Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2023

শহরের বড় পুজোর পাশেই ছিল মেসবাড়ি, তবু গ্রামে ফেরাই ছিল সাবেকি উৎসব

মেসবাড়ির কেউ যাবে বর্ধমান, কেউ বা মেদিনীপুর, কেউ আবার বীরভূম।

Durga Puja 2023: Memories of Durga Puja Festival by Snehendu Konar | Sangbad Pratidin
Published by: Kishore Ghosh
  • Posted:October 14, 2023 9:09 pm
  • Updated:October 14, 2023 9:17 pm  

স্নেহেন্দু কোনার: সকলের মতোই ছোটবেলার পুজার আনন্দ আমারও স্মৃতির সঞ্চয়। জীবনের প্রায় পঞ্চাশ বছরের বেশি সময়ে কত স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে! হারায়নি উৎসবের ভালো লাগা, ‘মজার’ সব স্মৃতি। পুজো যত কাছে আসছে, তত তীব্র আলোয় জেগে উঠছে সেই অনির্বান স্মৃতির শিখা।

এই সময়ে গ্রামে আমাদের বিশেষ আনন্দ ছিল শিউলি ফুল কুড়নো। স্কুল ছুটির দিনে সবাই মিলে ফুল কুড়াতে ছুটতাম। কোঁচড় ভরে ফুল নিয়ে ছুটতে ছুটতে চেঁচিয়ে বলতাম, ‘আশ্বিন মাস, আশ্বিন মাস, সামনে পুজা।’ ভোরের শিশিরে মাখামাখি হয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকা শিউলি কুড়াতে কুড়াতে কখন যে দুর্গা পুজো এসে যেত! কী আশ্চর্য ব্যাপার- পুজো আসার কিছু দিন আগে থেকেই স্থলপদ্মের গাছগুলো ফুলে ফুলে ভরে উঠত।

Advertisement

এর পরে যখন কলেজে পড়াশোনার সূত্রে কলকাতা শহরে আসলাম, তখন পুজোর ছুটিতে গ্রামে ফেরা ছিল বাধ্যতামূলক। ওই কয়েকটি দিনের জন্য সারা বছর অপেক্ষা করতাম। কলকাতায় আমার মেসবাড়ি ছিল বউবাজারে। মুচিপাড়া থানার পাশে সন্তোষ মিত্র স্কয়্যারের এক কোণায়। যদিও এখানে বিখ্যাত পুজো হয়, কিন্তু নিজের গ্রামের পুজোর আকর্ষণই ছিল আলাদা। মনে পড়ে, পঞ্চমীর দিন রাত। মেসবাড়ির কেউ যাবে বর্ধমান, কেউ বা মেদিনীপুর, কেউ আবার বীরভূম, দেশের বাড়ির পুজো উপভোগ করতে। গ্রামে ফেরার সেই আনন্দ বলে বোঝানো সম্ভব নয়।

[আরও পড়ুন: স্ত্রীলোকের বেশে এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, রানি রাসমণির পুজোর পরতে পরতে ইতিহাস]

রাতে ব্যাগ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তাম। ভোর-রাতে অ্যালার্ম (মোবাইলে নয়, এলার্ম ক্লক) বাজলেই উঠে পড়া। এছাড়াও মেসের কেয়ারটেকার সব ফ্লোরের দরজায় করা নেড়ে ডেকে দিতেন। আমাদের সবার প্রাথমিক গন্তব্য ছিল হাওড়া স্টেশন। সেখানে থেকে যে যার রুট মাফিক ট্রেন। শিয়ালদহর পূরবী সিনেমা হলের সামনে থেকে ছাড়ত ভোর ৪ টের হাওড়াগামী ফার্স্ট ট্রাম। মেসবাড়ি থেকে দল বেঁধে হাঁটা শুরু করতাম পূরবীর উদ্দেশে। 

পুজোর সার্বজনীনতার এক মিলন মেলা ছিল আমাদের গ্রাম। শৈশবের সেই ভালো লাগার স্মৃতি এখনও অম্লান। আশা করি চিরকাল থাকবে অমলিন। এখনও প্রতি বছর আমাদের গ্রামে পুজো হয়। পুজোর সময় বাড়ি যাওয়ার সুযোগ হয় না আর। তবে সেদিনের সেই ভালো লাগাও আজ ফিকে হয়ে গিয়েছে।

[আরও পড়ুন: চালতাবাগান সর্বজনীনে বিশেষ চমক, থিম সং গাইলেন IAS অফিসার]

সেকাল ও একালের যদি তুলনা করি, তবে সেকালের পুজো ছিল সাবেকি, গাম্ভীর্য আর আবেগে ভরা । সবাইকে নিয়ে এক জমজমাট উৎসব। সব আচার-অনুষ্ঠান যেন ঠিক মতো হয়, প্রবীণরা কড়া নজর রাখতেন। একালের থিম পুজোর চাকচিক্যে হারিয়ে গিয়েছে সেই আচার, রীতিনীতি।

তবে পুরনোকে ভুলে নতুন গ্রহণ করতে তো হবেই। আধুনিকতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। বিসর্জন দেখতে কারও ভাল লাগে না। মায়ের বিসর্জন তো হয় না। বিদায় জানানো হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নিবিশেষে সকলের অংশগ্রহণে আনন্দময় হয়ে উঠুক শারদ উৎসব।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement