রমেন দাস: ”দুর্গা আমার গোপালকে এনে দেবে!”, দেবীর বোধনের দিন সদ্য বিসর্জনের স্মৃতি আঁকড়ে এই প্রশ্নেই সরব হচ্ছিলেন এক মা! পুজোর কোলাহলের মধ্যেও যে মায়ের আর্তনাদেই ঘুম ভাঙে গোটা পরিবারের! গোপাল আসেননি। অকালে স্বপ্ন শেষ হয়েছে তাঁর। তাই পুজো তো বটেই কোনও উৎসবেই আর মন বসে না ওঁদের। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন হস্টেলের (Jadavpur University Main Hostel) সেই ভয়াবহ রাতের পর বিতর্কের জল গড়িয়েছে একাধিক। প্রশ্ন উঠেছে বারবার। এক নাবালকের অকাল মৃত্যুতে (JU Student Death) আলোচনার টেবিলে তুফান উঠেছে নিরন্তর। কিন্তু ওঁর পরিবার?
নদিয়ার (Nadia) বগুলার কলেজপাড়ার ধর্মবাড়ি এখন প্রায় ‘ঠাকুরহীন’। সন্তান হারানোর শোকে নিজের বাড়িতেই আর আসেন না ওই ছাত্রের বাবা, মা, ভাই। রানাঘাটের রথতলায় ছাত্রের মামার বাড়িতে বাড়িতেই দিন কাটছে ওঁদের। তবুও সেখানেও রয়েছে অন্ধকার! ছেলে হারিয়ে শোকে পাথর মায়ের আর্তনাদ ঘিরে রয়েছে ওঁদেরও। তবুও পুজো এসেছে। উৎসবের আবহেই ফের উঠে আসছে সেই শোকের কথায়।
কেমন কাটছে ওঁদের পুজো (Durga Puja 2023) ? খানিকটা অস্বাভাবিক প্রশ্নে ওই ছাত্রের বাবা বলছেন, ”সব শেষ! পারছি না আর সহ্য করতে। যে ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম আমরা। তাঁকে ছেড়েই প্রথম পুজো কাটবে আমাদের। আমার স্ত্রীর কান্না চোখে দেখা যায় না। কী করব বুঝতে পারি না। কোন ওষুধে এর মুক্তি বলতে পারেন!”
বগুলার (Bagula) ছেলেটির ইচ্ছা ছিল কলকাতার (Kolkata Durga Puja) পুজো দেখার । কিন্তু সে আর হল কই! ওঁর বাবা বলছেন, ”কলকাতার কেয়াতলা রোডে ওর (মৃত ছাত্রের) এক মামা থাকেন। এবার সেখান থেকে কলকাতার দুর্গাপুজো দেখবে বলেছিল। ও তো কোনও দিন এমন পুজো দেখার সুযোগ পায়নি। কিন্তু সে আর হল কই!”
বাংলা বিষয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের বাবা বলছেন, ”কান্না আসে সবসময়। চোখের জল শুকিয়ে যায়। আর কিছুই ভালো লাগে না। পুজো এসেছে। ফের চারিদিকে উৎসব। মনে হচ্ছে কোথাও পালিয়ে যায়! ওকে ছাড়া কীভাবে বাঁচব বলুন তো!” দলা পাকানো গলা আর আর মায়ের হাহাকারেই পুজো কাটছে ওঁদের। ছাত্রের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ভাই বলছেন, ”দাদা ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না। এবার পুজোয় বেরোব না। পড়াশোনা করতেও আর ভালো লাগে না!”
শোক ভুলতে সন্তানহারা মায়ের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ওষুধ। তিনবার ওষুধ নেওয়ার পরেও মায়ের কান্নায় আজও চমকে ওঠেন প্রতিবেশীরা। ছাত্রের বাবা বলছেন, ”কাজে যাচ্ছি রোজ। ইশ্বরে আর বিশ্বাস নেই আমার স্ত্রীর। আমি পুজো করি। কিন্তু কার পুজো? কীসের উৎসব? যে ভগবান আমার ছেলেকেই রাখতে পারলেন না!” অকালে স্বপ্ন হারিয়েছে এক প্রতিভার। কবে বিচার, জানেন না কেউ। তবুও ছাত্রের বাবার আশা, ”মা দুর্গা আমার ছেলের হত্যাকারীদের বিচার করুন। শাস্তি হোক ওদের।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.