Advertisement
Advertisement

ওপাড়ার হেমন্ত মিশে যায় এপাড়ার শ্যামল মিত্রে! পুজোর গান যেন টাইম মেশিন

ঝলমল আনন্দের মাঝে সপ্রতিভ হাসি আর সহজিয়া গন্ধ চলে যাচ্ছে দূরে… অনেক দূরে।

Durga Puja 2023 Memoriesf of Durga Puja Festivel by Rima Bhattachariya | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 12, 2023 5:57 pm
  • Updated:October 12, 2023 6:02 pm  

রিমা ভট্টাচার্য: পুজোর স্মৃতি বলতে আমি যা বুঝি তা মধ্যবিত্ত নিউক্লিয়ার বাড়িতে বড় হওয়া একটি মেয়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আম বাঙালির কাছে পুজো রোজকার ফুটিফাটা জীবনে বোরোলিনের মতো। জীবনের যে আশ্চর্য পর্বে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে বাইরের ক্রমাগত ছুটে চলা দুনিয়ার দিকে তাকালে বুঝতে পারি, বিগত দশ বছরে ‘পুজো আসছে’, এই ভাবনার অভিঘাত কতখানি বদলে গিয়েছে আমার কাছে।

ছোটবেলার পুজোর অনুষঙ্গে রয়ে গেছে মফসসলীয় খুঁটিনাটি। গড়িয়াহাট বা হাতিবাগান চত্বরের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আগে, বহুদিন অবধি পুজোর শপিং বলতে চিনতাম সোদপুর মার্কেট। পুজো এলেই ঝলমলিয়ে ওঠে সে চত্বর। হাজার রকম ব্র্যান্ড বা শপিং মল এসে পড়েনি তখনও। বাবার পুজোর বোনাস হওয়ার পরেই আমাদের সোদপুর অভিযান শুরু হত। শ্রীনিকেতন বা রেডিমেড সেন্টার থেকে একটা ভালো জামা কেনার প্রয়াস। তারপর সুপার মার্কেটের ছোটবড় বিপণীতে ঘুরে বেড়ানো। বাড়ি ফিরে পড়াশোনার পাট তুলে ট্রায়াল পর্ব।

Advertisement

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যেসও বদলেছে। বদলেছে ঠিকানা। যে শিউলিগাছের তলা থেকে ঝরা শিউলি কুড়িয়ে একটুকরো কাপড় রঙ করে, ছবি এঁকে ফিরেছিলাম স্কুলে, সেই গাছখানাও আর নেই। যেমন নেই বাবার সঙ্গে ঘুরে ঘুরে মফসসলের পাড়ার পুজো দেখার আনন্দ। সে পুজোর জৌলুস তেমন নয়। সেই সাধারণটুকু অসামান্য হয়ে উঠত বাবার গল্পে ভর করে। বাবার ছোটবেলা, বড়বেলা কেটেছে যে সব জায়গায়, সোদপুর থেকে আগরপাড়ার সেইসব পাড়ায় হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যেতাম আমরা। যেসব পাড়ার খানিক প্রতিপত্তি ছিল, তারা ছোটখাটো থিমপুজোর আয়োজন করত। এখনও করেন নিশ্চয়ই। বুড়োবেলায় এসে বাবার সঙ্গে আর ঠাকুর দেখা হয়ে ওঠে না।

[আরও পড়ুন: অষ্টমীতে ধুনো পোড়ানো, নবমীতে কাদা খেলার রীতি! ২৬৫ বছরে পড়ল রানাঘাটের পালবাড়ির পুজো]

সেইসব পাড়ার অন্ধকারে ফুটে ওঠে আলো, দূরের কোনও পাড়ার সুরে মিশে যায় এই পাড়ার গান! হেমন্ত আর শ্যামল মিত্রের পাশে মানবেন্দ্র। ও পাড়ায় নচিকেতা, রূপঙ্কর, শুভমিতা। সে গানের প্রজাপতি পাখায় পাখায় রঙ ছড়ায়… আনমনে। রঙ যদি মর্মে এসে লাগে, তখন? গান কী শুধুই গান? নাকি টাইম মেশিন? কে জানে! আসলে সুরের ঘরের মধ্যে জানলা। সে জানলা দিয়ে জাফরিকাটা রোদ এসে পড়ে। চুপ করে বসলে গান হয়ে ওঠে ক্যালাইডোস্কোপ। বাবার সঙ্গে অতীত হাতড়ে আমি পরশপাথর খুঁজে নিতে শিখেছিলাম, সেই সময়। ছাতিমের গন্ধ, দূরে হেমন্তের গান আর ইতস্তত আলোর আভা পেরিয়ে আমাদের শেষ ঠাকুর দেখা হত এই বিটাউনের পুজোয়। একটা মস্ত মেলা বসে পুজোয়। দশমীতে ঘোলার মাঠে বিসর্জনের মেলায় যেতাম ফি-বছর। এই চত্বরের বহু পুজোর বিসর্জন হত মাঠের কাছে পুকুরে। সেই ভিড়ে ধুনোর গন্ধ আর হালকা ঠাণ্ডা হাওয়ায় মিশে যেত অজানা মনকেমন। যেসব বন্ধুদের ফোন নম্বর ছিল, তাদের মেসেজ করতাম। সেই কিপ্যাড ফোনে ছন্দ মিলিয়ে কবিতা লেখার অপপ্রয়াস কিছু কম ছিল না।

[আরও পড়ুন: এত বড়! ৪১ ফুটের দুর্গা প্রতিমায় চমক দিতে চলেছে উত্তরবঙ্গের এই ক্লাব]

এখন শহরের শপিংমলে নিজের জন্য জামাকাপড় খুঁজে নিই। ঘরোয়া ট্রায়াল পর্বের জায়গায় নতুন জামা পরা খানদুয়েক ছবি মা-বাবাকে হোয়াটসঅ্যাপ করি। বাড়িতে ফিরি ঠিকই, কিন্তু বন্ধুরা সবাই ফেরে না। তাদের মনকেমন জমা হয় এনক্রিপ্টেড চ্যাটে। আমার বাড়ির কাছের যে ছাতিম গাছ পুজোর আবহাওয়া নিয়ে আসত, সেটি আর নেই। অনেক ঝলমল আনন্দের মাঝে সেই সপ্রতিভ হাসি আর সহজিয়া গন্ধটুকু চলে যাচ্ছে দূরে… অনেক দূরে। নিশ্চিন্দিপুর ছেড়ে চলে যাওয়াটাই যে অমোঘ! সেটুকু মেনে নিয়ে স্মৃতি পুষে রাখি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement