Advertisement
Advertisement

Breaking News

Durga Puja 2024

ঠাকুমার তৈরি সেই ডাল পাতুরি, মুখে দিলেই আলো হয়ে যেত পুজোর দিনগুলো

অল্প আয়োজনেই দারুণ স্বাদ।

Durga Puja 2024 memories by Sukla Das Majumder
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 6, 2024 8:47 pm
  • Updated:October 7, 2024 4:38 pm  

শুক্লা দাস মজুমদার: শরতের অনুভূতি ভোরের আলো ফোটার মতো। ঘাসের উপর জমা হওয়া শিশিরবিন্দুতে ফিরে ফিরে আসে ছোটবেলার স্মৃতি। ঠাকুমার গায়ের গন্ধ। বাল্যবিধবা ছিলেন আমার ঠাকুমা নির্মলা মজুমদার। ওপার বাংলা থেকে আনা স্বাদের সমাহার ছিল তাঁর হাতে। এমনই এক স্বাদ কচু দিয়ে ডাল পাতুরি। অল্প আয়োজনেই দারুণ স্বাদ। পুজোর দিনগুলিতে তাঁর হাতে তৈরি সেই পাতুরি মুখে দিলেই চারপাশ আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠত যেন!

তৈরি করার ঘণ্টা দুয়েক আগে জলে ডাল ভিজিয়ে রাখতে হবে। তার পর কাঁচা লঙ্কা দিয়ে মানকচু মিক্সিতে পেস্ট করে নিতে হবে। এবার ভেজা ডাল ছেঁকে তুলে নিয়ে হয় বেটে নেওয়া, নয়তো মিক্সিতে পেস্ট করে নেবেন। এই মিশ্রণ একটা বাটিতে নিয়ে তাঁকে কাঁচালঙ্কার কুচি, চাইলে পিঁয়াজ কুচি, মাপ মতো নুন-হলুদ দিয়ে মেখে নিতে হবে। মিনিট দশেক রেখে দিন। এবার পরিষ্কার কলাপাতা নিয়ে তাতে একটু একটু করে মিশ্রণ দিয়ে পাতা মুড়িয়ে দিন। চাটুতে এপিঠ-ওপিঠ করে তা তেল ছাড়াই ভাজতে হবে অল্প আঁচে। কলাপাতার উপরের অংশ পুড়ে যাবে। কিন্তু ভিতরের ডাল পাতুরি ততক্ষণে একদম রেডি।

Advertisement

এই রান্নাটা হলেই বাবার চোখমুখ খুশিতে ভরে যেত। কয়েকটা পাতুরি তো ভাত খাওয়ার আগেই ভ্যানিশ হয়ে যেত। ঠাকুমা বসতেন নিজের গোল থালাটায় ভাত নিয়ে। পাশে ডাল পাতুরি আর মাছ। হ্যাঁ, সে যুগের বাল্যবিধবা হয়েও মাছ খেতেন ঠাকুমা। নিজের জীবন নিজেই তৈরি করেছিলেন, তাই হয়তো কাউকে কৈফিয়ত দিতেন না। ঠাকুমা বলতেন, ‘আমি তো আর তোদের মতো লেখাপড়া জানি না।’ কিন্তু তিনি আমার দেখা অন্যতম আধুনিক মনস্কা মহিলা ছিলেন। এক শক্তির আধার। মাতৃ আরাধনার সময় এলেই তাঁর দৃপ্ত মুখটা যেন বেশি করে মনে পড়ে যায়।

একার হাতে ছেলেকে মানুষ করেছেন। একটা দেশ ছেড়ে এসে সম্পূর্ণ অচেনা একটা দেশে নিজের আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন। সামান্য জমিতেই বাড়ি তৈরি করেছেন। ঠাকুমার কাছে মাঝেমধ্যেই গল্পের আবদার করতাম। একটা গল্প খুব বলতেন তিনি। আমাদের পুরনো বাড়ির পাশে একটা বাঁশবাগান ছিল। সেই জায়গা নাকি ডাকাতদের আড্ডা ছিল। বাবার তখন কলকাতার অফিস থেকে আসতে অনেক দেরি হত। ঠাকুমা বাড়িতে একাই থাকতেন। কিন্তু ভয় তিনি পেতেন না। আশপাশে মানুষের পায়ের শব্দ হতেই বাঙাল ভাষায় হাঁক পাড়তেন, ‘কেডা রে… ওইহানে কেডা যায়?’ ডাকাতরা নাকি জবাবে বলত, ‘মাসিমা! আপনার কিছু হবে না। বাইরে বেরবেন না।’ এখানেই শেষ হত কথোপকথন।

পুজোর চারটে দিনের একদিন ঠাকুমার জন্য বরাদ্দ থাকত। রিকশা বা ভ্যানের বন্দোবস্ত করে নিতাম। ঠাকুমা সারাজীবন সাদা থান পরেছেন। ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আগে সবচেয়ে বেশি সাদা থানটা বের করে নিতেন। আঁচলে বাঁধা টাকা। পাড়ার কয়েকটা প্যান্ডেল, একটা বাড়ির পুজো আর প্রণবকন্যা আশ্রমের পুজো দেখাতে নিয়ে যেতাম। প্রত্যেকটা জায়গায় গিয়ে ভক্তিভরে নমস্কার করতেন। বাইরের কিছু খেতেন না ঠাকুমা। বাড়ি ফিরে নিজের মালা নিয়ে বসে পড়তেন। এখন আর এই ডিউটি নেই। আছে শুধু স্মৃতি। মানুষ হারিয়ে যায়, স্মৃতি থেকে যায় একান্ত আপন হয়ে। স্মৃতির স্বাদ কি ডাল পাতুরির মতো? বোধহয় তার চেয়েও বেশি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement