এনএফও। নিউ ফান্ড অফার। এই নিয়ে বহু গ্রাহকেরই কৌতূহল রয়েছে। অনেকেই এমন ফান্ডে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। কিন্তু প্রশ্ন, কেন গ্রাহকরা এনএফও-তে লগ্নি করবেন? কারণ সবচেয়ে বড় যুক্তি হল, এই ধরনের নতুন ফান্ডগুলির তো সেই অর্থে পারফরম্যান্সের কোনও পূর্ব নজিরই নেই! তাহলে? উত্তর বিশ্লেষণে এবারের অতিথি অভিজিৎ কুমার পোদ্দার
এই মুহূর্তে বাজারে বেশ কিছু NFO তথা নিউ ফান্ড অফার রয়েছে। একেবারে আনকোরা নতুন ধরনের ফান্ড ছাড়াও কয়েকটি পুরনো শ্রেণির চেনা প্রস্তাবও চোখে পড়ছে। কেন NFO-তে বিনিয়োগ করবেন লগ্নিকারী? এই প্রশ্ন বারবার উঠে আসে। নতুন ফান্ডে, বিশেষত যেখানে কোনও পারফরম্যান্সের ‘হিস্ট্রি’ নেই, সেখানে কেন আদৌ লগ্নি করবেন, এমন প্রশ্নই তোলেন বিনিয়োগকারীদের একাংশ। তাঁদের কৌতূহল নিরসন করতে আজ কলম ধরছি। বাজারের বর্তমান অবস্থা বিচার করে এই অতি-জরুরি প্রশ্নটিরই উত্তর আলোচনা করছি আমি।
আমার মতে, NFO-র সপক্ষে দু’টি বড় কারণ আছে। এক, সম্ভাব্য ভ্যালু অ্যাডিশন। দুই, একদম গোড়া থেকে, যখন দশ টাকা প্রতি ইউনিটের দাম, শুরু করার আকর্ষণ। একটু পরিষ্কারভাবে বলি।
মনে করুন আপনি বিচক্ষণ, পোড়-খাওয়া ইনভেস্টর। পোর্টফোলিওতে কয়েকটি ভাল ফান্ড থাকা সত্বেও কেন এনএফওর দিকে ঝুঁকেছেন? কারণ আপনি বুঝেছেন, নির্দিষ্ট ফান্ডটির জন্য আপনার পোর্টফোলিও আরও একটু উন্নত মানের হবে। সোজা ভাষায়, ভ্যালু অ্যাডিশন হবে। তাই নিজের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন নতুন প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে।
এবার ধরুন আপনি নবাগত। সামনে আছে NFO-র হাতছানি: দশ টাকায় ইউনিট পাবার সম্ভাবনা। এবং আপনি চান লম্বা দৌড়ের ঘোড়া হতে, শুরুতেই কিনে অনেক দিন ধরে নিজের জন্য হোল্ড করে রাখতে চান। তাই এন্ট্রির পক্ষে NFO আপনার জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় একটি প্রস্তাব, তাই নয় কি? আমার অভিজ্ঞতায় বলে ইনভেস্টরদের এত সহজে শ্রেণিবদ্ধ করা যায় না। শুধু নতুন বা পুরনো বলে চিহ্নিতকরণ করাও ঠিক নয়। সাধারণ কিছু নীতি মেনে চললে NFO সম্বন্ধে ধারণা স্বচ্ছ হবে, সে আপনি যে কোনও ধরনের লগ্নিকারীই হোন না কেন। প্রথম, NFO তখনই নেবেন যখন সত্যিই সেটির প্রয়োজনীয়তা বোধ করবেন। পোর্টফোলিওর মধ্যে যদি একই জাতের আরও একটি প্রোডাক্ট থাকে, তাহলে দরকার নেই। মানে, ডুপ্লিকেশনের সম্ভাবনা এড়িয়ে চলুন। NFO কে স্বাগত জানান যদি সেটির মাধ্যমে ডাইভারসিফিকেশন পাওয়া যায়।
একেবারে প্রথমে লগ্নি করে দীর্ঘদিন ধরে রেখে উপকৃত হয়েছেন, এমন উদাহরণ আমার পেশাদার জীবনে অনেক দেখেছি। যাঁরা নিয়মমাফিক Wealth Creation-এ বিশ্বাসী, তাঁদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খুব প্রযোজ্য বলে আমি মনে করি।
পরিশেষে বলি, NFO-র ব্যাপারে ইতিবাচক কৌশল নিলেই ভাল। প্রয়োজন না থাকলে ছেড়ে দিন, বিনিয়োগ করবেন না। তবে যদি ঠিকঠাক মনে হয়, তাহলে নিজের রিস্ক-রিটার্নের গণ্ডির ভিতরে থেকে লগ্নি করার কথা অবশ্যই ভাবুন। এককালীন অনেক টাকা না প্রথমে স্বল্প বিনিয়োগ করে পরে সিপ?-এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকেই দিতে হবে। চারদিকে তাকালেই বুঝবেন, বাজারে NFO-র আসার সম্ভাবনা কম নেই। একেবারে আনকোরা ধরনের ইনডেক্স ফান্ড তো আছেই। আমাদের দেশে ইনডেক্সের ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়াও আছে কয়েকটি পুরোনো শ্রেণীর প্রস্তাব। সব কিছুতেই লগ্নি করার কথা ভুলেও ভাববেন না। সুযোগের অপেক্ষায় থাকুন। ভাল প্রস্তাব আসবেই।
‘সঞ্চয়’-এর জন্য লিখতে পেরে আমি আানন্দিত। আশা করি, এই লেখা পড়ে পাঠক উপকৃত হবেন।
(লেখক লগ্নি বিশেষজ্ঞ)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.