অর্ণব ভট্টাচার্য: পুজোর স্মৃতি বলতে প্রথমেই মনে পড়ে ছোটবেলায় শ্রীরামপুরে প্রথমবার পরিবারের সঙ্গে শপিংয়ে যাওয়ার কথা। সেবার স্টেশন থেকে নেমেই তো আমার আক্কেল গুড়ুম। বাপরে বাপ! এত মানুষও আছে পৃথিবীতে?
লোকজনের ভিড়ে তো ছোট্ট আমার নাজেহাল অবস্থা, দোকানে দোকানে নানানরকম রংবেরঙের জামা-প্যান্ট দেখতে পাচ্ছি বটে, কিন্তু সেদিকে যাবার উপায় নেই, বাবা-মার সঙ্গে ভিড় ঠেলে এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। যেন স্রোত ঠেলে এগিয়ে চলেছে একটি ছোট্ট নৌকা।
অবশেষে সেই নৌকা ভিড়ল পাড়ে, একটা বেশ সুন্দর দেখতে দোকানের সামনে। তার ভেতরে পৌঁছে সোজা তিনতলায়, ছোটোদের সেকশনে। আর পৌঁছেই মনে হল, সত্যিই স্বর্গ কোথাও থাকলে তা এখানেই। চারদিকে রংবেরঙের জামার মেলা লেগে গেছে যেন, কোনও জামার গায়ে আবার আঁকা আছে স্পাইডার ম্যান, ডোরেমন, সিনচ্যান বা বেন-টেনের ছবি। আমার বয়সি আরও কয়েকজন ছুটতে ছুটতে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে আঁকড়ে ধরছে সেই জামা-প্যান্টগুলো।
যাইহোক, ছোটবেলার আবছা হয়ে যাওয়া পাতাগুলো থেকে ধুলো মুছে এই অধ্যায়ের এর থেকে বেশি আর কিছু উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ‘কাট’ করে অন্য শটে চলে গেলে দেখতে পাচ্ছি, একটা কালো ক্যাপ বন্দুককে। এই ক্যাপ বন্দুক কিনতাম পুজোর কয়েকদিন আগে। দোকানে দোকানে বাহারি হরেকরকম বন্দুক ঝোলানো থাকত। তার মধ্যে অনেক পছন্দ করে একটা বন্দুক বাছতাম। আর তার সঙ্গে একটা করে বড় ক্যাপের বাক্স, সেই বাক্স আবার বাড়ি ফিরেই রোদে দিতাম। সিংহছাপ সেই বড়ো কাগজের বাক্সের মধ্যে থাকত গোলাপি রঙের লম্বাটে ক্রিম রোল মার্কা কাগজের প্যাকেট আর তার ভেতরে ছোট্ট ছোট্ট বোতামের মত কাগজের বাক্স। সেই বাক্স খুললে বেরিয়ে আসত ফিতের মত লাল রঙের ক্যাপ।
সেই ক্যাপ, বন্দুকের পেছনদিকে আটকে, ট্রিগারে চাপ দিলেই ফট করে আওয়াজের সঙ্গে একঝলক আগুন আর বারুদের গন্ধ বেরিয়ে আসত। তারপর পুজো শুরু হলে তো আর আনন্দের সীমা-পরিসীমা থাকত না, যেদিন থেকে বাড়ির সামনের টিয়াপাখি, ফুলদানি আঁকা ইলেকট্রিক বোর্ডের লাইটগুলো জ্বলে উঠত, সেদিন থেকেই মনের মাঝে বইত খুশির ফল্গুধারা। ঠাকুর দেখতে গিয়ে প্যান্ডেলের বাহার দেখলেই জড়ো হত রাজ্যের বিস্ময়। চেনাজানা জগৎই যেন রাতারাতি বদলে হয়ে যেত রূপকথার আনন্দপুরী, যেখানে সবসময় বিরাজ করে অনন্ত খুশি।
বড়দের বলতে শুনতাম, এবার দুর্গাঠাকুর আসছেন নৌকায় বা গজে চেপে, তখন কল্পনা করতাম ঠিক কোন পথ দিয়ে মা দুর্গা সপরিবারে হাতি চেপে আসছেন? কতদিন লাগে সেখানে যেতে? বিকেলের লালচে আকাশ দেখে মনে হত বাপ রে! এখনও কী ভয়ানক যুদ্ধটাই না চলছে মা দুর্গা আর মহিষাসুরের মধ্যে!
এখনও পুজোয় (Durga Puja 2023) আনন্দ কম হয় না, তবু সেই ছোট্ট ছেলেটাকে খুঁজে বেড়াই, যার দুচোখ জুড়ে সমস্ত পুজো জুড়ে জড়িয়ে থাকত বিস্ময়মাখা আনন্দ। মহালয়ার দিন থেকে যে বাড়ির সবাইকে ব্যস্ত করে তুলত পুজো আর কতদিন তা জিজ্ঞেস করে। যে প্রতিবছর পুজোর দিনগুলোতে নিয়ম করে পৌঁছে যেত সব পেয়েছির দেশে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.