Advertisement
Advertisement

Breaking News

Bonedi Barir Durga Puja 2024

বন্যায় ভেসে আসা কাঠের কাঠামোয় প্রতিষ্ঠিত দেবী, পারুলিয়ার জমিদার বাড়ির পুজো ৩৫০ বছরের

সেবার বন্যার জলে বাড়ির দালানে ভেসে আসে পেল্লাই মাপের একখণ্ড কাঠ। সেই কাঠ থেকেই তৈরি হয় দেবী দুর্গার কাঠামো।

Bonedi Barir Durga Puja 2024: This puja in Diamond Harbour is 350 years old
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 28, 2024 9:39 pm
  • Updated:September 30, 2024 7:12 pm  

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: জমিদারি প্রথা বিলোপের সঙ্গে সঙ্গেই বিদায় নিয়েছে জমিদারি। প্রায় ৩০ হাজার বিঘে জমিদারি আজ প্রায় কপর্দকশূন্য। তবুও ৩৫০ বছর আগের সেই রীতি মেনে আজও উমার আরাধনা চলে ডায়মন্ড হারবারের পারুলিয়ায় মণ্ডল পরিবারে।

অবিভক্ত ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে তৎকালীন জমিদার কালীকুমার মণ্ডল। কলকাতার চেতলায় গঙ্গাপাড়ে ছিল মণ্ডলদের বিশাল বাড়ি, মন্দির। গঙ্গাসাগর থেকে রায়দিঘি, ফলতা, ডায়মন্ড হারবার-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছিল জমিদারি। কথিত আছে, ডায়মন্ড হারবারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তখন বন্যার জলের তলায়। সেই বন্যার জলে পারুলিয়া গ্রামের মণ্ডলদের জমিদার বাড়িতেও জল থই থই। বন্যার জলে বাড়ির দালানে ভেসে আসে পেল্লাই মাপের একখণ্ড কাঠ। সেদিন রাতেই মণ্ডল পরিবারের তৎকালীন বংশধর জমিদার কালীকুমার মণ্ডলের বাড়িতে ভেসে আসা কাঠেই কাঠামো তৈরি করে মায়ের পুজো(Bonedi Barir Durga Puja 2024) শুরুর স্বপ্নাদেশ পান।

Advertisement
পারুলিয়ার মণ্ডল জমিদার বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

সে আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগের কথা। মণ্ডল বাড়িতে উমার আরাধনার সেই শুরু। শোনা যায়, জমিদার কালীকুমার মণ্ডলই তৎকালীন সময়ে অবিভক্ত ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার সংলগ্ন এলাকায় প্রথম পুজোর আয়োজন করেন দুর্গতিনাশিনী দেবীর। কালের নিয়মে জৌলুস কমলেও জমিদার বাড়িতে আজও চলছে সেদিনের সমস্ত রীতি মেনে দুর্গাপুজোর আয়োজন। পরিবারের প্রবীণা গৃহবধূ উষারানি মণ্ডল জানাচ্ছেন, বিয়ে হওয়ার পর মণ্ডল বাড়িতে এসে পুজোয় যে জাঁকজমক তিনি দেখেছেন, আজ আর তার কিছুই নেই। এলাকায় তখন বিদ্যুৎ না থাকায় হ্যাজাকের আলোয় আলোকিত হতো ঠাকুরদালান ও আশপাশ চত্বর। আমন্ত্রিত ইংরেজ সাহেবদের পুজোর সময় এই বাড়িতে নিয়ে আসতে জমিদার বাড়ির পালকি ঘর থেকে বেরত পালকি। জমিদারির অধীন দূর-দূরান্ত থেকে প্রজারাও আসতেন জমিদার বাড়িতে। পুজোর কয়েকটা দিন সাধারণ মানুষের ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠত মণ্ডল বাড়ি।

জমিদার বাড়ির সামনের সেই পালকি ঘরের আজ ভগ্নদশা। দুর্গাদালানের একদিকে ছিল বাড়ির মহিলাদের যাতায়াতের আলাদা পথ। দুর্গাদালানের সেই পথেই দেবীর পুজোয় যোগ দিতেন পরিবারের মহিলারা। সেসব এখন অতীত। সময়ের স্রোতে হারিয়েছে জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজোর জৌলুসও। ২৭ বছর আগে মণ্ডল বাড়িতে বধূ হয়ে এসেছেন অপর্ণা দেবী। তিনি জানান, শাশুড়ি মায়ের মুখে শুনেছেন পুরনো দিনের পুজোর সেই জৌলুষের নানা কথা। শুনেছেন, আগে পুজোয় বড় বড় ডালা বসতো। দুই কুইন্টাল করে চালের খিচুড়ি ভোগের আয়োজন হত ষষ্ঠী ও অষ্টমীতে। গোটা গ্রামের মানুষ ওই দুদিন মণ্ডল বাড়িতে এসে একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করতেন। তবে আজও দশমীতে সিঁদুর খেলায় গোটা গ্রামের মহিলারা মণ্ডল বাড়িতে জড়ো হয়ে এক অদ্ভুত আনন্দে মাতেন। বাড়ির পুজোর এত আনন্দ ছেড়ে বাইরে ঠাকুর দেখতে যেতে যেন তাই আর মন চায় না তাঁদের।

পরিবারের প্রবীণ সদস্য শৈবাল মণ্ডলের কথায়, পুজোর আয়োজন কমলেও ৩৫০ বছর আগের স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী উমার আরাধনা বন্ধ হয়নি কখনওই। কারণ কথিত আছে, স্বপ্নাদেশই নাকি ছিল পুজো বন্ধ করলেই পরিবারে ঘনিয়ে আসবে ভয়ঙ্কর বিপদ। তাই বর্তমানে পরিবারের চার শরিকের প্রতি শরিক এক একবার পালা করে পুজোর দায়িত্ব নেয়। সে কারণেই জৌলুস অনেক কমলেও রীতি মেনে পুজোর আয়োজনে ভাঁটা পড়েনি আজও। এবছরও চিন্ময়ীর পুজোর আয়োজনে কোনও ঘাটতি রাখতে রাজি নন এবার দায়িত্ব পাওয়া শরিকরা। ভেসে আসা সেই কাঠের তৈরি প্রাচীন কাঠামো অনেক আগেই নষ্ট হয়েছে। তৈরি হয়েছে নতুন কাঠামো। সেই কাঠামোরও বয়স পেরিয়েছে নয় নয় করে অনেক অনেকগুলো বছর। ওই কাঠামোতেই তৈরি দেবী প্রতিমায় এবার মাটির প্রলেপ পড়েছে অনেক আগেই। মৃন্ময়ীকে চিন্ময়ী করে তুলতে মণ্ডল বাড়িতে এখন চলছে চূড়ান্ত ব্যস্ততা।

সেই কাঠামোর উপর মাটির প্রলেপ দিয়ে প্রতি বছর গড়া হয় দেবীমূর্তি। নিজস্ব চিত্র।

পরিবারের কন্যা সর্বাণী হালদার জানান, মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় দেবীর বোধন। কুমারী পুজোর প্রচলন রয়েছে মন্ডল বাড়িতে। প্রাচীনকাল থেকেই বলিদানের কোনও রীতি নেই বাড়ির পুজোয়। আয়োজন কমলেও আজও দেবী দুর্গাকে নিয়ে উৎসাহ ও উদ্দীপনা এতটুকুও কমেনি মণ্ডল বাড়িতে। দুর্গাপুজোর সময় ছাড়াও বছরের প্রতিটা দিনই দুর্গাদালানে নিয়ম করে পুজো হয় দুবেলাই। পরিবারের সদস্যরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পূজোর চারদিনের জন্য পারুলিয়ার বাড়িতে এসে একত্রিত হন। চলে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া আর আনন্দ-ফূর্তি। কালের নিয়মে ভেঙে পড়েছে জমিদারবাড়ির চারপাশের দালান। ভগ্নপ্রায় জমিদার বাড়ির ইঁটের খাঁজে খাঁজে একের পর এক গজিয়ে উঠেছে আগাছা। তবুও যেন কয়েকশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গোটা বাড়িটা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement