ফাইল ছবি
নয়া ফিনান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্ট প্রোডাক্ট এনেছে সেবি। এই স্পেশালাইজড ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে লগ্নিমহলে। কী কী এই নতুন অ্যাসেট ক্লাসের বৈশিষ্ট্য, বিনিয়োগের আগে জেনে নিন বিশেষজ্ঞের মুখ থেকে। লিখছেন ইএসজি সার্টিফায়েড কর্পোরেট গর্ভন্যান্স প্রোফেশনাল অরূপ দাশগুপ্ত।
সেবির তরফে নতুন ফিনান্সিয়াল ইনভেস্টমেন্ট পণ্য: স্পেশালাইজড ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড। মিউচুয়াল ফান্ড পরিকাঠামোর আওতায় নতুন একটি অ্যাসেট ক্লাস আত্মপ্রকাশ করল সেবি তথা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বোর্ড অফ ইন্ডিয়ার হাত ধরে। এই ধারণার কথা সবার প্রথমে উল্লেখ করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। পার্লামেন্টে বাজেট পেশের সময় রিটেল ইনভেস্টরদের জন্য এই বিষয়টি জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর লক্ষ্য ছিল, সেই সমস্ত ইনভেস্টর, যাঁরা পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস (পিএমএস উইথ মিনিমাম ইনভেস্টমেন্ট অ্যামাউন্ট অফ ৫০ লক্ষ টাকা) এবং অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডের (এআইএফ উইথ মিনিমাম ইনভেস্টমেন্ট অ্যামাউন্ট অফ ১ কোটি টাকা) সুবিধা নিতে পারেন না। একইসঙ্গে অর্থমন্ত্রী চেয়েছিলেন, সাধারণ লগ্নিকারীদের ‘ফিউচার’ এবং ‘অপশনস’-এর হাতছানি থেকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে আনা, কারণ এই জটিল ‘ফিনান্সিয়াল ডেরিভেটিভ প্রোডাক্টস’গুলোর উপর তাঁদের নির্ভরশীলতা, তাঁদেরই কষ্টার্জিত অর্থের অপচয় ঘটায় শুধুমাত্র যথাযথ জ্ঞানের অভাবে। নতুন এই ফিনান্সিয়াল অ্যাসেট ক্লাসে মিনিমাম ইনভেস্টমেন্ট তথা সর্বনিম্ন লগ্নিকৃত অর্থের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা।
নতুন এই অ্যাসেট ক্লাস (স্পেশালাইজড ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড তথা এসআইএফ) লগ্নিকারীদের সেই সমস্ত অবৈধ এবং অনথিবদ্ধ, প্রতারণামূলক স্কিমের ফাঁদে পড়া থেকে লগ্নিকারীদের বাঁচাবে, যারা উচ্চ রিটার্নের প্রলোভন দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছে টানে। এই অ্যাসেট ক্লাসটির বৈশিষ্ট্যগুলো হল–
১) লেভারেজে লিমিট, ‘ফিউচার’ এবং ‘অপশনস’-এর একটি বৈশিষ্ট্য
২) ডেরিভেটিভ এক্সপোজার ক্যাপড অ্যাট ২৫%
৩) রেস্ট্রিকশন অন ইনভেস্টমেন্ট ইন আনলিস্টেড সিকিউরিটিজ
লগ্নিকারীরা নজরদারি সংস্থা সেবি এবং অ্যামফি-র পর্যবেক্ষণের নিরাপত্তা বেষ্ঠনীর আওতায় থাকবেন। ফিনান্সিয়াল যে পণ্য নিয়ে তাঁরা কাজ করবেন, তা হবে বৈধ এবং পেশাদার দ্বারা পরিচালিত। ফলে বাজার অনিশ্চয়তায় ঝুঁকির মাত্রা হবে কম।
এই ধরনের পণ্যের চাহিদা দীর্ঘদিন ধরে ছিল, বিশেষ করে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্ত শ্রেণির লগ্নিকারীদের মধ্যে, যাঁরা একইসঙ্গে ডিজিটাল ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে দিব্য পরিচিত এবং তাঁদের যথেষ্ট ফিনান্সিয়াল লিটারেসি অর্থাৎ আর্থিক স্বাক্ষরতাজ্ঞান রয়েছে। এতদিন ধরে বাজারে পোর্টফোলিও ডাইভারসিফাই করার সুবিধা করায়ত্ত করতে প্রাধান্য পেতেন কেবলমাত্র হাই নেটওয়ার্থ-যুক্ত মানুষজন। কিন্তু এসআইএফ রিটেল ইনভেস্টরদের জন্য এই ছবিটা বদলাবে। ফান্ড ম্যানেজারই বাজারের হাল জরিপ করে জানাবেন, নতুন আসা প্ল্যান সম্পর্কে বা কীভাবে আরও বেশি গ্রাহক-বান্ধব হওয়া যায়, তা সম্পর্কে।
নতুন অ্যাসেট ক্লাসটি লগ্নির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী এবং গতিশীলতা আনবে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যের
মাধ্য্যমে –
১) রেগুলেটেড ফ্রেমওয়ার্কে ডাইভার্স স্ট্র্যাটেজি।
২) এনকারেজমেন্ট অফ প্রোডাক্ট ইনোভেশন বাই ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন।
৩) স্ট্রেন্থেনিং অফ ফিনান্সিয়াল লিটারেসি টু এনসিওর রেসপন্সিবল ইনভেস্টিং থ্রু ইনফর্মড ডিসিশনস
মিউচুয়াল ফান্ড এবং এসআইএফ–দুয়েরই জন্য স্পষ্ট এবং পৃথক কৌশল অনুসরণ করা হবে। ফান্ড হাউসকে এসআইএফ লঞ্চ করতে আলাদা ওয়েবসাইট আনতে হবে।
এসআইএফ-এর অন্যান্য মূল বৈশিষ্ট্যগুলো হল–
১) এসআইএফ-এর টিইআর (টোটাল এক্সপেন্স রেশিও) মিউচুয়াল ফান্ডের মতো থাকবে।
২) ড্রাফ্ট অফার ডকুমেন্ট জমা দিয়ে সেবির তরফ থেকে এসআইএফ লঞ্চ করতে অনুমোদন পেতে হবে ফান্ড হাউসকে।
৩) এসআইএফ-এর জন্য ক্লোজড এন্ডেড, ওপেন এন্ডেড এবং ইন্টারমিডিয়েট হাইব্রিড প্ল্যান বাজারে আনতে হবে ফান্ড হাউসকে।
৪) মানি মার্কেট এবং নন-মানি মার্কেটে ডেট সিকিউরিটিসে এসআইএফ ২০ শতাংশ পর্যন্ত লগ্নি করতে পারবে, যার রেটিংস ইনভেস্টমেন্ট গ্রেডের নিচে নয়।
৫) পেড আপ ক্যাপিটাল অনুযায়ী যে কোনও সংস্থার ভোটিং রাইটসের ১৫ শতাংশ পর্যন্ত থাকবে এসআইএফ-এর।
৬) ইকু্যইটিতে সিঙ্গল ইস্যুয়ার লিমিট-এ ন্যাভ-এর ১০ শতাংশ পর্যন্ত থাকছে সেবির নিয়ম অনুযায়ী।
৭) রিয়েল এস্টেট এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট থ্রু ট্রাস্টসের ক্ষেত্রে ন্যাভ-এ ২০ শতাংশ পর্যন্ত লগ্নি করতে পারবে এসআইএফ। সিঙ্গল ইস্যু লিমিট এই সমস্ত ইনস্ট্রুমেন্টসে থাকবে ন্যাভের ১০ শতাংশ।
৮) লগ্নিকারীদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব থাকবে ট্রাস্টিসদের উপর।
এইভাবে অভিনবত্ব এবং স্বচ্ছতা বজায় রেখে সেবি বাজার অর্থনীতিকে আরও গতিশীল, স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং পরিণত ফিনান্সিয়াল ইকোসিস্টেমের রূপ দেওয়ার দিকে এগিয়েছে। তবে আন্তজার্তিক বাজারের দিকে চোখ রাখলে দেখা যাবে, এই ধরনের পণ্য লগ্নিকারীদের উচ্চ রিটার্ন দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে। কারণ দুটি। ম্যানেজমেন্ট কস্ট এবং প্রথাগত বেঞ্চমার্ক ছাপিয়ে, আরও ভালো ফল করার প্রত্যাশা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.