুলোর মতো সিঁদুর উড়ছে আকাশে। আর মাত্র কয়েক ঘন্টা! তারপর মণ্ডপের সাজ খসে পড়বে আর শুরু হবে ভাসানযাত্রা। পুজোর কথা ভাবতে বসেই আমার কেবল মনে আসে বিজয়ার দিনটি। দুঃখবিলাসী মন কেবল হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে চায়… কেন কে জানে!

ফাঁকা মণ্ডপে লম্বা মাটির প্রদীপের সামনে চুপ করে একলা দাঁড়িয়েছি। তখন দাঁড়িয়েছি, যখন বাবা আকাশের তারা! একটা মানুষ আর একটা পুজো আমার কাছে কেমন করে একাকার হয়ে গিয়েছিল। পুজোর আগে রবি ঠাকুরের ‘পূজার সাজ’ কবিতাটি পড়তাম। জোর গলায় বলতাম, ‘আমি বিধু, মধু নই।’ অথচ মধুর মতোই লোলুপ চোখে পুজোর জামা দেখতাম। ফুলকাটা সার্টিনের জামা হলে তো কেয়াবাত! সেইসব দিনে পুজোর সকালের কেমন নতুন বইয়ের মতো গন্ধ ছিল। পুজোর ভোগের সুবাস ছিল। নতুন সাজ, অঞ্জলির ফুল, মুগ্ধ কোনো দৃষ্টি সত্যি বলতে ভেসে গিয়েছি কতবার। তরুণী বয়স জানে আশ্বিনের শারদপ্রাতে বিশেষ কারও জন্য মন অপেক্ষায় থাকত। সেইসব আশ্বিনের ভোর, পুজোর প্রতিদিন হারিয়ে গেছে এখন। নাকি আমিই হারিয়ে গিয়েছি?

Advertisement

[আরও পড়ুন: পালকি চড়ে আসেন দেবী, ভূঁইয়া গড় জমিদার বাড়ির পুজোর ইতিহাস অবাক করা]

শিউলিফুল, মহালয়া, পুজোর চারদিনের সুবাস এখন যেন রুপোলি কেশের পরিপক্কতায় একটু অন্যরকম। অথচ বাবা মায়ের সঙ্গে ঠাকুর দেখার সেইসব স্মৃতি মনের ভিতর ঝলমল করে। মনে হয় হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারব। অথচ পদ্মপাতায় জলের মতো সেসব দিন ফেরে না। তারায় ভরা রাতে বামীর মতো বলে, ‘হারিয়ে গেছি আমি।’ বাবার চলে যাওয়ার পর বহুদিন ঠাকুর দেখিনি। পুজো মানে বিজয়ার শান্ত নীরবতা— এমন ভেবেছি কতদিন! তারপর কোনও এক ষষ্ঠীর সকালে স্বপ্নে দেখেছি, একচালার দুর্গা সন্তানসন্ততিসহ আমাদের বাড়ির ছোট্ট রঙচটা দেওয়ালের ঘর আলো করে আছেন। আমি আবার হৃদয়পিদিম জ্বালিয়ে মিশে গেছি পুজোর ভিড়ে। মন্ত্রের মতো বলেছি, ‘মা আসবেন, হৃদয় সাজাও।’ বিজয়ার পর পাড়ার অনুষ্ঠানে, মিষ্টির থালায়, প্রণাম, কোলাকুলিতে বাবার হাসির ছোঁয়াচ পেয়েছি। নিজের সন্তানকে মণ্ডপে ঘোরাতে ঘোরাতে ঠিক বুঝেছি মনের পদ্মাসনে একটা সময় পর এসে বসেন পূর্বপ্রজন্ম।

একালের পুজোয় আমি হারানো দিনগুলোকে খুঁজে পাই না ঠিক! কিন্তু নতুন মুহূর্তের ফোঁড় তুলি হৃদয়ের নকশিকাঁথায়। আরেক প্রজন্মের দুচোখে পুজোর স্বপ্ন ভরাট করতে করতে যাই। ইলিউশন নয়, রিক্রিয়েট করি। তখনই বুঝি যে দিন ভেসে গিয়েছে, জীবনের নতুন ঢেউ তাকে আবার ডেকে আনে। আমিও বুঝি, দিদার বানানো নিমকি, বোঁদে, জিভেগজা, মায়ের হাতের নারকেল নাড়ু বিজয়ার শুভেচ্ছা থালার থেকে হারিয়ে গিয়েছে। পাড়ার মোড়ে পুজোর সময় বেলুনওয়ালা আসত। কালো একটা আপেল বেলুন নিয়ে খড়মড়ে জামা পরে হেঁটে আসা হারিয়ে গিয়েছে। অষ্টমিতে নতুন শাড়ি পরে মণ্ডপে দাঁড়ানোর পর কে যেন ফুল দেওয়ার অছিলায় কিশোরী মেয়ের হাত ছুঁয়ে স্বপ্ন ভরাট করতে চেয়েছিল, সেইসব দিনও আর নেই।

[আরও পড়ুন: জঙ্গলে পাওয়া পিতলের মূর্তিতেই আরাধনা, ভিন্ন রীতিতে আজও দুর্গাপুজো হয় নাড়াজোল রাজবাড়িতে]

নিজের টাকায় বাবা মাকে পুজোর জামা শাড়ি দেওয়ার উদ্দীপনা মিলিয়ে গিয়েছে কাপাসতুলোর মতো। গ্রামের স্কুলে চাকরি করতে যাওয়া শহুরে মেয়ে পঞ্চমীর সকালে কেমন মুগ্ধ চোখে মাঠ ভরা কাশফুল দেখেছিল, সেকথাও কেউ মনে রাখেনি। তবু পুজো আসে আর মনের মধ্যে থেকে সেই হারিয়ে যাওয়া মুহূর্তরা যেন ন্যাপথালিনের গন্ধ মেখে মনের গোপন তোরঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসে। আমি বুঝি ওরা নেই, ওরা মায়া! কিন্তু আমার পুজো শিউলির গন্ধে, নতুন জামায়, ঢাকের বাদ্যিতে, আলোর সাজে, বিজয়ার বেদনায় পরিপূর্ণ। হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিরা আমার মানসপ্রতিমার শুভ্র ডাকের সাজ! ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ ঠাকুর যাবে বিসর্জন’ ঢাকের বোলের মতো। অনিত্য জেনেও তাই এ আমার নিত্য পূজা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement