একটা সময় ছিল, যখন সাধারণ মানুষ স্টক সম্বন্ধে বিশেষ ওয়াকিবহাল ছিলেন না। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ছবিটা বদলে গিয়েছে। আজ স্টক নিয়ে আগ্রহ বেড়েই চলেছে। সমাজের বড় একটা অংশের নিত্য আনাগোনা স্টক মার্কেটে। এই নিয়ে তিন কিস্তিতে বিশেষভাবে ‘সঞ্চয়’-এর জন্য কলম ধরেছেন রজত কুমার বোস। আজ প্রথম ভাগ।
আজ ‘সঞ্চয়’-এর জন্য কলম ধরেছি। আমার তিন কিস্তির লেখার গোড়ায় বলে রাখি যে, স্টক মার্কেটের সেই পুরনো ‘ফাটকা খেলা’-র ছবির হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা। এক সময় আমাদের মনে টাটকা গেঁথে ছিল যে চিন্তা, তার অনেকটাই ফিকে হয়েছে। ইদানিং অনেকেই খুব বুঝেশুনে লগ্নি করেন। অবশ্য সেই পুরনো দিন আর আজকের মধ্যে গঙ্গা দিয়ে প্রচুর জল বয়ে গিয়েছে। কত কিছু দেখে নিয়েছি- ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন, আটের দশকের উচ্চ হারে পাওয়া সুদ, UTI-এর মান্থলি ইনকাম স্কিম থেকে শুরু করে হালের ক্যাপিটাল মার্কেটের রিফর্ম। আগে যখন পাবলিক সেক্টর ব্যাংক ইত্যাদি থেকে বড় মাপের সুদ পাওয়া যেত, সাধারণ মানুষ তেমন ঘেঁষতেন না স্টক মার্কেটের দিকে। মনে আছে, প্রায় ২০% বার্ষিক সুদ পাওয়া সম্ভব ছিল, এক শ্রেণির কর্পোরেট সংস্থার দাক্ষিণ্যে। তারপর অবশ্য মার্কিন মুলুকে সুদের হার কমে এল, সেখানে মধ্যবিত্ত মানুষ দেখলেন ‘রিস্ক’ না নিলেই নয়। শুরু হল স্টক মার্কেটে যাতায়াত, বড় রিটার্নের আশা নিয়ে। সাধারণ মানুষ দেখলেন তাঁদের রিটায়ারমেন্ট কর্পাস বাড়ছে না মনের মতো। কারণ তথাকথিত ‘সেফ’ অ্যাসেট আর সন্তুষ্ট করতে পারছে না তাঁদের।
উচ্চ ইল্ডের খোঁজে ইনভেস্টররা চলে এলেন মার্কেটে। হালে দেখলাম, আমেরিকার ইন্টারেস্ট রেট প্রায় শূন্যের কাছে। আর বিশ্বের কয়েকটি বিশেষ পকেটে তা সাব-জিরো, মানে শূন্যেরও নিচে চলে গিয়েছিল। অতএব স্টক মার্কেটে পদার্পণ বেশ স্বাভাবিক ঘটনা।
এবার আসি অন্য একটি দিকের আলোচনায়। দেখুন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মুদ্রাস্ফীতির ধারণাটিকে বদ্ধমূল করে তুলতে হবে সবাইকে। ধরা যাক, আপনি ব্যাংকের ডিপোজটর হিসাবে ৭% সুদ পাচ্ছেন। কিন্তু আপনি বেশ জানেন যে (রিজার্ভ ব্যাংকের ঘোষণা যে রিটেল ইনফ্লেশন ৬% বা তারও কম) সাধারণভাবে জিনিসের দাম প্রায় ১০% বেড়েছে তো বটেই। এখানে আপনার Personal Consumption Inflation Rate-এর কথা বলছি। ব্যাংক নিয়ন্ত্রক যাই বলুক না কেন, এই নিজের জগতটুকুর মধ্যে যা ঘটছে, তাই তো আপনার জন্য রূঢ় বাস্তব, তাই না?
মোদ্দা কথায়, আপনার টাকা যেভাবে বাড়ছে, তা মুদ্রাস্ফীতির হারকে ছাপিয়ে যেতে পারছে না ধারাবাহিকভাবে। তাই এবার আপনাকে খুঁজে নিতে হবে অন্য উপায়। কী সেই উপায়? সোজাসাপ্টা ভাষায়, সেই অ্যাসেট যেখানে মুদ্রাস্ফীতির হারকে ছাপিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। হ্যাঁ, কেবল সম্ভাবনার কথা বলছি, নিশ্চয়তা তো লগ্নির দুনিয়ায় খুব কমই। বিকল্প বা ‘অল্টারনেটিভ’ লগ্নি আপনার পক্ষে মিউচুয়াল ফান্ড হতে পারে, তবে তা আমি আলোচনার পরিসর থেকে বাইরে রাখতে চাই। আমার বক্তব্য কেবল স্টক মার্কেট সংক্রান্ত।
কয়েকটি বিশেষ দিক উল্লেখ করছি, যাতে সংক্ষেপে কিন্তু জোরালোভাবে বলা যায় জরুরি কিছু কথা।
#স্টকে বিনিয়োগ করুন কেবলমাত্র লং টার্মের জন্য।
#ন্যূনতম ৫ বছরের কথা ভাবুন, বাড়িয়ে তা ১০ বছর করলে আরও ভাল হবে-যদি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিটির আর্থিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে।
#‘ভাল কোম্পানি’ খুঁজে নিন। হ্যাঁ, আমি বিলক্ষণ জানি ‘ভাল কোম্পানি’ কথাটির মর্মার্থ অনেক কিছুতে বোঝা যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে পরে আসব।
কীভাবে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী তেমন কোম্পানি নির্বাচন করবেন? অর্থাৎ স্টক সিলেকশন করা হবে কীসের ভিত্তিতে? এই অমোঘ প্রশ্নের উত্তর, বুঝতেই পারছেন, এত সহজে দেওয়া সম্ভব নয়, সেই চেষ্টা এই কলামে করছিও না।
আজ এখানেই দাঁড়ি টানব। আপনার কৌতুহল জাগ্রত করতে পেরেছি আশা করি। পরের বারের জন্য তোলা থাকল দরকারি অনেক কথা।
(ক্রমশ…)
লেখক একজন সেবি রেজিস্টার্ড রিসার্চ অ্যানালিস্ট। SEBI Registration No INH300003074। এই সিরিজে উল্লেখিত স্টকগুলি উদাহরণ মাত্র, কোনও মতেই রেকমেন্ডেশন নয়। পরিসংখ্যানের সূত্র: tijorifinance.com।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.