Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2024

পুজো স্পেশাল মিহিদানা, সাদামাটা ছোট মিষ্টির দোকানেই স্বাদ বেশি

বিজয়াতে নাড়ু আর কুচো নিমকির পাশে মিহিদানা থাকত স্বমহিমায়।

Durga Puja 2024 memories of durga puja festival by Arindam Adhikary
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:September 29, 2024 8:40 pm
  • Updated:September 29, 2024 8:41 pm

অরিন্দম অধিকারী: আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁয়। পুজোর স্মৃতিও এই ছোট্ট মফস্‌সল শহরটাকে ঘিরেই। একুশ শতকের প্রথম কয়েক বছর পর্যন্ত সেখানকার পুজোর ধরনটা ছিল অতি সাদামাটা। বাঁশ ও কাপড়ের প্যান্ডেল, সাবেকি মূর্তি, ডাকের সাজ, টিউব লাইটের আলোকসজ্জা আর মার্কামারা পুজোর গান। পুজোর খাবারও ছিল অতি সাধারণ। কুইজিন ভিত্তিক রেস্তরাঁ, ফাইন ডাইনিং রেস্তরাঁ, এসবের অস্তিত্ব ছিল না তখন। রাস্তার ধারের রোল, চাউমিন, ভেজিটেবল চপই ছিল পুজোর মূল আকর্ষণ। একটু পরের দিকে হল বিরিয়ানির চল। বন্ধুরা মিলে ফি বছর নবমীর রাতে বিরিয়ানি খাওয়া ছিল বাঁধা। সেই বিরিয়ানির স্বাদ ও মান যে খুব আহামরি ছিল তা নয়, তবে ওসব বিচার করার বয়স বা অভিজ্ঞতা তখনও হয়নি। মিঠা আতর আর গোলাপজলের তীব্র গন্ধেই মন মাতাল হয়ে যেত আমাদের।

পুজোর স্পেশাল খাবার বলতে যার কথা সবার আগে আমার মাথায় আসে সেটা হল মিহিদানা। আমাদের বনগাঁতে পুজোর সময় ছাড়া মিহিদানা বানানোর প্রচলন ছিল না তেমন। কৃষ্ণনগরের ঘিয়ের গন্ধওয়ালা মিহিদানা বা খাস কলকাতার মতিচুর স্টাইল ঝুরঝুরে মিহিদানা নয়, বনগাঁর মিহিদানা ছিল রসালো, একটু লালচে ধরনের, মাঝে মাঝে উঁকি দিত একটি-দুটি নিখুঁতি। হাতে করে খেলে হাত চটচট করত রসে। কোনও এক আশ্চর্য কারণে বড় বড় মিষ্টির দোকানের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ছোট বা মাঝারি মিষ্টির দোকানগুলোতেই মিহিদানার স্বাদ হত বেশি।

Advertisement

মনে পড়ে বনগাঁ স্টেশনের লাগোয়া দুটি মিষ্টির দোকানে এ সময় দুর্দান্ত মিহিদানা পাওয়া যেত। অষ্টমীর দিনে লুচি আর ছোলার ডালের পাশে মিহিদানার অবস্থান ছিল বাধ্যতামূলক। পর পর চারখানা লুচি ছোলার ডাল দিয়ে খেয়ে স্বাদবদলের জন্য খেতেই হত লুচি-মিহিদানা। সারা রাত ধরে ঠাকুর দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়লেও মিহিদানাই ছিল ভরসা। রাস্তার ধারের ছোট্ট মিষ্টির দোকানগুলোয় পাওয়া যেত শালপাতায় করে মিহিদানা। খেলেই পায়ের জোর ফিরে আসত আবার।

বিজয়াতে নাড়ু আর কুচো নিমকির পাশে মিহিদানাও থাকত স্বমহিমায়। সেই মিহিদানার রস নিমকিতে মিশে এক অনবদ্য নোনতা মিষ্টি স্বাদের সৃষ্টি হত। ষষ্ঠী থেকে শুরু করে কালীপুজো পর্যন্ত মিহিদানা ছিল আমাদের বাড়ির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সে অপূর্ব স্বাদ আজও আমার জিভে লেগে আছে। এখনও দুর্গাপুজো মানেই আমার কাছে মিহিদানা ।

আজ প্রায় দশ বছর পরেও মিহিদানাকে অবলম্বন করে ছোটবেলার পুজোর স্মৃতিতে ডুব দিতে ভালো লাগে। বহু বছর হল পুজো কাটে প্রবাসে। কলকাতা থেকে কেউ সেসময় এলে আমার একমাত্র আবদার থাকে মিহিদানা নিয়ে আসার। একটুখানি  মিহিদানা মুখে দিয়ে  ফিরে যাই ছোটবেলার সেই দিনগুলোতে। মনে পড়ে ক্যাপ-পিস্তল আর নতুন জামা-প্যান্টের কথা। সে যেন এক অন্য জীবন!

সম্ভবত এই নস্টালজিয়া অক্ষত রাখতেই বছরের অন্য সময় সুযোগ হলেও মিহিদানা খেতে মন চায় না। ঠিক মহিষাসুরমর্দিনী-র মতো, “আশ্বিনের শারদপ্রাতে”-ই যা কেবল শোনার। কিংবা যেন শিউলি। শরতের ‘হিমের পরশ’ পেলেই যার সুগন্ধ নাকে আসে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement