Advertisement
Advertisement
Durga Puja

বিসর্জন হয়েছে প্রিয় জলঙ্গির! দশমীর ভাসান কেবলই স্মৃতি

বাকি দিনগুলিকে ছাপিয়ে যেত দশমীর আনন্দ।

Durga Puja 2023: Memories of Durga Puja festival by Piyali Pramanik। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 18, 2023 3:45 pm
  • Updated:October 18, 2023 3:45 pm

পিয়ালি প্রামানিক: বাড়ি থেকে বেরতেই এক ঝলক ঠান্ডা বাতাস ঝাঁপিয়ে পড়ল চোখে মুখে। সবে রাতভর ঘুম সেরে জাগছে আমার শহর। এই সময় কী এক মায়াবী নরম আলোয় মোড়া থাকে চারিদিক! এক পড়শির বাগানে এক শিউলি গাছ। গাছের থেকেও বেশি ফুল মাটিতেই ছড়িয়ে। এমন সুবাসিত আমন্ত্রণ উপেক্ষা করি সাধ্য কী! মা আসছেন।

শিউলির সুবাসে ভর করে পিছিয়ে গেলাম অনেকগুলো বছর আগে। আমার হারানো প্রাপ্তি নিরুদ্দেশের দেশে। জলঙ্গিপারের ছোট্ট একটা গ্রাম। ততোধিক ছোট বারোয়ারী তলায় পুজোর আয়োজন। ‘নেই আভরণ নেই কোনও ধন’ ! কেবল প্রাণের পরশে উছলে উঠত গোটা গ্রাম। ষষ্ঠীর দিন থেকে দশমী পর্যন্ত গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আলপনা দেওয়া হত। গ্রামের রাস্তায় কোনও বৈদ্যুতিক আলো ছিল না সে সময়। কিন্ত উৎসবমুখর মানুষজন দিব্যি আঁধার পেরিযে পৌঁছে যেত মণ্ডপে। আমাদের শিবু ঢাকি কী যে সুন্দর ঢাক বাজাত! তার ছোট ছেলেটা কাঁসর বাজিয়ে বাবাকে সঙ্গত করত। প্রায় নিরিবিলি একটা গ্রামে যেন প্রতিধ্বনিত হত ‘ঠাকুর থাকবে কতক্ষণ…’

Advertisement

[আরও পড়ুন: যাচ্ছেন না শাহ, নাড্ডা কি যাবেন সুকান্তর পুজোয়? চর্চা বিজেপির অন্দরে]

অষ্টমীর সকালে ভোর থাকতে উঠে ঘর উঠোন নিকিয়ে দরজার মাথাতে দিতে হত গিরিমাটির ছোপ! ঠাকুমার কড়া নির্দেশ মায়ের চক্ষুদানের আগেই যেন সব পরিপাটি করে গিরিমাটি দেওয়া হয়। ষষ্ঠী,সপ্তমী,অষ্টমী, নবমীর আনন্দকে ছাপিয়ে যেত দশমীর দিনের আনন্দ।
সেজে উঠত আমার জলঙ্গির দুই পার। আশপাশের চারটে গ্রামের সব ঠাকুর সেদিন জলঙ্গির বুকে ঘুরে তবে বিসর্জন! শুধু যে মা দুর্গা চার ছেলেমেয়েদের নিয়ে নৌকাতে চাপতেন তা নয়। আমাদের গ্রামের সব মায়েরাই তাদের ছেলেমেয়েদের নিয়ে অন্য নৌকাতে চেপে মায়ের নৌকার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতেন।

কত নৌকা! রঙিন পোশাক আর খুশিভরা মুখের ঝলকানিতে তোলপাড় হত জলঙ্গি! বর্ষার ঠিক পর পর ই জলঙ্গিও থাকত ভরভরন্ত। সন্ধ্যার জলঙ্গির বুকে অবগাহন করতে করতে মা ফিরতেন কৈলাসে। হয়তো বা জলঙ্গির জলে মিশে যেত তাঁর বিদায়-অশ্রু। সবাই সেই নদীর জল মাথায় ছিটিয়ে বাড়ি ফিরতাম। আসছে বছর আবার হবে এই বিশ্বাস বুকে ভরে।

[আরও পড়ুন: Cartoonist Amal Chakraborty: নিভে গেল ‘অমল আলো’, প্রয়াত কিংবদন্তি কার্টুনিস্ট অমল চক্রবর্তী]

কেমন করে যেন হারিয়ে গেল সোনার খামে মোড়া সেই দশমীর দিনগুলো। আজ বোধন থেকে নবমীর দিনগুলো হয়ত উৎসবের আবহে কাটে। কিন্ত দশমীর দিনটির চিরতরে বিসর্জন হয়ে গেছে। সেই ভরন্ত জলঙ্গিও আজ মজা নদী। কোনও নৌকা আর ভেসে থাকে না সেখানে। ঠাকুমাও নাড়ুর কৌটো নিয়ে কবেই চিরতরে হারিয়ে গিয়েছেন! বিজয়ার প্রণাম জানাবার পাগুলো আজ আর নেই। পিওন দাদু তার চিঠির থলি নিয়ে উধাও। তাই বিজয়ার প্রণাম জানিয়ে লেখা চিঠিগুলো আর ডাকে ফেলা হয় না। হারিয়ে ফেলা শৈশব ,হারিয়ে ফেলা জলঙ্গির মতো আমার সেই দশমীর দিনটিও চিরতরে হারিয়ে ফেললাম।’আসছে বছর আবার হবে’ একশোবার বললেও কেমন হাহারবে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে জলহীন জলঙ্গির এপার ওপারে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement