স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজনীয়তা এখন আর নতুন করে বোঝানোর অবকাশ নেই। সাধারণ গ্রাহক আজ জানেন, পারিবারিক বাজেটের একটি অংশ অতি অবশ্যই স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়ামের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে নতুন কোন কোন বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, তা অনেকেরই জানা নেই। সেই হদিশই এই লেখায় দিলেন অনিমেষ সেন
হেলথ ইনসিওরেন্স সম্পর্কে মানুষ আজ অনেক বেশি মাত্রায় সচেতন। অতিমারী এবং অন্যান্য ঘটনাবলী মারাত্মক রকম শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে আমাদের। স্বাস্থ্য বিমার ক্ষেত্রটির বিস্তার নিয়ে আজ আর কোনও সন্দেহ নেই, আগামিদিনে যে নানাবিধ নতুন প্রোডাক্ট এখানে ভিড় করে আসবে তা নিয়ে এখনই বাজি ধরা যায়। সাধারণ গ্রাহক বুঝতে পেরেছেন যে ফ্যামিলি বাজেটের একটি অংশ অবশ্যই বিমার প্রিমিয়ামের জন্য বরাদ্দ করতে হবে। সেই খাতে বরাদ্দ ভবিষ্যতে বাড়বে, সাধারণভাবে এ কথাও আমি বলতে পারি। প্রিমিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অবশ্য মানুষের পকেটেও চাপও বাড়ে, এবং যদি গ্রাহক বয়স্ক নাগরিক হন, যদি তাঁর আয় সীমিত হয়, তাহলে সেই চাপ সহ্য করা কঠিন।
এবার আসি আসল কথায়–প্রোডাক্টের বৈচিত্র্য পরিষ্কারভাবে বাড়ছে, বেশ কয়েকটি নতুন তথা ‘ইনোভেটিভ’ পলিসি আজ তাদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। বিস্তৃত বলার আগে মনে করিয়ে দিই যে বৈচিত্র্য বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হসপিটালাইজেশনের খরচও ঊর্ধ্বমুখী। সব মিলিয়ে ‘ইনোভেটিভ’ পলিসি দিয়েই, ভ্যালু অ্যাডেড প্ল্যানের মাধ্যমেই, গ্রাহককে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করতে হবে, লড়াই করতে হবে।
ইদানিংকালে কোন নতুন বৈশিষ্ট্যের উপর জোর দেওয়া দরকার? উত্তরে বলি কয়েকটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা বৈশিষ্ট্যের কথা।
#আনলিমিটেড আংশিক বা পুরোদস্তুর (পার্শিয়াল অথবা ফুল) রেস্টোরেশন, সঙ্গে ১০০ শতাংশ নো ক্লেম বোনাস।
#নন মেডিক্যাল কনজিউমেবল পণ্যের খরচ ফেরত (শর্তাধীন, নির্দিষ্টভাবে বলা থাকে)।
#সিনিয়র সিটিজেনের জন্য প্রি-মেডিক্যাল টেস্ট মকুব।
এ সমস্ত পাওয়া আজকাল অসম্ভব নয়, তবে গ্রাহককে অবশ্য পলিসির সমস্ত ‘ফাইন প্রিন্ট’ পড়ে নিতে হবে। তাহলেই কোন পলিসির কী কী বৈশিষ্ট্য, বা কী দেওয়া সম্ভব নয়–তা ভাল করে বোঝা যাবে। যেমন ধরুন বাবা-মা (বা শ্বশুর-শাশুড়ি)-র ক্ষেত্রে কি আপনার পলিসি কভারেজ গ্রাহ্য করা হবে? বা পরিবারের অন্য কোনও সদস্যের ক্ষেত্রে? এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া একান্ত জরুরি বলে মনে করি।
এরই সঙ্গে অন্যান্য খুঁটিনাটিও জেনে নিতে হবে। যেমন, প্রেগন্যান্সিও কি কভারেজের আওতায় আসবে? বুঝতেই পারছেন, এসব ক্ষেত্রে আন্ডাররাইটারের গাইডলাইন অনুযায়ী সব কিছু মেনে চলা হয়। গ্রাহকদের তাই যথাযথভাবে কভারেজের শর্তগুলো জানা কর্তব্য। স্বাস্থ্যবিমার প্রসারিত ক্ষেত্র থেকে একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। কোনও বিশেষ সংস্থার নাম করব না, তবে ধরে নিন এমন একটি মেডিক্যাল ইনসিওরেন্স কোম্পানির কথা, যেখানে গ্রাহক নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের কথা ভেবে বিমা প্রোডাক্ট বেছে নিয়েছেন। আগেই বলেছি শ্বশুর-শাশুড়িদের কথা, যাঁরা সিনিয়র সিটিজেন। এঁরা কভারেজ পেতে পারেন প্রি-ইনসিওরেন্স ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া। রিনিউয়ালের সুবিধাও থাকবে। গ্রাহকের ভাই-বোনও এর আওতায় আসতে পারেন। নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হাসপাতালে তাঁরা ‘আউট-পেশেন্ট’ হিসাবে মেডিক্যাল কনসালটেশনের সুযোগ পেতে পারবেন। বিশদ জানতে হলে নানাবিধ স্বাস্থ্য বিমা সংস্থায় খোঁজ নিন।
ইদানিং একাধিক কোম্পানির সমগোত্রীয় প্রোডাক্টগুলো পাশাপাশি রেখে তুলনার চল বেড়েছে। আমি তা অবশ্যই সমর্থন করি। সঙ্গে এও বলি, তুলনা টানার সময় সুযোগ-সুবিধাই কেবলমাত্র দেখবেন না। কী পাওয়া যাবে না, কোন কোন কড়া শর্ত পূরণ করতেই হবে, এই সবও ভালভাবে বুঝুন। না হলে আপনার নির্বাচন ভুল হবে। সেই ভুলের বোঝা বহন করতে হবে আপনাকেই, তাই প্রথমেই পড়াশোনা করে নেবেন, অথবা পেশাদার পরামর্শদাতাকে জিজ্ঞাসা করে নেবেন।
(লেখক বিমা পরামর্শদাতা)
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.