Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2023

সামাদ চাচার রঙিন গ্যাস বেলুনের সেই গাড়ি মনে পড়ে

পেঁজা আকাশের মধ্যে মিশে যেত বেলুনগুলো।

Durga Puja 2023: Memories of Durga Puja festival by Ritasman Dutta Roy। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 13, 2023 6:09 pm
  • Updated:October 13, 2023 6:09 pm  

ঋতষ্মান দত্তরায়: আমরা যখন সময়ের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে থাকি, সময় নিজেও আমাদের পিছু নেয়। চুপি চুপি। তবে, আমরা সময়কে যাপন করলেও, সে কিন্তু একরাশ বিষাদভরা সুরাপাত্র মজুত করে আমাদের মনে। ছোটবেলায় দুর্গাপুজো আসলেই, স্কুল ছুটি পড়ত। পাড়ার এদিক সেদিক সারাবছর যে জায়গাগুলো বঞ্চিত হয়ে পড়ে থাকত, পুজোর সময় তারা সেজে উঠত রঙিন জরি, রঙিন কাপড়ে, ধুনোর গন্ধে। মাঠের ধারে কাশফুল ফুটত। বাড়ি ফিরে দেখতাম, রঙিন কুমকুমের দানি হাতে মা সাজতে বসেছে। বাবা গুনে দেখে নিচ্ছে হিসাবের খাতা। আমার ভাগ্যে জুটত রোমাঞ্চ আর আনন্দ মাখা এমন একটা অনুভুতি, যা লিখে বোঝানো যায় না।

তখনও মহালয়ায় পুজো শুরু হওয়ার দিন আসেনি। এক ঢাউস ব্যাগ নিয়ে, ষষ্ঠীর দিনে আমি আর মা চেপে বসতাম বাসে। পেতাম নতুন জামার গন্ধ। আনন্দের গন্ধ। মামাবাড়ির পাড়ায় বেশ ধুমধাম করে পুজো হত। মনে আছে, পাড়ায় ঢুকতেই, বোধনের শব্দ পেতাম। পেরিয়ে আসতাম টুকাইদের বাড়ি। পল্টু মামাদের বাড়ি। রিকশাটা লেন পেরোলেই মূর্ত সময়ের মতো দাঁড়িয়ে থাকত সামাদ চাচা। তার সামনে ছোট্ট একটা ঠেলা। তাতে সিলিন্ডার লাগানো। সরু হ্যান্ডলের উপর সুতো ভরা হলুদ–লাল–সবুজ গ্যাস বেলুন। দশ–বিশ টাকার ভার তখনও আমাদের শৈশব সইতে শেখেনি। কাজেই, মামার কাছে আবদার আর রঙিন গ্যাস বেলুন প্রথম বারের জন্য ছুঁয়ে দেখা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: যিনি ট্র্যাফিক পুলিশ, তিনিই মৃৎশিল্পী! পথসুরক্ষা সামলে প্রতিমা গড়েন বাঁশদ্রোণীর সুকুমার]

সপ্তমী এলে, মামির সুতোর কার্টন থেকে সুতো নিয়ে আরও উপরে উড়িয়ে দিতাম বেলুনগুলোকে। সেই বয়েসে মুক্তিটাই প্রাথমিক অভিব্যক্তি কিনা! মনে আছে, বেলুনগুলো কেমন করে যেন পেঁজা আকাশের মধ্যে মিশে যেত। অষ্টমী এলে ঘরের সিলিংয়ে জড়িয়ে থাকত সেগুলো। রাতের বেলা তাদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকতাম, আওড়াতাম, “ব্রহ্মা দিয়েছেন পদ্ম, বিষ্ণু দিয়েছেন চক্র…”

এর পর নবমী এলে ঢাকের আওয়াজ চওড়া হত, সামাদ চাচার বিক্রিও বাড়ত নিয়ম করে। রংবেরঙের পোশাকের দলে হারিয়ে যেত রংবেরঙের গ্যাস বেলুনের উঁচু উঁচু মাথাগুলো। আগুনপাখি যেন। রাত্তিরে মামাবাড়িতে ফিরে দেখতাম কোনও এক অজানা কারণে এক-আধটা বেলুন ছাড়া পাওয়া সাহসী পাখির মতো কোথায় যেন উড়ে গেছে। নবমীর দিন ওই প্রথম কান্নার অবগাহন। প্রতিবার দশমীতে একটা নির্ভেজাল বিষাদময়তা ঘিরে থাকত।

রক্তপলাশ আবির সিঁদুর মেখে মা যখন গঙ্গার দিকে চলেছে, তখন সেই থেমে থাকা সময়টা তার পিছু নিত, মনে আছে। পরদিন সবাই যখন পরের বছর ফিরে আসার নিস্পন্দন প্রতিজ্ঞা করত, তখন আমাকে সকালবেলার কয়লার গন্ধ চেপে ধরত, ঘিরে থাকত আরও একরাশ স্তব্ধতা। দেখতাম বেলুনগুলো নিচে পড়ে রয়েছে। তাদের আর ওড়ার শক্তি নেই, হয়তো বা প্রয়োজনও নেই। তারা বিদায় সয়ে সয়ে আজও বিদায়ের গান গায়।

[আরও পড়ুন: ডিসেম্বরেই সাত পাকে বাঁধা পড়বেন সন্দীপ্তা সেন, কী কী হবে বিয়েতে?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement