অসুস্থ অবস্থায় পাম অ্যাভিনিউয়ের দু'কামরায় ফ্ল্যাটই ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জগৎ। বৃহস্পতিবার ওই ঘরে শুয়েই জীবনযুদ্ধ শেষ করলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক যেন এক যুগের অবসান।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও বরাবর আড়ম্বরহীন জীবন কাটিয়েছেন তিনি। মানুষটা নেই। অথচ সেই ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্মৃতি।
বাড়ির দেওয়াল জুড়ে আর পাঁচজন মধ্যবিত্তের মতোই নানা মুহূর্তের ছবি। সন্তান সুচেতনের ছবি যেমন রয়েছে, তেমনই আবার রয়েছেন কমরেড লক্ষ্মী সেহগলের ছবিও।
টেবিলে এখনও রাখা ওষুধপত্র। প্রেসার মাপার যন্ত্র থেকে সুগার পরিমাপের যন্ত্র কী নেই সেখানে।
ঘরের কোণায় রাখা নীল রঙের বেডেই কাটে জীবনের শেষ কটাদিন। বার বার অসুস্থ হলেও হাসপাতালে ভর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত অনীহা ছিল তাঁর। তাই গত কয়েকদিন নানা চিকিৎসার সরঞ্জামে ভরে ওঠে গোটা ঘর।
বুদ্ধবাবু ভীষণভাবে বইপ্রেমী। বিদগ্ধ রাজনীতিকের সংগ্রহের তালিকা নেহাত কম নয়। দেশ বিদেশের লেখকের বই রয়েছে তাঁর কাছে। নিয়মিত পড়াশোনা করতেন। চোখের সমস্যায় যদিও শেষ কদিন নিজে পড়তে পারতেন না। তবে শোনা যায়, সেই সময় তাঁর স্ত্রী মীরাদেবী বই, সংবাদপত্র পড়ে শোনাতেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে।
পোড়খাওয়া রাজনীতিক যে সংস্কৃতিমনস্ক ছিলেন তার প্রমাণ বোধহয় তাঁর ফ্ল্যাটের দেওয়াল। চে-সহ একাধিক কমিউনিস্ট নেতার ছবি আজও জ্বলজ্বল করছে।
রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে ভীষণ ভালোবাসতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজও তাঁর দেওয়ালে বিশ্বকবির ঊজ্জ্বল উপস্থিতি।
মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সাক্ষী এই লেটার বক্স। ক্ষমতায় থাকাকালীন এই লেটার বক্সে চিঠি আসত বুদ্ধবাবুর নামে। মহাকরণের মতো ঘরের টেবিলেও জমত চিঠির পাহাড়।
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.