পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, বাড়ির নিরাপত্তাও অত্যন্ত জরুরি বিষয়। অথচ এই নিয়ে চর্চা বিশেষ হয় না। হোম ইনসিওরেন্স করতে গেলে কী কী বিষয়ে নজর দিতে হবে, কোন কোন নিয়ম মেনে চলতে হবে, এবার সেই তথ্যভাণ্ডারের সন্ধান দিলেন অনিমেষ সেন
আমি অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম, সাধারণ মানুষ কেন হোম ইনসিওরেন্স কিনতে তেমন উৎসাহ দেখান না? জীবন বিমায় এবং অবশ্যই কোভিডের জমানায় স্বাস্থ্য বিমায়, যত তাঁদের আগ্রহ, অন্য কিছুতে তেমনই নিস্পৃহতা। অথচ হোম ইনসিওরেন্স খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়, আজকের পৃথিবীতে তাকে বর্জন করা ঠিক নয়। অবশ্য ‘বর্জন’ শব্দটি ব্যবহার করে ঠিক করলাম কি না জানি না, তবে এ কথা সত্য যে এই ধরনের বিমা নিয়ে সাধারণ মানুষের খুব একটা কিছু জানা নেই। তাই এটির সম্ভাবনা নিয়েই এবার লিখছি।
এদেশে এবং অন্যত্রও বাড়ি তৈরি বা বাড়ি কেনা একটি প্রধান এবং অবশ্য-কর্তব্য গণ্য করা হয়। নিজের ‘মাথা গোঁজার জায়গা’ নিয়ে গর্বিতই হই আমরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে হোম ইনসিওরেন্স খুব জরুরি। এত বড় ইনভেস্টমেন্টের সিদ্ধান্ত, কিন্তু বিমা নিয়ে অনাগ্রহ-দুটো কি মেলানো সম্ভব? প্রতিটি বাসস্থান, বলাই বাহুল্য, কিন্তু বিপদের উৎস হতে পারে। তার সুরক্ষা ও সেই সংক্রান্ত দায়-দায়িত্ব কিন্তু সংশ্লিষ্ট গৃহবাসীর। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো হতেই পারে, তার সঙ্গে বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র রক্ষা করা-সব মিলিয়ে বেশ বড় দায়িত্ব, নয় কি?
‘লো কস্ট’, অর্থাৎ অল্প প্রিমিয়ামের পলিসি তো প্রাথমিকভাবে কেনাই উচিত বলে আমি মনে করি। আগুন লাগতেই পারে, চোর এসে বহুমূল্য বস্তুসকল নিয়ে যেতেই পারে, প্রপার্টি ইনসিওরেন্স থাকলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক সুবিধা পাবেন। জানিয়ে রাখি, যৎসামান্য বেশি প্রিমিয়াম দিলে কিছু ‘ভ্যালু অ্যাডিশন’ পাওয়া সম্ভব হয়। যেমন ধরুন, পার্সোনাল অ্যাক্সিডেন্টকে ‘অ্যাড-অন’ হিসাবে ধরতে পারেন। আপনি এবং আপনার ‘স্পাউস’ দু’জনেই এই সংক্রান্ত কভারেজ পেতে পারবেন।
এছাড়াও বলা দরকার যে গৃহের মালিক, তাঁর নিজের প্রয়োজন বুঝে, একাধিক সুযোগ পেতে পারেন যদি তিনি সঠিক বিমা পলিসি বেছে নেন। যেমন উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কেবল ‘হোম কনটেন্টস’ বিমার আওতায় আনতে পারবেন। সেক্ষেত্রে হয়তো ‘হোম বিল্ডিং’ রাখলেন না। উল্লেখ্য, হোম কনটেন্টস-এর ক্ষেত্রে আপনার আসবাবপত্র বা অ্যাপ্লায়েন্সেস শুধুমাত্র সুরক্ষিত হবে, পুরো বাড়ির বেস, দেওয়াল বা ছাদ-এর অন্তর্গত হবে না। অবশ্য কোনও ব্যক্তি একইসঙ্গে পুরো বাড়ি এবং আনুসঙ্গিক সমস্ত কিছু কভার করিয়ে রাখতেই পারেন।
পক্ষপাত নেই, শুধু দৃষ্টান্ত হিসাবে আইসিআইসিআই ভারত গৃহরক্ষা পলিসির কথা বলে রাখি। এই প্রপার্টি ইনসিওরেন্স কী সুবিধা দেয় অর্থাৎ কী কভার করে, জেনে নিন।
-আগুন, বিস্ফোরণ, বিদু্যৎ
– দাঙ্গা, দুষ্কৃতী দ্বারা ক্ষতি
– ঝড়, বন্যা
– ‘এক্সটার্নাল অবজেক্ট’ দ্বারা ক্ষতি-যেমন গাছ পড়ে যাওয়ায় ভাঙচুর
– জলের ট্যাঙ্ক বা পাইপ ফেটে ক্ষতি
– চুরি
জেনে রাখুন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই শর্ত থাকে নানা রকম। এবং অবশ্যই কিছু নির্দিষ্ট করা ‘এক্সক্লুশন’ আছে। যুদ্ধ বা বিদেশি শত্রু দ্বারা গঠিত কোনও ক্ষতিকারক কাজকর্ম এই ধরনের পলিসির আওতায় নেই। অথবা কোনও রেডিওঅ্যাক্টিভ বস্তুর সংস্পর্শে এলে যা ক্ষতি হয়, তারও সুরাহা হবে না। গৃহস্থকে তাই সমস্ত কিছু জেনেই পলিসি কিনতে হবে। ক্লেম হলে, ইনসিওরেন্স কোম্পানি ঠিকভাবে সার্ভ করবে। তার ফল নিয়মমাফিক হলেই সেই ক্লেম গণ্য করা হবে। আজকের বিশ্বে এর দাম কম নয় বলেই মনে করি, তাই আমি চাই যে হোম ইনসিওরেন্সের ব্যবহার আগামিদিনে আরও বাড়ুক।
(লেখক বিমা পরামর্শদাতা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.