ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার সেন্ট্রাল ব্যাংক, যারা ফেডারেল রিজার্ভ নামে বিশ্বখ্যাত, সম্প্রতি ঘোষণা করেছে-সুদের হারে তারা কোনও বদল করছে না। মার্কিন মুলুক থেকে ঢের দূরে অবস্থান করলেও তাদের এই সিদ্ধান্তে আমাদের অর্থনীতির উপরও প্রভাব পড়ে। এমনকী ভারতীয় টাকার মূল্য কমে যেতে পারে! বুঝিয়ে বললেন বন্ধন ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট সিদ্ধার্থ সান্যাল
বুধবার মাঝ রাতে ফেডারেল রিজার্ভ, অর্থাৎ আমেরিকার সেন্ট্রাল ব্যাংক, আশানুরূপভাবেই জানিয়েছে যে, তারা এই মুহূর্তে সুদের হারে কোনও পরিবর্তন আনছে না। অথচ খুবই তাৎপর্যপূর্ণভাবে তারা আবার এটাও বলেছে যে এই বছরের শেষের দিকে এক বা একাধিকবার সুদের হার বাড়ানোর সম্ভাবনা হয়তো থাকতে পারে।
এখন কথা হল, মার্কিন মুলুকে মুদ্রানীতি বদল হবে কি না, তারা সুদের হার বাড়াবে কি না তা নিয়ে হাজার হাজার মাইল দূরে ভারতবর্ষে বসে আমরা ভাবব কেন? ভাবতে হয়, কারণ আমেরিকায় সুদের হার বাড়ানোয় ডলারের সরবরাহ কমে যায়; যার প্রভাব পড়ে দুই দেশের মুদ্রার দামে বা সহজ কথায় ভারতীয় টাকার মূল্য কমে যেতে পারে। তার প্রভাব আবার পড়তে পারে আমাদের দেশের মূল্যবৃদ্ধিতে এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারতের বাজারে করা বিনিয়োগের উপর। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার (রেপো রেট) বাড়ালে তার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতির সব স্তরেই। আর রিজার্ভ ব্যাংকের এক্সটার্নাল বেঞ্চমার্ক-বেসড লেন্ডিং রেট-এর (EBLR) নিয়ম অনুযায়ী এই বর্ধিত রেপো রেট সরাসরি গ্রাহকদের উপর লাগু হওয়া বাধ্যতামূলক। তাই এর প্রভাব এসে পড়ে দেশের মানুষের পকেটের উপর। হোম লোন, কার লোন, পার্সোনাল লোন ইত্যাদির উপর সুদের হার বাড়তে থাকে।
অন্যান্য দেশগুলির উপরে আজকাল আমেরিকার মুদ্রানীতির একটি সরাসরি প্রভাব দেখা যায়। মন্দা হোক বা মুদ্রাস্ফীতি, ফেডারেল রিজার্ভ-এর ১৮ জন গর্ভনর মিলে যদি সিদ্ধান্ত নেন যে মুদ্রানীতি পরিবর্তন করা দরকার বা সুদের হার বাড়াতে হবে, তার সঙ্গে কিছুটা তাল মিলিয়ে বাকি দেশগুলিকেও তাদের সুদের হার সুসংগতভাবে বজায় রাখতে হয়। বিগত এক বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আশ্চর্যজনক দ্রুত হারে সুদের হার বাড়িয়েছে, যা বিগত ৪০ বছরেও কখনও করতে হয়নি। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশগুলিতেও দেখা যায় ২০২২-এর হারবৃদ্ধির পর বেশ কিছু মাস মুদ্রানীতি অপরিবর্তিত রেখেও আবার সুদের হার বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
অতএব, যদিও আমরা মনে করছি ভারতে যা সুদের হারবৃদ্ধির প্রয়োজন ছিল, তা ইতিমধ্যেই করা হয়ে গিয়েছে-একশো শতাংশ নিশ্চিতভাবে বলার সময় হয়তো এখনও আসেনি। আবার, বিগত বেশ কিছু বছরের মধ্যে এখনই সুদের হার সর্বোচ্চ বলে দেখা গেলেও, অদূর ভবিষ্যতে রিজার্ভ ব্যাংক সুদের হার কমাবে কি না বা ঋণের মাসিক কিস্তিতে কোনও সুরাহা হবে কি না-এই জাতীয় যে কৌতূহল তৈরি হয়েছে, তার সপক্ষে কোনও উত্তর খুব তাড়াতাড়ি হয়তো পাওয়া যাবে না। বরং ফেডারেল রিজার্ভ তাদের মুদ্রানীতি ঘোষণায় যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তাতে বলা যায় সাধারণ ঋণজীবী মানুষকে এখন ভবিষ্যতের সব ধরনের সম্ভাবনার জন্যই আর্থিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.