শ্যামার আরাধনায় একটুকরো পুরনো কলকাতা ফুটে উঠেছে গিরিশপার্কে। এ চত্বরের আনাচে-কানাচে এমনিতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তিলোত্তমার ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির নানা ইতিহাস। তারই মধ্যে অন্যতম বাইজি সংস্কৃতি।
উত্তর কলকাতার বাইজি সংস্কৃতিতে লক্ষ্যনীয় ছিল শিল্প, বিনোদন এবং সামাজিক স্তরবিন্যাস। যুগের সঙ্গে যার বদল ঘটেছে। তারই উপাখ্যান এবার গিরিশপার্ক ফাইভ স্টার ক্লাবের মণ্ডপে। যে পুজো এবার ৬৫ বর্ষে পদার্পণ করল।
দীর্ঘ বিরতির পর কালীপুজোয় ফিরেছেন শিল্পী অভিজিৎ ঘটক। প্রথমবার গিরিশপার্কের এই পুজোর দায়িত্ব পেয়ে নিজেকে উজার করে দিয়েছেন দুর্গাপুজোর এই পরিচিত শিল্পী।
উনবিংশ শতাব্দীতে বাইজি বা নর্তকী ও গায়িকারা শুধু বিনোদনের প্রতীক ছিলেন না। প্রথাগত সঙ্গীত, নৃত্য এবং অভিনয়েও পারদর্শী ছিলেন। শহরের জমিদার ও ধনী ব্যবসায়ীদের জন্য নিজেদের প্রতিভার প্রদর্শন করতেন।
এই জমিদাররাও ছিলেন বাইজি সংস্কৃতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। গিরিশ পার্ক এবং বিডন স্ট্রিটের আশেপাশের অঞ্চলে অভিজাত শ্রেণির জীবনের অঙ্গ ছিল এই নৃত্য-সঙ্গীতের সংস্কৃতি।
বাইজি সংস্কৃতি থেকে উঠে আসা অন্যতম বিশিষ্ট নাম নটি বিনোদিনী। ১৮৬২ সালে জন্মানো বিনোদিনী গিরিশ চন্দ্র ঘোষের সময়কালে খ্যাতি অর্জন করেন এবং বাংলা থিয়েটারের শীর্ষ অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন।
সেসময় বাইজিরা কেবল তাঁদের শিল্পের জন্যই নয়, রসবোধের জন্যও সম্মানিত ছিলেন। নটি বিনোদিনীর আত্মজীবনী, 'আমার কথা', এক বাইজির জীবন ও তৎকালীন বাইজিদের সামাজিক অবস্থানের কথা তুলে ধরেছে।
তাঁদের প্রাসাদগুলোতে নিয়মিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন হতো, যেখানে বাইজীরা ঠুমরি, দাদরা, কথাক নৃত্যের পাশাপাশি নাটকও পরিবেশন করতেন। যা অভিজাতদের প্রজ্ঞা ও রুচির প্রতীক বলে বিবেচিত হতো।
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.