Advertisement
Advertisement
Durga Puja 2023

পুজোর নাটকে প্রপোজ করল নারদ, মিষ্টি হেসে ঘাড় নাড়ল অপ্সরা

'মহিষাসুরমর্দিনী'র রিহার্সালে সে এক কাণ্ড!

Durga Puja 2023: Memories of Durga Puja festival by Biswaraj Bhattacharjee। Sangbad Pratidin
Published by: Biswadip Dey
  • Posted:October 17, 2023 7:39 pm
  • Updated:October 17, 2023 7:39 pm  

বিশ্বরাজ ভট্টাচার্য: পুজো এলে কারও কারও মনে যেমন মদন-জ্বালা অনুভব হয়, তেমনি কারও মনে বিরহের ডিম লাইট জ্বলে ওঠে। তখন আশ্বিনের শারদপ্রাতে গালিব শুনতে ইচ্ছে করে। রাতে বালিশের পাশে ‘শেষের কবিতা’ জেগে থাকে। মনের মনিটর হ্যাং হয়। মগজে কারফিউ চলে। ‘ব্যর্থ প্রেমে’র ক্ষত থেকে রক্ত ঝরে। তখন মাধ্যমিক। সাদামাটা স্কুলের একটা দিন। থার্ড পিরিয়ডে ডাক পড়ল। তড়িঘড়ি ছুটলাম টিচার্স কমনরুমের দিকে। ক্লাসে শুরু কানাঘুষা। নির্ঘাত শাস্তির ডাক। তবে ঘটল যা, টোটাল তা অপ্রত্যাশিত। সারপ্রাইজ টাইপ। ম্যাডাম বললেন, ‘সন্ধ্যাবেলা স্কুলে রিহার্সাল আছে। আসবি। মহিষাসুরমর্দিনী হবে। তোর জন্য একটা চরিত্র ভেবেছি।’

ক্লাসে গিয়ে বলতেই মুহূর্তে আমি হিরো। কিন্তু আমার বুক ঢিপঢিপ,পেট গুরুগুরু। রাস্তায় আসতে আসতে ভাবছিলাম, রোগা পটকা হলেও নিশ্চয়ই কোনও হেভিওয়েট চরিত্র করবো। শ্রীহরি বা ইন্দ্র বা বরুণ দেব! এই দেব-চরিত্রের জন্য তেমন ফিজিক লাগবে না। কিন্তু আড়ালে ভগবান মুচকি হাসি দিলেন। গিয়ে শুনলাম, আমি ‘নারদ’! স্কুলের ম্যাডামই করাচ্ছেন নৃত্যনাট্যটি। তাঁর মতে, আমি এই চরিত্রের জন্য একদম ফিট। আপত্তি করার আর নো সু্যোগ।

Advertisement

আরও পড়ুন: সমলিঙ্গ বিবাহে সম্মতি নয় এখনই, সরকারের উপর সিদ্ধান্ত ছাড়ল সুপ্রিম কোর্ট]

বয়েজ স্কুলের ছাত্র আমি, রিহার্সালে গিয়ে দেখি বেশ কয়েকজন মেয়ে। মুহূর্তে বুকে আনন্দের বৃষ্টিপাত। কেউ কেউ সমবয়স্ক,কেউ আবার সিনিয়র। তিন-চার দিনের মধ্যে বয়েজ স্কুলের ‘ব্রহ্মচারী’ ভাব কেটে গেল। মেয়েদের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করার স্বর্গীয় সুখ লাভ। বন্ধুদের বলতেই তারা হিংসায়, বিস্ময়ে কেমন যেন বেঁকেচুরে গিয়েছিল।

রিহার্সালে পরিচয় হল একজনের সঙ্গে। নাম পারমিতা। আমার এক ক্লাস জুনিয়র। নৃত্যনাট্যে ও অপ্সরার ভূমিকায়। আলাপ বেশ জমে গেল। তবে ওর মনখারাপ, ‘সিংহ’ ওকে প্রপোজ করেছে! পারমিতার অভিযোগ, সে নাকি ‘দুর্গা’কেও প্রপোজ করেছে!

[আরও পড়ুন: হাতিবাগানের কুণ্ডুবাড়ির পুজো প্রকৃতি ও মানব সভ্যতার মেলবন্ধন, মা এখানে ব্যাঘ্রবাহিনী]

রিহার্সালের ফাঁকে ফাঁকে কথা বাড়ল। সঙ্গে প্রেমের অনুভূতিও। রবিবার। আশ্বিনের শারদপ্রাতে মহড়া। হঠাৎ মুখ ফসকে বলে ফেললাম,”যদি তোমায় প্রপোজ করি?” বলেই ভাবলাম এই শেষ। সব মাটি। কিন্তু না,পারো মানে পারমিতার মিষ্টি হেসে জবাব,’আরে তুমি কী কিউট! না করার প্রশ্নই নেই।’ ভাবলাম মধ্যবিত্ত ভীরু প্রেমিক থেকে একেবারে ড্যাশিং ডায়নামিক লাভার হয়ে যাব। পারোর কথা শোনার পর থেকেই বুকে বাজতে শুরু করেছে পুজোর ঢাক। চারপাশ মনে হচ্ছে ভীষণ রঙিন।

আমাদের অনুষ্ঠান ছিল পুজোর তিনদিন আগে। প্রতিদিন বুকে মনে হচ্ছিল আনলিমিটেড সুনামি চলছে। ভাবলাম, অনুষ্ঠান শেষে ভালবাসা জানানোর চিরন্তন জাদু-শব্দগুলো আদর মাখিয়ে বলে দেব। পুজোতে ঘুরব দেদার। প্যান্ডেল হপিং থেকে গসিপিং সব হবে পারোর সঙ্গে। কিন্তু জীবনের চিত্রনাট্য আচমকাই পালটে যায়। অনুষ্ঠান হল। পারো এল না। শুনলাম, ওর বাবা মারা গিয়েছেন। থাকতেন গুয়াহাটি। পারোরা একেবারেই চলে গেল সেখানে।
আমার কিশোরবেলায় যৌবনের আগমনী সুর হয়ে আসা পারমিতা আর ফিরল না। দশমীর অশ্রুজল হয়েই থেকে গেল!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement