Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2023

আজ আর দশমীতে থালাভরা মিষ্টি এবাড়ি থেকে ওবাড়িতে যায় না

পায়ে হাত দেওয়ার লোকও ক্রমেই কমছে।

Durga Puja 2023: Memories of Durga Puja festival by Kasturi Dutta। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 12, 2023 8:14 pm
  • Updated:October 12, 2023 8:14 pm  

কস্তুরী দত্ত: তখনও আড়ম্বর আমার ছোট শহরকে ছুঁতে পারেনি। অবোধ্য থিমের বাড়বাড়ন্ত ছিল না। উৎসবকে আরও উৎসবময় করে তোলার প্রচেষ্টা ছিল নিষ্প্রয়োজন। ছোট ছোট পাড়াগুলো তখন একান্নবর্তী পরিবার। এই গলায় গলায় ভাব, তো এই গলা উঁচিয়ে ঝগড়া। পুজোর সময়ে ছোটখাটো খিটিমিটি লেগেই থাকত। তবু শরতের নির্মল আকাশের মতো ছিল বুকভরা আন্তরিকতা।

আবেগের জিওনকাঠি বোলানো ঢাকের তালে, কিশোর-আশার ক্যাসেটে, পুরোহিতের মন্ত্রে, ‘অঞ্জলি শুরু হয়ে গেছে, যারা যারা অঞ্জলি দিতে ইচ্ছুক…’ আহ্বানে হুড়মুড়িয়ে চলে যেত দিনগুলো। দশমীর দিন প্রদীপের নিভন্ত শিখার মতো বিদায় মুহূর্তের অপেক্ষা করতাম। একসময় মা দুর্গা লরিতে উঠতেন। শূন্য গলির বিষণ্ণ স্তব্ধতা রেখে চলে যেতেন। মনে হত যেন টলটলে চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। ভাই জন্মানোর আগের দিন মা যখন নার্সিংহোমে গেল, আমি এভাবেই মায়ের দিকে তাকিয়েছিলাম।

Advertisement

[আরও পড়ুন: অষ্টমীতে ধুনো পোড়ানো, নবমীতে কাদা খেলার রীতি! ২৬৫ বছরে পড়ল রানাঘাটের পালবাড়ির পুজো]

পাশের বাড়ির কাকিমা কয়েক দিন আগেই কুণ্ডু জেঠিমার আড়ালে ফিসফিস করছিল, ”বউকে তো খুব শাসন করে। যা দজ্জাল!” কাকিমা এখন থালায় ঘুগনি, নাড়ু, নারকোলের মিষ্টি, নিমকি সাজিয়ে কুণ্ডু বাড়িতে যাচ্ছে। সন্ধিপুজোয় বেলা জেঠিমা হুমড়ি খেয়ে প্রদীপ জ্বালাচ্ছিল, সুযোগ পায়নি বাবলুদার বউ। গজগজ করছিল, ”খুব মাতব্বর হয়েছে!” সে মুখে সিঁদুরের আভা নিয়ে, গায়ে আঁচল দিয়ে বেলা জেঠিমার পা ছুঁয়েছে। বেলা জেঠিমার হাত তার মাথায়।

কুণ্ডু বাড়ির ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে বেরোয়। এবাড়ি, ওবাড়ি প্রণাম করলেই প্লেট ভর্তি মিষ্টি। তবে বিশেষ আকর্ষণ মিত্র কাকিমার হাতে তৈরি গজা। এদিকে মাও থালা সাজায়। আমি হাত লাগাই আর ভাবি, পুজো শেষ। আবার স্কুল, আবার পড়াশোনা। এতে আনন্দের কী আছে!
বাবা শান্ত প্রকৃতির মানুষ। নিজের মত প্রকাশ করে না। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলে, ”তোমরা যা ভালো বোঝো, করো না।” বাবাকে পাড়ার কাকু-জেঠুদের সঙ্গে কোলাকুলি করতে দেখে ভাইয়ের গোঁসা হত, সে বুঝি কোলাকুলি করতে পারে না! ওরা ভাইয়ের সঙ্গে ছেলেভোলানো কোলাকুলি করত। অভিমান তো আমারও হত। মেয়েরা কোলাকুলি করে না কেন!

[আরও পড়ুন: এত বড়! ৪১ ফুটের দুর্গা প্রতিমায় চমক দিতে চলেছে উত্তরবঙ্গের এই ক্লাব]

এখন পুজোর পুঁজি যেমন বেড়েছে তেমনই বেড়েছে চমক। বিয়ে করে আমি কলকাতায় থাকি, পুজোর (Durga Puja) দু-একদিন পাড়ায় যাই। দশমীতে থাকা হয় না। পাড়ার ছেলেমেয়েরা অনেকেই বাইরে থাকে, ওদের সঙ্গে দেখাও হয় না। কুণ্ডুদের বাড়ি ভেঙে ফ্ল্যাট উঠেছে। বাইরের লোক এসেছে। পাড়ায় মেশে না তারা। নিজেরা আলাদা পুজো করে। বেলা জেঠিমা নেই। মিত্র কাকিমার স্মৃতি লোপ পেয়েছে। জেঠু-কাকুদের অনেকেই মারা গিয়েছে, অনেকেই অথর্ব। অনেকে পুজোর সঙ্গে থাকলেও নতুন প্রজন্মের কাছে অকেজো। বাবা ঘরকুনো হয়ে পড়েছে। এখন আর দশমীতে (Vijayadashami) থালা ভর্তি মিষ্টি এবাড়ি থেকে ওবাড়িতে যায় না। পায়ে হাত দেওয়ার লোকও কমেছে। সেই রেওয়াজ প্রায় বিলুপ্ত।

পাড়াটা কেমন যেন ছন্নছাড়া, ভাঙা পরিবারের মতো। নাকি নতুন পরিবার গড়ছে! ভাঙাগড়ার খেলা নিরন্তর চলতেই থাকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement