ছবি: প্রতীকী
মার্কেটে বিনিয়োগ যিনি করেননি, তাঁর কাছ থেকে ইনভেস্টমেন্ট সংক্রান্ত পরামর্শ নেওয়া বৃথা। তাই যদি শেয়ার মার্কেটে লগ্নি করতে উৎসাহ জাগে, উপযুক্ত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনও পেশাদারেরই দ্বারস্থ হন। আগে থেকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাবেন না। পুরনো ধ্যানধারণা বিসর্জন দিয়ে এগোন আত্মবিশ্বাস আর যথাযথ জ্ঞানের সঙ্গে। জানালেন অরিত্র নাগ
প্রথমেই জানিয়ে রাখি, আমি নিজেও একজন বিনিয়োগকারী। তাই পাঠকদের বলব, এই লেখাকে পেশাদার কারও পরামর্শ না ভেবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হিসাবেই গ্রহণ করবেন।
বিখ্যাত মার্কিন বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট একবার বলেছিলেন, “if you don’t find a way to make money while you sleep, you will work until you die.” এই কথাটি আমাদের প্রজন্মের যাঁরা চাকরি করেছেন, তাঁদের জন্য খুবই প্রযোজ্য। কারণ আমাদের কোনও পেনশন নেই আর অনেকেই যাঁরা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেন, তাঁরা ৬০ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার আগে পর্যন্ত কাজ করতে পারবেন না বিভিন্ন প্রযুক্তিগত এবং আর্থ-সামাজিক কারণে। এই সময় যদি জমানো টাকা প্ল্যান করে বিনিয়োগ না করা হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে ভবিষ্যতে আর্থিক অনিশ্চয়তা অপেক্ষা করছে। যে কোনও বিনিয়োগের প্রাথমিক লক্ষ্য হল, ইনফ্লেশন তথা মুদ্রাস্ফীতির হাত থেকে আপনার টাকাকে রক্ষা করা। এবং একইসঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে আরও বৃদ্ধি করা। একটি উদাহরণের সাহাযে্য খুব সহজভাবে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবটা বোঝানোর চেষ্টা করছি।
এই মুহূর্তে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ৫-৬ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করছে আর এফডি-তে টাকা রাখলে ব্যাংক আমাদের বার্ষিক ৭-৮ শতাংশ সুদ দেয়।। তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে? আমাদের জমানো টাকা একেবারে অতি স্বল্প হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতি বছর।
তাহলে কি সব টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ বেশি করা উচিত লাভের জন্য? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে আমি পাঠকদের সত্যজিৎ রায়ের ‘পরশ পাথর’ (১৯৫৮) ছবির শেষের দিকের একটি দৃশ্যের কথা মনে করিয়ে দিতে চাইব। সেখানে দেখানো হয়েছিল, শেয়ার মার্কেট ক্র্যাশ করেছে। সকলে পাগলের মতো ছোটাছুটি করছে আর এক ভদ্রলোক মাথায় ডাবের জল ঢালছেন! না, আমি শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করা থেকে কাউকে ভয় দেখিয়ে নিরুৎসাহিত করতে চাইছি না। দুঃখজনকভাবে আজও মধ্যবিত্ত বাঙালির মধ্যে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ শেয়ার মার্কেটে টাকা বিনিয়োগ করতে ভয় পান। বাস্তবে কিন্তু সিনেমার মতো কিছু হয় না। আপনি সরাসরি শেয়ারে বিনিয়োগ করে যদি ঝুঁকি নিতে না চান, তাহলে আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী কিছু ভাল মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন।
মিউচুয়াল ফান্ডে অনেক কম রিস্কে আপনাকে লং টার্মে খুব ভাল রিটার্ন দিতে পারে। আজ একজন বিনিয়োগকারীর কাছে অনেক রকম বিকল্প আছে। কম ঝুঁকি, কম রিটার্ন থেকে বেশি ঝুঁকি বেশি রিটার্ন, এফডি থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সি। একটি ব্যালান্সড পোর্টফোলিও একজন বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে এবং তার সাথে কিছু উচ্চ হারে রিটার্নও দিতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে ৩০ শতাংশ ফান্ডস এফডি-তে রাখি আর্থিক নিরাপত্তার জন্য, ৫০ শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডে আর বাকি ২০ শতাংশ সরাসরি আমি শেয়ারে বিনিয়োগ করি। এইভাবে আমি আমার আর্থিক লক্ষ্য আর ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাকে বিচার করে একটি পোর্টফোলিও তৈরি করেছি।
ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ছাড়া আর একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইনসিওরেন্স। প্রধানত দুই প্রকার ইনসিওরেন্সের কথা আমরা শুনে থাকি। তার মধে্য এক হল জীবন বিমা, অন্যটি স্বাস্থ্য বিমা। একটি ভাল মেডিক্যাল ইনসিওরেন্স প্রত্যেকের দরকার কারণ আমরা সকলেই জানি আজকের দিনে চিকিৎসা খরচ কতটা ব্যয়বহুল। আপনার মধ্যবিত্ত থেকে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে নেমে আসবার জন্য একটি গুরুতর অসুস্থতাই যথেষ্ট। জীবন বিমা আমার মনে হয় না, সকলের দরকার আছে যদি না আপনার অসময়ে চলে যাওয়ার কোনও আশঙ্কা থাকে!
সব সময় নিজের ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং করার জন্য পেশাদার সাহায্য নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। একজন ভাল বিনিয়োগ পরামর্শদাতার সঙ্গে আলোচনা করে নিজের বিনিয়োগ পোর্টফোলিও তৈরি করুন। ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনা প্রস্তুত করে রাখার কোনও বিকল্প নেই।
(লেখক বিনিয়োগকারী, উপযুক্ত অ্যালোকেশন ও ডাইভারসিফিকেশনে বিশ্বাসী)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.