Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga Puja 2024

পুজোর স্মৃতিতে উঁকি দেয় ছাতিম ফুলের ঘ্রাণ! ঘরে তৈরি বিজয়ার খাবার

প্রতিবছর পুজোর সময় কীভাবে যেন পুরনো হয়ে যাওয়া স্বাদগ্রন্থিরা জেগে ওঠে!

Durga Puja 2024: Purba Das shared Durga Puja memories
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 8, 2024 8:18 pm
  • Updated:October 8, 2024 8:31 pm  

পূর্বা দাস: খাওয়াদাওয়ার কথা যখন উঠলই, মাক্কালীর দিব্যি, আমার পুজোর প্রাইম আকর্ষণ ছিল নাড়ুতে। আহা, কতরকম নাড়ু যে হত সে সময়। নারকোলের নাড়ুরই বাহার কত! জাস্ট কুড়িয়ে নিয়ে গুড়ের পাক বা চিনির। আবার কোড়ানোর পর শিলে পিষে তাতে দুধ ঢেলে আরও নরম করে, সে নাড়ুর স্বাদ যে না পেয়েছে, তার ছাই কিসের পুজো? এরপর তিলের নাড়ু। ভীষণ গরম করে জ্বাল দেওয়া গুড় বা চিনির মধ্যে বেছে ধুয়ে পরিষ্কার করা তিলগুলো গড়িয়ে দিয়ে গড়তে হয়।

শরতের শেষবেলায় আমাদের এঁদো মফসসলে ছাতিম ফুলের গন্ধ ছাড়ত। গন্ধটা অনেকটা ওই নারকেলের পাক দেওয়া গন্ধের মতো। এখনও এই বেহদ্দ শহরের মধ্যে কোনও এক ছাতিম গন্ধ ছড়ালে আমাদের সেই তিনকোণা উনুন জ্বলা রান্নাঘরে ঢুকে পড়ি সাঁঝবেলায়।

Advertisement

পুজোর সময় আমাদের একান্নবর্তী সংসারের চৌহদ্দি ছড়িয়ে যেত পাড়ার সব বাড়ির কোণে, উঠোনে। ছোটরা, বড়রাও ছড়িয়ে যেত সবখানে।কাকু-পিসিরা কোন বেলায় কার বাড়িতে খাচ্ছে বোঝা কঠিন! পিলু কাকু দুপুরে এলে না খাইয়ে ছাড়ছে না ঠাম্মা। রাতে আমাদের বাড়িতে লুচি-ছোলার ডাল হলে মিনাদি আর সুব্রত আসবেই আসবে। পুজোর তিন দিনে এত ঘটনার ঘনঘটা চলত ওই একরত্তি বেলাতেও, তখন খাবারদাবারও তুচ্ছ। আসল খাওয়া তো শুরু ঠাকুর জলে পড়ার পর। কার বাড়িতে কী কী হচ্ছে, এসব খবরের জন্য রীতিমতো ভাড়া করা গুপ্তচর থাকত আমাদের। এক টাকার ঝাল কচুভাজা কিংবা একটা গোটা পপিন্সের রোল ভেট দিয়ে তবেই!

আমাদের বাড়িতে বিজয়ায় কখনও বাইরের খাবার আসতে দেখিনি। রক্তধারায় বয়ে চলা আমার কনকপ্রভা ঠাকুরমাকে মনে রেখে এখনও আমি কুচো নিমকি ভেজে ফেলি এক কৌটো। চন্দ্রপুলি বানাই ক্ষীরের পুর ভরে। মুগের ডালের বরফি আর নাড়ু বানিয়ে রাখি আগেভাগেই। রান্নার মেয়েটি সুন্দর মশলা দিয়ে নিরামিষ ঘুগনি বানিয়ে দেয়। উপরে ছড়িয়ে দিই জিরে, লঙ্কা গুড়ো আর ধনেপাতা কুচি। 

যা পারি না, কখনো চেষ্টাও করিনি, অথচ প্রতিবছর বিজয়ায় কেমন করে যেন আমার পুরনো হয়ে যাওয়া স্বাদগ্রন্থিরা লুকিয়ে সেই তেকোণা উনুনের রান্নাঘরে চুপিসারে ঢুকে খুঁজে বের করে আনে তাদের। নাম বলতে এখন লজ্জা করছে। ওদেশি বলে গাল দ‍েন যদি! তবে খুঁজে পেলে একখান আউল‍্যাঝাউল‍্যা খাইয়া দ‍্যাখবেন কত্তা, বিলক্ষণ স্বাদ আছে। লুচির মতোই ময়দা মেখে একটু লম্বা করে বেলে নেওয়া। তারপর মাপে মাপ চার পাঁচটা দাগ টেনে দেওয়া ছুরি দিয়ে। অতঃপর পুরো জিনিসটা লম্বালম্বি পাকিয়ে নিয়ে ছাঁকা তেলে ভেজে তোলা। না, এখনও শেষ না। তারপরে তাকে হালকা রসাচ্ছাদিত করতেই হয়। 

আরেকজন ছিলেন। খরমুজা। নারকেল মালার পরিধি বরাবর অদ্ভুতভাবে কোড়ানো হত হাতকুড়ুনি দিয়ে। তারপর চিনিতে পাক দিয়ে তাকে হাতে করে বেশ চারকোণা কিউবয়েডের মতো তৈরি করে রাখা হত। অতিথি এলে গরম গরম ছাঁকা তেলে ভেজে… উলস! 

এখন আর বিজয়ায় কজনই বা আসে বাড়িতে! আমিই কি আর যাই কোথাও?

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement