বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছিল তীব্র চায়ের নেশা। একবার নির্বাচনের প্রচারের জন্য এলেন বন্ধু কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি। নজরুল এসেছেন আর গানবাজনা থাকবে না, তা কি হয়! সুতরাং একদিন রাতে আয়োজন করা হল সংগীত জলসার। সময়মতো শুরু গান। কিন্তু বিদ্রোহী কবির চায়ের তেষ্টা পেল মাঝরাতে। চা ছাড়া আর একটি গানও নয়, জানিয়ে দিলেন সাফ। বিপাকে পড়লেন জসীমউদ্দীন। অন্যদিকে, কবিগুরু রবিন্দ্রনাথের চায়ের নেশা না থাকলেও তিনি সকলকে চা খাওয়াতে ভালোবাসতেন। সেই কবে থেকেই বাঙালির জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে চা।
বাঙালির জীবনে চা জড়িয়ে প্রতিমুহূর্তে। আনন্দ, রাগে, দুঃখে, ভালোবাসায়। গরম চায়ের কাপে রাজনৈতিক আলোচনা বা অন্য বির্তক আলাদা মাত্রা যোগ করে। তবে ইদানিংকালে মোবাইলের যুগে সেই মাত্রা খানিকটা হলেও ছেদ পড়েছে। তবে বাঙালির সেই চায়ের ভাড় হাতে পেপার পড়া থেকে গভীর সমস্যার সমাধানে ইতিবৃতান্ত এবারের পুজো তুলে ধরছে উত্তর কলকাতার শুঁড়া সর্বজনীন পুজো কমিটি।
সমাজের বিভিন্ন মানুষ, তাঁদের ব্যক্তিগত গল্প, স্বপ্ন, এবং দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতা এক জায়গায় এসে মিলে যায়। তাঁদের সবাইকে একত্রিত করে, উত্তর কলকাতার চায়ের দোকানের আড্ডা। সেই চায়ের দোকান ও আড্ডার এক টুকরো ছবি দেখা যাবে এই পুজো মণ্ডপে।
চা যে শুধুমাত্র একটা পানীয় নয়, এটা একটা অনুভূতি, একটা মিলনের মাধ্যম। চায়ের কাপে কথোপকথনের প্রবাহ, নতুন বন্ধুত্বের শুরু, পুরনো সম্পর্কের গভীরতা, এবং জীবনের বিভিন্ন রং প্রতিফলিত হয়। মণ্ডপের ছত্রে ছত্রে সেই গভীরতার ছাপ থাকবে।
চায়ের ধোঁয়া ঘিরে তৈরি হয় গল্পের জাল, যেখানে নতুন আইডিয়ার জন্ম হয়। বিতর্কের উত্তাপ ছড়ায়। বা স্রেফ নিঃশব্দে বসে থাকার আরাম পাওয়া যায়। বর্তমানে মোবাইলের রমরমায় সেই আড্ডায় খানিকটা ছেদ পড়েছে। তাও তুলে ধরা হবে এই পুজোয়।
'দুটোকে তিনটে' এই নামেই শিল্পী অভিজিৎ নন্দীর পরিকল্পনায় গড়ে উঠছে মণ্ডপ। ঋতব্রত চট্টোপাধ্যায়ের আবহ তৈরি করছেন। প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী পরিমল পাল।
টিন, বাঁশ, প্লাইউড দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ।
মায়ের রূপের কোনও পরিবর্তন নেই। একচালাতে সেজে উঠছেন দেবী।
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.