বাজারে বর্তমানে উৎসাহ চড়ছে ‘কনসেন্ট্রেটেড’ পোর্টফোলিও নিয়ে। ফোকাসড ইকুইটি ফান্ডেও তেমনই দেখা যাচ্ছে। এমন ফান্ডে ঝুঁকি রয়েছে ঠিকই, তবে একই সঙ্গে রয়েছে ভাল রিটার্নের হদিশও। পেশাদার পরামর্শ নিয়ে, বাজারের মতি বুঝে এগোলে আখেরে লাভবান হতে পারেন আপনিও। জানাল টিম সঞ্চয়
স্বল্প সংখ্যক স্টক, অর্থাৎ ‘কনসেন্ট্রেটেড’ পোর্টফোলিও নিয়ে ফোকাসড ইকুইটি ফান্ডের প্রাসঙ্গিকতা বাড়ছে। নতুনভাবে এগুলির বিষয়ে জানতে চাইছেন ইনভেস্টররা। এই শ্রেণির ফান্ডে, যেখানে সাধারণভাবে হোল্ডিংয়ের সংখ্যা সীমিত রাখা হয়, লগ্নি করতে চাইছেন তাঁদের একাংশ, রিস্কের মাত্রা বেশি থাকবে জেনেও। উদ্দেশ্য, বেশি রিটার্ন হাতে পাওয়া। এই নিয়েই আজ আমাদের আলোচনা, বাছাই করা উদাহরণ-সহ।
ফোকাসড ফান্ডে সংশ্লিষ্ট ফান্ড ম্যানেজার কৌশলগত কারণেই স্টকের সংখ্যা নির্দিষ্ট সীমার ভিতর (হয়তো তিরিশটি, যেমন কয়েক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে) রাখেন। ‘ক্যাপিটাল অ্যাপ্রিসিয়েশন’ এই ফান্ডের লক্ষ্য–কোনও মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের কড়া বিধিনিষেধ মেনে চলা হয় না। তার মানে, মার্কেট ক্যাপ এখানে কোনও প্রয়োজনীয় মাপকাঠি নয়। বরং, ‘কনসেন্ট্রেটেড’ পোর্টফোলিও চালু রেখেও ডাইভারসিফিকেশন এনে দেওয়ার চেষ্টা করেন ফান্ড ম্যানেজার। দীর্ঘমেয়াদি গ্রোথ এখানে প্রধান বিবেচ্য। অবশ্য কোনও ধরনের গ্যারান্টিড রিটার্নেরও প্রশ্নই ওঠে না।
উদাহরণ হিসাবে Tata Focused Equity Fund-এর নাম করছি, বিনা পক্ষপাতে। স্টকের সংখ্যা কেবল ৩০টি হতে পারে। লং টার্মের জন্য যাঁরা ধরে রাখতে ইচ্ছুক, তাঁদের মোট অ্যালোকেশনের মধ্যে এমন ধরনের ফান্ড থাকলে ভাল হবে বলে অনেকের বিশ্বাস। সাম্প্রতিক সময়ে ফান্ড ম্যানেজার লগ্নি করেছেন প্রায় ১৫টি সেক্টরে। ট্রেন্ড বুঝে বিনিয়োগ করা হয়েছে ব্যাংকিং, ক্যাপিটাল গুডস, ইনফর্মেশন টেকনোলজি, এনার্জি এবং কনজিউমার সেন্টরে। গত কয়েক মাসের ফ্যাক্টশিট দেখলে বোঝা যাবে যে লগ্নির তালিকায় উপরের ভাগে অাছে ICICI Bank, State Bank of India, Reliance Industries, L&T, Bharti Airtel, Infosys এবং Bharat Forge-এর মতো স্টক।
কতখানি সফল হবে এই জাতীয় ফোকাসড ফান্ড? রিটার্ন কি আশানুরূপ হতে পারবে?
এই সব প্রশ্নের উত্তরে ‘রিস্ক’-এর উল্লেখ করা দরকার। যেহেতু স্টকের সংখ্যা (সর্বোচ্চ) কেবল ৩০টি, সেহেতু ঝুঁকি অনেকটাই বেশি। অন্য শ্রেণির অ্যাক্টিভ ইকুইটি ফান্ডে সাধারণত ৬০-৬৫টি স্টক থাকতে পারে, এখানে সেই সুযোগ নেই। তবে সিলেকশনে বৈচিত্র আনার চেষ্টা করেন ফান্ড ম্যানেজাররা। লার্জক্যাপ মিউক্যাপ (কিছুটা হয়তো মিডক্যাপের তালিকায় শেষের দিকের স্টকে) শেয়ারই থাকে, স্মলক্যাপের ঝুঁকি নিতে চান না বেশির ভাগ পেশাদারই। ফোকাসড ইকুইটি ফান্ডে সাধারণত এক শতাংশ এগজিট লোড থাকে। মানে এক বছরের আগে ‘রিডিম’ করলে এই লোড দিতে হয়। টাটা-র এই বিশেষ ফান্ডে তার কোনও ব্যতিক্রম নেই। বলে রাখা ভাল যে, বেঞ্চমার্ক ইনডেক্স এই ক্ষেত্রে Nifty 500। গত তিন বছরে প্রায় ১৫ শতাংশ রিটার্ন দিতে পেরেছেন টাটার ফান্ড ম্যানেজার।
ফোকাসড ফান্ডের পরিচ্ছন্ন উদাহরণ Mirae Asset-এর নির্দিষ্ট প্রোডাক্ট। এখানেও ৩০টির স্টকের উপর যাবেন না ফান্ড ম্যানেজার। তিনি পরিষ্কার বলছেন, তাঁর কৌশল হল ‘মাল্টি-ক্যাপ’ গোত্রের-কোনও বিশেষ মার্কেট ক্যাপের বিধি তিনি মানেন না। তাঁর উদ্দেশ্য-নানা সেক্টরে অ্যালোকেশন ছড়িয়ে দিয়ে বড় মাপের রিটার্ন আনা। সাম্প্রতিক পোর্টফোলিও দেখলে বোঝা যাবে তাঁর লক্ষ্যগুলির মধ্যে আছে ব্যাংক, সফটওয়্যার, পেট্রোলিয়াম প্রোডাক্টস, কনজিউমার এবং টেলিকম সার্ভিসেস।
এই প্রসঙ্গে কিছু জরুরি বক্তব্য :
# ৩-৫ বছরের জন্য (অন্ততপক্ষে) ধরে রাখতে বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
# কোনও রকম গ্যারান্টি নেই, তা যেন ভালভাবে জেনে রাখেন ইনভেস্টর।
# মোট হোল্ডিংয়ের ১০-১৫% পর্যন্ত এমন ফান্ডে বিনিয়োগ করা যেতে পারে, যদি রিস্ক প্রোফাইলের পরিপ্রেক্ষিতে তা সঠিক হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.